চৌগাছা সংবাদদাতা
যশোরের চৌগাছায় শতাধিক শিশু শিক্ষার্থীকে ঈদের নতুন পোশাক প্রদান করেছে স্বপ্নদুয়ার-১৭ নামে শিক্ষার্থীদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
রোববার যশোরের চৌগাছা উপজেলার বড়খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই নতুন পোষাক ‘ঈদ উপহার’ বিতরণে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান করে তারা। এতে ১০০ শিশু শিক্ষার্থীকে নতুন পোষাক দেয়া হয়।
নতুন পোষাক পাওয়া একজন আলিফ। যশারের চৌগাছার বড়খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। জন্মের সময় সুস্থ স্বাভাবিক ছেলেটি স্কুলে যাওয়ার বয়স হলে বাড়ির পাশের স্কুলে ভর্তি হয়। কোন একসময় ওর বাম পায়ের হাটুতে একটি টিউমার হয়। ভ্যানচালক পিতার অভাবের সংসারে বিনা চিকিৎসায় সেটি মারাত্মক রুপ ধারণ করে। পরে স্থানীদের সহায়তায় ঢাকায় নেয়া হলে চিকিৎসকের পরামর্শে পায়ে’র হাটু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়। বিগত দু’বছর ধরে ক্রাচে ভর দিয়ে একপায়ে স্কুলে যায় সে। অভাবের সংসারে বাবা ময়না কোন ঈদেই ছেলেকে পছন্দের নতুন পোষাক দিতে পারেন না।
আরেকজন স্বপ্না। মা-মরা এতিম মেয়েটি একই উপজেলার কিসমতখানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বাবা থেকেও নেই। ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করেন। নতুন সংসারও পেতেছেন। স্বপ্না দাদীর সাথে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে থাকে। ২৭ রমজন পর্যন্ত প্রতিটি রোজা’ই রেখেছে সে। ঠিকমত তিনবেলা খাবারই জোটে না, ঈদের নতুন পোষাক কিনবে কিভাবে? ঈদের নতুন পোষাক পেয়ে স্বপ্না, আলিফরা উচ্ছসিত। খুশিতে আপ্লুত তাদের স্বজনরাও।
স্বপ্নদুয়ার-১৭ চৌগাছার শিক্ষার্থীদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এসএসসি ২০১৭ ব্যাচের এসব শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ণরত। করোনাকালীণ সময়ে নিজেদের সারা বছরে ঈদের জন্য জমানো টাকা দিয়ে অসহায় পরিবারের শিশু শিক্ষার্থীদের ঈদে নতুন পোষাক দেয়া শুরু করে সংগঠনটির সদস্যরা। তার ধারাবাহিকতায় ২৭ রমজান যশোরের চৌগাছা উপজেলার বড়খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই নতুন পোষাক ‘ঈদ উপহার’ বিতরণে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান করে তারা। এতে বড়খানপুর ও কিসমত খানপুর গ্রামের ১০১ শিশু শিক্ষার্থীকে নতুন পোশাক দেয়া হয়।
স্বপ্নদুয়ার-১৭ এর সভাপতি শিক্ষার্থী জাবির আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আশীব ফেরদৌসের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন সোনালী ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তা ও সংগঠনটির উপদেষ্টা মনিরুজ্জামান লাজন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে সংগঠনটির সহ-সভাপতি আল শাহরিয়ার আহমেদ ও কামরুজ্জামান, সদস্য আবীর ফেরদৌস, তানভীর হাসান নয়ন, গোলাম শাহরিয়ার জিহাদ, চয়ন কুমার দে, সোয়াইব আক্তার পিয়াস, সজীব রহমান, মঈন বিল্লাহ ইথুন, নাহিদ হোসেন, প্রমিজ খান, আবীর রহমান, রাখী আজমীর, রজনী আক্তার প্রিয়া, ইসমাইল হোসেন অপু, আবির রহমান শান্ত, সুমীর হুসাইন, রিয়াদ হোসেন, শাহরিয়ার নাফিজ, প্রাচ্য মল্লিক রাজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস শিক্ষার্থী ও লেখক আশীব ফেরদৌস বলেন, রোজায় আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি হলে সংগঠনের সদস্যরা উপজেলার একটি অথবা দুটি গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকা করি। পরে একসাথে করে শিক্ষার্থীদের ঈদের নতুন পোষাক প্রদান করা হয়। আমাদের সংগঠনে সনাতন ধর্মের এবং নারী সদ্যরাও রয়েছে। এবারও বড়খানপুর এবং কিসমতখানপুর গ্রামে গিয়ে একইভাবে তালিকা করে আজ নতুন পোষাক প্রদান করা হয়েছে।
সভাপতি জাবির আহমেদ বলেন, আমরা এবার নিয়ে ৪র্থ বারের মতো শিশু শিক্ষার্থীদের ঈদের নতুন পোষাক দিয়েছি। আমাদের সদস্যদের জমানো এবং কিছু শুভাকাঙ্খীদের দেয়া অর্থে এবছর ১০৫ থেকে ১০৬ জন শিক্ষার্থীকে নতুন পোষাক দিয়েছি। আগামীতেও আমাদের এই ঈদ উপহার দেয়া অব্যহত থাকবে।