প্রতীক চৌধুরী
বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবৈধ দখলে চলে গেছে হাজারো বিঘা সরকারি জমি। বছরের পর বছর অবৈধ ভোগদখল করায় রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এমন জমি চিহ্নিত করে উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বেদখল সরকারি জমি উদ্ধার তৎপরতা বেড়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নেতৃত্বে বেদখল সরকারি জমি উদ্ধার অভিযান চলছে। প্রায় ছয় মাসে জেলায় অন্তত ১৭৮ একর বেদখল সরকারি জমি উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধারকৃত জমি জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আইনের আওতায় সংরক্ষণ, ইকোপার্ক স্থাপন ও ইজারা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জানা যায়, সর্বশেষ ২০ জানুয়ারি যশোরের চৌগাছায় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা ও তার সহযোগীদের অবৈধ দখলে থাকা ১৪ একর সরকারি জমি উদ্ধার করে উপজেলা প্রশাসন। চৌগাছা মৌজার আরএস খতিয়ান-১ এর ২৭টি আলাদা দাগের ১৪ দশমিক ১০০ একর জমি জলমহাল হিসেবে ছিল। এই জলমহাল দীর্ঘদিন ধরে সাবেক কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে জোরপূর্বক দখলে রেখে মাছ চাষ হত। জলমহালের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ধানি জমি হিসেবে নিজেদের নামে রেকর্ড করে নেন। এর আগে গত ২০ নভেম্বর চৌগাছা উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর মৌজার চার একর সরকারি খাস জমি উদ্ধার করে প্রশাসন। এই জমি ৩০ বছর ধরে অবৈধভাবে দখলে রেখেছিলেন চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হাবিবুর রহমান।
এদিকে, গত ২০ নভেম্বর যশোরের শার্শার সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের মালিকানাধীন আফিল ব্রিডার ফার্ম লিমিটেডের দখলে থাকা ৪২ একর সরকারি জমি উদ্ধার করে উপজেলা প্রশাসন। উদ্ধারের পর এসব জমি বাঁশের খুঁটি ও লাল পতাকা দিয়ে সীমানা চিহ্নিত করে দেয়া হয়। গত ১২ ডিসেম্বর বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন ও বাহাদুরপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মফিজুর রহমানের দখলে থাকা হরিণাপোতা বিলের প্রায় একশ’ একর খাস জমি উদ্ধার করে উপজেলা প্রশাসন।
শুধু আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দিন, সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটন কিংবা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম হাবিবুর রহমান নয়, তাদের মত আওয়ামী লীগের সাবেক জনপ্রতিনিধি, দাপটশালী নেতা ও প্রভাবশালীদের দখলে থাকা সরকারি জমি উদ্ধারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের আগস্ট মাস থেকে চলতি জানুয়ারি মাস পর্যন্ত (৬ মাস) যশোর জেলায় ১৭৮ দশমিক ৬৬ একর সরকারি জমি উদ্ধার করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩৭ কোটি ৪৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা। উদ্ধারকৃত জমির অধিকাংশই আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের অবৈধ দখলে ছিল। তাদের কেউ কেউ জালিয়াতির মাধ্যমে জমি নিজেদের নামে রেকর্ড করে নিয়েছিলেন। দাবি উঠেছে, প্রত্যেক মৌজাওয়ারি অবৈধ দখলে থাকা সরকারি জমি উদ্ধার করে জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনা ও ভূমি আইনে যথাযথ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হোক।
এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুজন সরকার বলেন, ৫ আগস্টের পর বেদখল সরকারি জমি উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার হয়েছে। প্রতিমাসেই জমি উদ্ধার হচ্ছে। উদ্ধারকৃত জমি আইনের আলোকে জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শার্শা ও কেশবপুরে দুটি ইকোপার্ক স্থাপনের প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া জলমহাল প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব অনুমোদন হলে আইনানুযায়ী ইজারা দেয়া হবে।’