সৈয়দ রুবেল, নড়াইল
নড়াইলের মাঠগুলোতে যেদিকে চোখ যায় হলুদের সমারোহ। শীতের হিমেল হওয়ায় মাঠে দোল খাচ্ছে সরিষা গাছ। বেশিরভাগ বিলে ‘রিলে’ বা ‘সাথী’ পদ্ধতির ফলে দুই ফসলি জমি এখন তিন ফসলিতে রূপান্তর হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নড়াইল জেলায়ও এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ বেড়েছে। ‘রিলে’ পদ্ধতিতে মূলত আমন ধানের সঙ্গে উন্নত জাতের সরিষা চাষাবাদ করা হয়।
‘রিলে’ বা ‘সাথী’ পদ্ধতি অনেকের কাছে শুনতে নতুন মনে হলেও দিন দিন জনপ্রিয়তা বাড়ছে পদ্ধতিটির। কম খরচে ভালো উৎপাদন হওয়ায় কৃষকেরা এ পদ্ধতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। গত বছরের তুলনায় রিলে পদ্ধতিতে এবার দ্বিগুণ সরিষা চাষাবাদ হয়েছে। তাই ভালো ফলনেরও স্বপ্ন বুনছেন কৃষক।
নড়াইল সদরের তুলারামপুর ইউনিয়নের গাবতলার বিভিন্ন বিল, শাহাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলে, মিঠাপুর, নলদি, ইতনা, পৌরসভার কাড়ারবিল, বাঁশগ্রাম বিল, আউড়িয়ার বিল, চৌগাছা, নলারবিলসহ বড় বড় মাঠগুলোতে ব্যাপক সরিষা চাষের ফলে হলুদে হলুদে ছেয়ে গেছে প্রতিটা বিল। আর এ অপরূপ দৃশ্য উপভোগের পাশাপাশি কিশোর-তরুণরা এসব হলুদের সমারোহস্থলে ভিড় করছেন ছবি তুলতে।
গাবতলা গ্রামের আরব আলী বলেন, আমরা আমন ধান কাটার ১৫দিন আগেই সরিষার বিজ বুনি। তবে এই পদ্ধতিতে বিজ বুনতে দেখে অনেকের সন্দেহ ছিল, সরিষা হবে কিনা, এ কাজে আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রিপন বিশ্বাস সহযোগিতা করেন। এখন ভালো সরিষা দেখে মন ভরে যায়। রিলে পদ্ধতিতে সরিষার ভালো ফলন দেখে এলাকার অনেকে এই চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।
একই গ্রামের কৃষক ইবাদ মেম্বার জানান, তারা আমন ধান কাটার আগেই ৩ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার বীজ বপণ করেন। সরিষা ঘরে তোলার পরই এ জমিতে বোরো ধান আবাদ করবেন। রিলে পদ্ধতির ফলে জমিতে এখন তিন ফসলের চাষাবাদ করা যাচ্ছে। সেচ ও সারের ব্যবহার না থাকায় তারা আগামিতে রিলে পদ্ধতিতে সরিষার চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন।
কৃষক জাবের মিয়া জানান, ৩৬ শতক জমিতে সরিষার চাষ করেছি। তবে গত ৭ ডিসেম্বরের বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে এখন অবস্থা বেশ ভালো। আশা করছি ভালো ফলন পাবো। সরিষার দাম বেশ ভালো। প্রতিমণ চার হাজার টাকা। সরিষা উঠে গেলে ধান চাষ করব।
এ ব্যাপারে নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, ‘ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্প’র আওতায় রিলে পদ্ধতিতে উন্নত জাতের বারি সরিষা-১৪ চাষাবাদ নড়াইলে বেশ সাড়া ফেলেছে। এতে করে একই জমিতে রোপা আমন ধানের পাশাপাশি সরিষা চাষ হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমন ধান কাটার আগ মুহূর্তে নাড়া বা বিছালীর মধ্যেই উন্নত জাতের সরিষা বিজ ছিটিয়ে দেয়া হয়। ধান কাটা শেষ হলে সরিষা গাছ বড় হয়ে যায়। এতে নতুন করে জমি চাষাবাদ প্রয়োজন হয় না, ফলে রিলে পদ্ধতির সরিষা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, এ মওসুমে নড়াইল জেলায় ১২ হাজার ৮৮৮ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে রিলে পদ্ধতিতে সরিষা চাষাবাদ হয়েছে। গত বছর এ পদ্ধতিতে আবাদ হয়েছিল দেড় হাজার হেক্টরে। রিলে এবং সাধারণ পদ্ধতি মিলে গত বছরের তুলনায় এ মওসুমে মোট আবাদ বেড়েছে ৩ হাজার ৬৭৩ হেক্টর জমিতে।
তিনি বলেন, আবহাওয়া অনুককূলে থাকলে সরিষার ফলন ভালো হবে বলে আশা করছেন সবাই। আগামী তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে সরিষা ঘরে তোলা সম্পন্ন হবে।
শিরোনাম:
- একই সঙ্গে দুই কলেজের অধ্যক্ষ জাহিদুলের নজিরবিহীন দুর্নীতি
- অভয়নগরকে হারিয়ে ফাইনালে কালীগঞ্জ
- অফিস সহকারী পদে হেলালের এমপিওভুক্তি নিয়ে লুকোচুরি
- শিক্ষার মান উন্নয়নে ভালো শিক্ষক দরকার
- উপশহর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষা সফর অনুষ্ঠিত
- ‘বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গড়তে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে’
- যশোরে নতুন আঙ্গিকে ব্রাদার্স ফার্নিচার শো রুম উদ্বোধন
- আলুর দাম লাগামহীন ভোক্তার নাভিশ্বাস