বাংলার ভোর প্রতিবেদক
নারী নির্যাতন বন্ধে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন যশোরের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে পুরুষদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সদাচরণ, নৈতিক মূল্যবোধ, দায়িত্বশীল আচরণ এবং নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ধারনের মাধ্যমে পুরুষরা সমাজের বিদ্যমান দৃশ্যপট পাল্টে দিতে পারে। আজ রোববার বিকেলে যশোর শহরের মুজিব সড়কে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
“নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হই, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করি’ স্লোগানে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে দক্ষিণবঙ্গে বঞ্চিত নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ‘জয়তী সোসাইটি’। বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্লেকার্ড নিয়ে আধাকিলোমিটার সড়ক ধরে এই মানববন্ধনে অংশ নেন যশোর শহরের প্রায় ৪ হাজার বিভিন্ন বয়সী নারী।
মানববন্ধনে যশোর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অনিতা মল্লিক বলেন, ‘সমাজে আদিকাল থেকে নির্যাতিত হয়ে আসছে নারীরা। এই নির্যাতিত হওয়ার একটাই কারণ পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব। সমাজে নানা পরিবর্তন হয়েছে; কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন হয়নি। সমাজে বহু নারী রয়েছে; তারা সমাজের অনুপ্রেরণা; পুরুষেরও অনুপ্রেরণা। এই সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন জরুরি। তিনি নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।’
সমাজের অবহেলিত নারীদের নিয়ে কাজ করা আরেক সংগঠন বাঁচতে শেখা’র নির্বাহী পরিচালক আঞ্জেলা গোমেজ বলেন, ‘নারী নির্যাতন নয়, নারীদের প্রাপ্য সম্মান নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি। নতুন বাংলাদেশে নারীরা মানুষ হিসেবে নতুনভাবে বাঁচতে পারবে এটাই প্রত্যাশা।’
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাইবার সহিংসতা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার, হুমকি ও নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে চলেছে। নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা ও প্রযুক্তিনির্ভর সমাজে ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিবার, সমাজ ও তরুণদের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সাইবার সহিংসতা নারীর অগ্রযাত্রার পথে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাই পরিবারে সমতা শিক্ষা, মানবিক মূল্যবোধ এবং নারী নির্যাতনবিরোধী কর্মকাণ্ডে এক হয়ে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন প্রয়োজন। নারীরা আজ যে অবস্থানে পৌঁচ্ছেছে, সেখানে পৌঁছাতে বহু বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। নারীরা শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিকসহ নানা নির্যাতনের শিকার হন। নারীর প্রতি নির্যাতন ও বৈষম্য দূরীকরণে ধর্মীয় নেতাসহ সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান বক্তারা।
জয়তী সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক অর্চনা বিশ্বাসের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিণ, দৈনিক বাংলার ভোরের প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ আবুল কালাম শামছুদ্দীন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হারুন অর রশিদ, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাহমুদ হাসান বুলু, জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দিপঙ্কর দাস রতন, বিবর্তন যশোরের সাবেক সভাপতি সানোয়ার আলম খান দুলু, যশোরের এনজিও সমন্বয়ক শাহজান নান্নু প্রমুখ।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জয়তী সোসাইটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার রোকনুজ্জামান, অর্থ ব্যবস্থাপক অসীম কুমার বিশ্বাস, ব্যবসাকেন্দ্রের ম্যানেজার হাজেরা খাতুন, ইউনিট ম্যানেজার নূরজাহান আক্তার, সিরিয়া সুলতানা রিনা, বর্ণালী সরকার, শাহানাজ পারভীন রুপা, হালিমা খাতুন, শাহিনা আক্তার সিমা, বিধান রায়, মিজানুর রহমান, আসলাম আলী, আসাদুল ইসলাম, ডালিয়া আফরিন, উর্মি আক্তার।
উল্লেখ্য, আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে চলবে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ।

