বাংলার ভোর প্রতিবেদক
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। বুধবার সকাল ৬টায় এই জেলায় ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সকাল থেকেই ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে কনকনে শীত অনুভূত হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝলমলে রোদে গা তাপিয়ে নেয়ার সুযোগ মিললেও গোটা জনপদে শীত অনুভূত হচ্ছে। রোদের মাঝেও সোয়েটার-জ্যাকেট পরে চলাচল করতে হচ্ছে জেলাজুড়েই। গত কয়েকদিন ধরেই মৃদ শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছে যশোর বিমান বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন আবহাওয়া অফিস।
চলতি পৌষের শেষ দিক থেকেই যশোরে বেড়েছে কুয়াশা ও শীতের দাপট। গত পহেলা জানুয়ারি থেকে বিকাল থেকে বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা। রাত ও সকালে বেড়ে যায় কুয়াশার দাপট। একই সাথে বইতে থাকে হিমেল বাতাস। যার ফলে গেল কয়েক দিন থেকেই শীতে কাবু হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ। কত কয়েক দিনে তাপমাত্রার পারদ কমতে কমতে বুধবার দাঁড়ায় দেশের সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রিতে। যদিও এর আগে চলতি মৌসুমে গত ৫ জানুয়ারি ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে দাঁড়িয়েছিলো। বুধবার সকাল থেকেই সূর্যের আলো ফোটার সাথে সাথে লোকজনকে কর্মব্যস্ত হতে দেখা যায়। রাস্তাঘাটে মানুষের সরব উপস্থিতি চোখে পড়ে। রোদের মাঝেও সোয়েটার-জ্যাকেট পনে চলাচল করতে দেখা যায় মানুষকে। রৌদ্রজ্জ্বল জায়গায় অনেককেই দেখা গেছে রোদে আড্ডা দিতে।
যশোর শহরের জিলা স্কুল মোড়ে নুরনাহার নামে নামে এক পথচারী বলেন, ‘কয়েক দিন থেকে ঠাণ্ডায় তো জমে গেছি। সকাল ৯টায় সূর্য ওঠায় ভালোই লাগছে। কাজকর্ম করতে স্বস্তি লাগছে। সার্কিট হাউজের সামনে তৈয়ব হোসেন নামে এক রিকসাচালক বলেন, ‘সকাল থেকেই খুব শীত। রোদ উঠেছে; চারিদিকে ফকফকা (পরিস্কার) তার পরেও শীত কমছে না। রিকসা চালাচ্ছি; তারপরেও সোয়েটার-জ্যাকেট পরে আছি।’ আরেক রিকসা চালক জানান, ‘সকাল থেকে লোকজনের চলাচল কম থাকলেও রোদ উঠাতে শহরে মানুষের চলাচল বেড়েছে।’ শহরের রায়পাড়া এলাকার রিকসা চালক জিহাদ আলী জানান, শীতের সাথে বাতাসে হাড় কেপে যাচ্ছে। গরমের সময় রিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে সকাল ৬টায় বের হলেও এখন শীতের মধ্যে বের হতে বেলা ১০টা থেকে ১১টা বেজে যাচ্ছে। তারপরও বাতাসে দাঁতে বাড়ি লাগছে। ভাড়াও কম হচ্ছে। এতে রোজগার কমে গেছে।’
এদিকে শীর্তে বেড়েছে শীত জনিত রোগীর সংখ্যা। যশোর জেনারেল হাসপাতাল ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে দেখা যাচ্ছে শীতজনিত রোগে বৃদ্ধা ও শিশুদের চিকিৎনা নিতে। যশোর জেনারেল হাসপাতাল ও শহরের নিউমার্কেটস্থ শিশু হাসপাতালে শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগে চিকিৎসা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্ঠরা।
জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার বজলুর রশিদ বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বহির্বিভাগে বয়স্ক ও শিশুদের চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। একই সাথে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘শীত বাড়ছে, বয়স্ক ও শিশুদের আলাদা যত্ন নিতে হবে। গরম পানিতে গোসল করাতে হবে। শীত নিরারণে গরম পোশাক পরিধান ও সন্ধ্যার পরে দ্রুত ঘরে প্রবেশ করে নিরাপদ স্থানে থাকতে হবে।’
এদিকে, মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে যশোরে গরম কাপড়ের কদর বেড়েছে। ভিড় বেড়েছে কালেক্টরেট মসজিদ মার্কেটে। যেটি যশোরে ‘গরিবের মার্কেটে’ হিসাবেই পরিচিত। দেদারসে বিক্রি হচ্ছে সোয়েটার, জ্যাকেট, ট্রাউজার, হুডি ও কম্বল। প্রতিদিন তাপমাত্রা কমলেও সে অনুযায়ী দরিদ্র পরিবারের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়নি। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এমন বিরূপ আবহাওয়া আরও কয়েকদিন চলতে পারে।
এদিকে, শীত ও ঠান্ডা বাতাসের কারণে প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাড়ির বাইরে আসেননি। শহরের সড়কে আজ তুলনামূলক যানবাহনও কম দেখা গেছে। বৃহস্পতিবারও যশোরে তাপমাত্রা কম থাকবে এবং শীতের মাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে যশোর মতিউর রহমান বিমানঘাঁটি আবহাওয়া দপ্তর।