বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের ঝিকরগাছায় পিয়াল হাসান নামে এক যুবদল কর্মীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম মনির (৩৭) ও একই এলাকার তুষার (৩১)। সোমবার সকালে বেনাপোল থেকে মনিরুল ও মোবারকপুর থেকে তুষারকে আটক করে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঝিকরগাছা থানার ওসি বাবলুর রহমান খান।
এর আগে শনিবার (৯ নভেম্বর) রাতে নিহত পিয়ালের বাবা কিতাব আলী বাদী হয়ে ঝিকরগাছা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ঝিকরগাছা পৌর ছাত্রদলের আহবায়ক শামীম রেজাসহ ১০ জনের নাম পরিচয় উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয়ের ৬-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও ফাঁসির মিছিল নিয়ে থানা ঘেরাও করে এলাকাবাসী।
এর আগে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে করা বিক্ষোভ মিছিলটি থানা মোড় হয়ে বাজার প্রদক্ষিণ করে। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নিহতের স্ত্রী নিশাত আক্তার উর্মি ও শ্যালক হাসিবুর রহমান রুহিত। উর্মি বলেন, আমার মতো কেউ যেনো বিধবা না হয়। আমার শিশু বাচ্চাটি সব সময় আব্বা বলে আকুতি জানাচ্ছে। যদি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও আসামিদের ফাঁসি হয় তাহলে আমাদের মতো কেউ আর স্বজন হারাবে না। পরে ওসি সকল আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এ বিষয়ে ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবলুর রহমান খান বলেন, পিয়াল হত্যা মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের খবর শুনে থানা এলাকায় এসে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। পরে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। তবে এজাহারভুক্ত বাকি আসামিদের নাম ও তথ্য চাইলে তিনি তদন্তের স্বার্থে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এজাহারভুক্ত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ঝিকরগাছা বাজারে আধিপত্যের বিস্তার নিয়ে পৌর ছাত্রদলের সভাপতি শামীম রেজার সঙ্গে যুবদলের কর্মী পিয়াল হাসানের বিরোধ হয়। সেই বিরোধের জেরে পিয়ালের নেতৃত্বে কয়েকজন শামীমের বাবা কামরুল ইসলামকে ছুরিকাঘাতে জখম করেন। ওই ঘটনায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় পিয়ালসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। দেড় মাস কারাভোগ করে গত ৮ নভেম্বর জামিনে মুক্ত হন তারা। পরদিন ৯ নভেম্বর পিয়াল রেল স্টেশন এলাকায় শামীমের কাছে গিয়ে ওই ঘটনার জন্যে মাফ চান। এ সময় শামীম তার সহযোগীদের মুঠোফোনে ডেকে পিয়ালকে ধাওয়া দিয়ে বোমা মেরে ও কুপিয়ে হত্যা করে।
নিহত পিয়ালের ভাই সুমন হাসান বলেন, ‘পারিবারিক বিরোধ থেকেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। শামীমের বাবা আহত হওয়ার ঘটনায় অনুতপ্ত হয়ে পিয়াল শনিবার দুপুরে শামীমের কাছে মাফ চাইতে যায়। কিন্তু শামীম মাফ না করে তার লোকজন ডেকে কুপিয়ে ও বোমা মেরে হত্যা করেছে। আমরা খুনিদের ফাঁসি চাই’। নিহত পিয়াল ঝিকরগাছা উপজেলার মোবারকপুর বিশ্বাসপাড়া এলাকার কিতাব আলীর ছেলে। তিনি ঝিকরগাছা বাজারে মুরগির ব্যবসা করতেন। তার চার বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির মধ্যে দুইটি পক্ষ রয়েছে। বর্তমান উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবিরা সুলতানা ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান সামাদ এক পক্ষের এবং মোর্তজা এলাহী অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পিয়াল হাসান ছিলেন বিএনপি নেতা ইমরান সামাদ ও অভিযুক্ত শামীম রেজা মোর্তজা এলাহীর অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। পিয়ালের পরিবার তাকে যুবদলকর্মী বলে দাবি করলেও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমরান সামাদ নিপুণ বলেন, ‘পিয়াল ছিল সন্ত্রাসী। সে একসময় যুবদল করত। তবে বিগত সরকারের শেষদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুসা মাহমুদের নেতৃত্বে চলাফেরা করত।
বিএনপি নেতা মোর্তজা এলাহী টিপু বলেন, ‘ঝিকরগাছা বিএনপিতে কোনো গ্রুপিং নেই। দলীয় কোনো বিরোধ নিয়েও হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। পিয়াল হত্যার পেছনের কারণ দুই পক্ষের পারিবারিক বিরোধ।’
এদিকে, হত্যাকাণ্ডে প্রাথমিকভাবে উপজেলা পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক শামীম রেজার সম্পৃক্ততার অভিযোগে শামীমকে বহিস্কার করেছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি। গত ৯ নভেম্বর রাতে সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।