স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
যশোর শহরের যানজট নিরসনে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ ফিরলেও ট্রাফিক আইন বা নির্দেশনা লংঘনের দায়ে গত দুই মাসে কোন মামলা গ্রহণ বা জরিমানা আদায় হয়নি। ফলে কার্যত ভেঙ্গে পড়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। এতে করে গত দুই মাসে সরকার প্রায় ৮০ লাখ টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
খোজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ট্রাফিক আইন বা নির্দেশনা ভঙ্গকারীদের যানবাহন আটক ও জরিমানা আদায়ে সরকারের সরাসরি কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। অথচ সরকারি সেই নির্দেশনা যশোর ট্রাফিক বিভাগ উদাসীন। যে কারনে শহরে নজিরবিহীন ও অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে স্বভাবিক নাগরিক জীবন।
যশোর ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গেল জুন মাসে শহরসহ জেলার ৮ উপজেলায় ট্রাফিক আইন অমান্য করার কারণে মোট ৯৭৭ টি মামলা হয়। এই মামলায় মোট ৩৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় হয়। জুলাই মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রকট আকার ধারণ করতে থাকাতে জেলায় মোট মামলার সংখ্যা কমে ৫৭১ এ দাঁড়ায়। এ মাসেও জরিমানা বাবদ আদায় হয় ২৪ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু গত আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে কোনো মামলা করতে না পারাতে একটি টাকাও জরিমানা আদায় করতে পারেনি যশোর ট্রাফিক পুলিশ।
গেল ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যূত্থানের পর পাঁচ দিন জেলার কোথাও ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি। সে সময় ছাত্র জনতা রাস্তায় নেমে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছে। পরবর্তীতে ছয় দিন পর ১২ আগস্ট জেলার ট্রাফিক পুলিশ কর্মস্থলে ফিরে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন শুরু করে। তবে নিজ দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার ভিতর দিয়ে যেতে হচ্ছে, ফলে কঠোর হস্তে আইনের প্রয়োগ করতে পারছেন না বলে তারা দাবি করেছেন।
গেল আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ট্রাফিক আইন না মানার কারণে একটি মামলাও করতে পারেনি যশোর ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত সার্জেন্ট ও টিএসআইরা। ফলে একটা বড় অংশের রাজস্ব সরকারি কোষাগারে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
যশোর ট্রাফিক অফিসের অধীনে ৮৩ জন স্টাফ কর্মরত আছেন। যার মধ্যে সড়কে ট্রাফিক আইন অমান্যকারিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন ১২ জন সার্জেন্ট ও ৭ জন টিএসআই। নিবন্ধনহীন গাড়ি, ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন চালক, হেলমেট ব্যবহার না করা, অতিরিক্ত যাত্রীবহন, অতিরিক্ত গতি, সিগনাল না মানাসহ বিভিন্ন অপরাধে আইনগত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা মোতাবেক গাড়ি ও চালকের নামে মামলা করা হয়। জরিমানা পরিশোধসহ বৈধ কাগজপত্র দাখিল করার মাধ্যমে আইনি জটিলতা মোকাবেলা করে চালক বা মালিক পক্ষ। অনেক ক্ষেত্রে মামলা দেয়া গাড়িগুলো জব্দ করে ট্রাফিক পুলিশ।
দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও চলমান রাজনৈতিক সংকটে পুলিশের উপর সাধারণ মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে যশোর ট্রাফিক পুলিশ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া আইন প্রয়োগ করতে পারছে না। শহরের একাধিক স্পটে পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ থাকার পরও আইনের প্রয়োগ না থাকাতে অবাধে চলাচল করছে অবৈধ মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকসা, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহন। যে কারণে শহরে নজিরবিহীন ও অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
সুত্র বলছে, যশোর পৌরসভার কমিউনিটি পুলিশিং সদস্যরা যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তা করছে। তবে এখন তা করছে সীমিত সংখ্যক কমিউনিটি পুলিশ সদস্য।
যশোর ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট নিশিকান্ত বিশ^াস বলেন, মামলা না থাকাতে শহরে প্রচুর অবৈধ রিকসা, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল বেড়েছে। অনেকেই ট্রাফিক আইন মেনে চলছেন। অনেকেই মানতে রাজি না। রাস্তায় দায়িত্ব পালন করাতে তাদেরকে এখন তেমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি পড়তে হচ্ছেনা।
যশোর ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান বলেন, ইতিপূর্বে প্রতি মাসে ট্রাফিক বিভাগ বিভিন্ন মামলার জরিমানা আদায় বাবদ গড়ে ৩৫ থেকে ৪৫ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে। উপর মহলের কোনো নির্দেশনা না থাকাতে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে এখন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। ফলে গত দুই মাসে কোনো মামলা হয়নি। যশোর ট্রাফিক পুলিশ শুধুমাত্র যানজট নিরসনে কাজ করছে। মামলা করার সুযোগ না থাকাতে বড় অংকের অর্থ আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।