সুমন ব্রহ্ম, ডুমুরিয়া থেকে
ডুমুরিয়ায় ইটের সোলিং দিয়ে চলছে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক মেরামতের কাজ। ইতোমধ্যে এটি নিয়ে মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে নানান কৌতুহল। কতৃপক্ষ বলছে যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সাময়িকভাবে এই পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে।
জানা যায়, খুলনার জিরো পয়েন্ট থেকে আঠারোমাইল বাজারের শেষ পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটারের মত রাস্তা পুনঃনির্মাণ কাজ ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে ২০২০ সালে এসে শেষ হয়। এই প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয়ে ১৬০ কোটি টাকা। ঠিকাদারী সংস্থা মোজাহার এন্টারপ্রাইজ কাজটি করে। নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও ত্রুটি পরিলক্ষিত হলেও তৎকালীন সময়ে ওই ঠিকাদারী সংস্থার বিপক্ষে কথা বলার মত সাহস কারও ছিলনা। কারণ হিসাবে জানা যায়, মোজাহার এন্টারপ্রাইজ মহাসড়কের নির্মাণ করলেও এর নেপথ্যে ছিল খুলনার প্রভাবশালী হর্তা কর্তারা। নির্মাণের দুই বছর যেতে না যেতেই মহাসড়কের জিরো পয়েন্ট থেকে চুকনগর ভিআইপি ফিলিং স্টেশন পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত করুণ হয়ে যায়। তারপর একাধিকবার বিভিন্ন স্থানে পাথরের খোয়া আর বিটুমিন দিয়ে ভাঙ্গাচোরা স্থানে জোড়াতালি দেয়া হয়। চলতি বছরের শুরু থেকেই মহাসড়কটির বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত হওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত ছোট বড় দুর্ঘটনা নিত্য নৈমত্তিক হয়ে ওঠে। গত ৫ মাসে এই মহাসড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন।
এমতাবস্থায় মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে মহাসড়কটির অধিক ক্ষতিগ্রস্থ স্থান, বিশেষ করে যেখানে বড় বড় গর্ত হয়ে যানবাহন চলাচলের একবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সেই সব স্থানে পিচের কার্পেটিং তুলে নতুন করে কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করে খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এতে কোন রকমে যানবাহন চলাচলের মত পরিস্থিতি তৈরি হয়। হঠাৎ করে গত ১ জুন কার্পেটিং করা বাদ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানে ডাবল ইটের সোলিং করা হচ্ছে।
এ অবস্থায় যানবাহন চালক, মোটর শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতুহল ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। চুকনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে ১ কিলোমিটার পূর্বে সরদার বাড়ি বটতলা নামক স্থানে সরেজমিনে এ প্রতিবেদকের কথা হয় কয়েকজন পথচারী, ট্রাক ও বাস চালক এবং মোটরসাইকেল চালকের সাথে। ট্রাক চালক আবুল হাশেম বলেন, এটা আমাদের সাথে ঠাট্টা করা ছাড়া আর কিছু না। ঝাড়া দুইছড়া বর্ষা হলে ইটের ফাঁকে পানি জমবে, তার উপর দিয়ে গাড়ি চললে একদিনেই এই ইট ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাবে তখন এমন অবস্থার সৃষ্টি হবে যাতে চলাচল করা একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়বে। মোটরসাইকেল চালক হাসানুজ্জামান বলেন, যা ছিল তাতে কোন রকমে ১০/১৫ কিলোমিটার গতিতে পার হতে পারতাম আর এখন যেটা হচ্ছে তা আমার কাছে হাস্যকর বলে মনে হচ্ছে। এতে ক্ষতি ছাড়া লাভ কিছইু হবেনা, আর হবে সরকারি টাকার অপচয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী তানিমুল হক বলেন, এখন জরুরি ভিত্তিতে ইটের সোলিং দেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে ইট উঠিয়ে আবারও ওইসব স্থানে কার্পেটিং করা হবে। তাছাড়া মহাসড়কের সাথে যেসব স্থানে বাজার আছে ওই সব জায়গায় পর্যায়ক্রমে আরসিসি ঢালাই দেয়া হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, মহাসড়কটির সম্পূর্ণটাই পুনঃনির্মাণের জন্যে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়ে আসতে কিছুদিন সময় লাগবে, যতদিন অনুমোদন না হয় ততদিন এ ধরনের সংস্কার কাজ করা ছাড়া কিছু করার নেই।
তবে সচেতন এলাকবাসীর অভিমত হল, জিরো পয়েন্ট থেকে আঠারোমাইল বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি চার লেন করা না হলে সমস্যার সমাধান হবেনা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর থেকে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। বিশেষ করে বেনাপোল ও ভোমরা স্থল বন্দর থেকে ছেড়ে আসা ১০ চাকা থেকে শুরু করে ২০ চাকা পর্যন্ত ভারি থেকে অতি ভারি ট্রাক বা ট্যাংকলরি যখন চলাচল করে তখন রাস্তা ডেবে যায়। সেই সাথে শ্যামনগর, সাতক্ষীরা ও পাইকগাছা থেকে প্রতিদিন অর্ধ সহস্রাধিক দূরপাল্লার বাস ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, বরিশাল, কুয়াকাটা, শরিয়তপুরসহ বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। এসব কারণে একদিকে মহাসড়কের ভারসাম্য নষ্ট হয় অন্যদিকে প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন দুর্ঘটনা ঘটে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অবিলম্বে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কি দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নিত করার কোন বিকল্প নেই।