এসএকে শামছুদ্দীন জ্যোতি
তরিকুল ইসলাম নামটি উচ্চারণের সাথে সাথে শ্রদ্ধা-ভক্তিতে মাথা নুয়ে আসে যশোর তথা দক্ষিণবঙ্গের আপামর সাধরণ গণমানুষের। দলমত ভেদাভেদ ভুলে তরিকুল ইসলামের বিষয়ে একাট্টা হন সকলেই। কারণ তিনি কখনও দলমত পার্থক্য করেননি। তাঁর কাছে যেই গেছেন খালি হাতে ফিরেছেন এমন নজিরও মেলেনা। প্রবাদপ্রতিম এই মানুষটির সাথে চাকরিসূত্রে দীর্ঘদিন একসাথে কাটানোর সুযোগ হওয়ায় আজকে তাঁর ইহজগত ত্যগের দিনটিতে অনেক স্মৃতি ভিড় করে আসছে মনে। কিন্তু সব কথা লেখার যেমন সুযোগ নেই তেমনি সব স্মৃতি সবার সাথে শেয়ারও করা যায়না।

প্রথম পরিচয় ও কর্মযোগ :
দিনটি ছিল ১৯৯৬ সালের ১ নভেম্বর। আমি তখন ডিগ্রি পাস করে আগের দিন ঢাকা থেকে যশোরে এসেছি। সকালে আব্বার মরহুম সৈয়দ নজমুল হোসেন বললেন তোন শওকত চাচা (ফকির শওকত তৎকালীন সম্পাদক লোকসমাজ) ডেকেছেন। লোকসমাজে লোক নেবে দেখ করতে পারিস কিনা। আমি সকালে ১১ টার দিকে শহরের হাজী মোহাম্মদ মহসীন সড়কের কাঠেরপুল এলাকার লোকসমাজ অফিসে গেলাম। সেখানে যারা ছিলেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আনোয়ারুল কবীর নান্টু, হাকিম মোহাম্মদ, সিদ্দিক হোসেন, আইয়ুব হোসেনসহ সংবাদপত্র জগতের সকলেরই আমি ভাইপো। তাদের সাথে ছোট বেলা থেকেই বাবার কর্মসূত্রে পরিচিত এবং স্নেহের। শওকত চাচা রুম থেকে বের হয়ে এসে বললেন ভাইপো কাজ করতে চায়। সবাই বললো ভাল ত করুক আমাদের সাথে। এরই কিছুক্ষণ পর আসলেন সেই প্রবাদপ্রতীম মানুষটি। ঢোকার মুখেই তার সামনে পড়ে গেলাম আমি। শওকত চাচা পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন ও আমাদের ভাইপো কাজ করতে চায়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন পারবা ত। আগে কাজ করেছ কোনদিন। আমি পারব বললাম। একই সাথে জি আগে দৈনিক ভোরের রানার (বর্তমানে ফরিদপুর থেকে প্রকাশ হয়) এবং দৈনিক দিনকালে আমিরুল ইসলাম কাগজী চাচার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছি জানালাম। তিনি বললেন তাহলে আরকি করো। শুরু হলো দৈনিক লোকসমাজে কর্মজীবন।

স্নেহ পরায়ণ তরিকুল ইসলাম :
সে বছরই দেশে প্রথম আমজনতার চাঁদ দেখা বাদেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের গভীর রাতের ঘোষণায় রোজার ঈদ উদযাপিত হয়। ত ঈদ উপলক্ষে পত্রিকার কম্পিউটার বিভাগের প্রধান দু’জন আনোয়ার (এখনো কর্মরত) এবং কুদ্দুস ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। তখন আমি এবং তপু কিছুটা কম্পিউটার জানার সুবাদে কম্পিউটার রুমে প্রবেশ করতে পারতাম। এর মধ্যে আনোয়ারের সাথে আমার সম্পর্ক একটু বেশি ঘনিষ্ঠ হওয়ায় পত্রিকার কাজের অনেক কিছু শিখেছিলাম। বলতে আপত্তি নেই ও-ই পত্রিকা জগতে কম্পিউটারে আমার গুরু। এর আগে যখন কম্পিউটার বিভাগের ওরা ছুটিতে যেতে চাইল তখন তরিকুল চাচা বললেন তাহলে কাগজ বের করবে কে। ও ত আর আমি পারিনা যে করে দেব। সে সময় আমার বন্ধু আমার গুরু আনোয়ার বেশ জোরের সাথেই বলল জ্যুতি আছে না ও পারবে। চাচা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন কি পারবা। আমি আবার জোর দিয়েই বললাম তপু আছে ও ঠিক হয়ে যাবে। আমাদেরকে সাহস যুগিয়ে মাহবুবুর রহমান খোকন (বড় খোকন) চাচা বললেন আচ্ছা ঠিক আছে আমরা আছি ত একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। একই সুরে কথা বললেন আমাদের বড় সুহৃদ আব্বাস চাচা (বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্বাস বিশ্বাস)। সে সময় বার্তা সম্পাদক আইয়ুব হোসেন চাচা বললেন ভাই ও হয়ে যাবে। তরিকুল চাচা বললেন তাহলে তাই করো। দু’দিন পর সেদিন কাজ করছি কম্পিউটার রুমে আমি একা। দুপুরের দিকে বাড়ি থেকে এসেই তরিকুল চাচা নিরবে কখন যেন রুমে ঢুকে আমার পিছনে দাঁড়িয়েছেন টের পাইনি। যখন একটা কম্পিউটার থেকে সরে আর একটাতে কাজ করতে গেছি তখন চোখে পড়লো চাচাকে। সালাম দিলাম। তিনি বললেন কিরে একা চারটা কম্পিউটার চালিয়ে কাজ করছিস নাকি ? আমি উত্তরে বললাম জি এক একটায় এক এক রকম কাজ ত। তা তোমার সহযোগী তপু কই। আমি বললাম একটু পরই চলে আসবে। উনি উত্তরে ‘ও’ বলে চলে গেলেন নিজের ঘরে। এরপর একটু পরপরই কাউকে না কাউকে ডেকে কম্পিউটার রুমে পাঠাচ্ছিলেন দেখ ত ও পারছে কি না। না পারলে কাউকে ম্যানেজ করার চেষ্টা কর। কি অসুবিধা হচ্ছে শোন। বিকেল হতে হতে বড় খোকন চাচা, আব্বাস চাচা, দেলোয়ার হোসেন খোকন চাচা (বর্তমান যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক) চলে আসলেন অফিসে।
এর মাঝে ইফতারের সময় হলে চাচা একটা ইফতার পার্টিতে যাবেন বলে ঘর থেকে বের হয়ে ঢুকলেন কম্পিউটার রুমে। জিজ্ঞেস করলেন কি সমস্যা নেই ত। আমি না বললাম এবং একই সাথে ইফতারে বাড়ি যাব বললাম। তিনি বললেন তুমি জাননা আজকে তোমার একা কাজ করতে হবে। ইফতারে বাড়ি যেতে হবে না। আমি বাইরে যাচ্ছি। দুলাল (চাচার গাড়ির ড্রাইভার) বাড়ি থেকে আমার জন্য ইফতার নিয়ে আসবে ওটা তুমি খেয়ে নিও। যদিও অফিসে ইফতারের ব্যবস্থা হয়। তারপরও একজন মালিক কতটা স্নেহপরায়ণ হলে সবচেয়ে ছোট কর্মচারিটিকে বলতে পারেন বাসার থেকে ইফতার আসবে ওটাই খেয়ে নিও। এটা শুধু তরিকুল ইসলামের পক্ষেই সম্ভব। কেননা তার কাছে কোন ভেদাভেদ কখনো ছিল না।

অভিভাবক তরিকুল ইসলাম :
একবার আমি বন্ধুদের সাথে সুন্দরবন যাবো ৩ দিনের প্রোগ্রামে। সব ঠিকঠাক কিন্তু অফিস থেকে ছুটি নেয়া হয়নি। যেদিন সন্ধ্যায় যাওয়ার কথা সেদিন সকালে গেলাম চাচার কাছে ছুটি চাইতে। কারণ আমার বিভাগে লোক কম থাকায় আমাকে সরাসরি মাহবুবুর রহমান খোকন (বড় খোকন চাচা) অথবা তরিকুল চাচার কাছ থেকেই ছুটি নিতে হতো। ত চাচার ঘরে যেয়ে সালাম দিয়ে তাঁকে বললাম চাচা ছুটি লাগবে। তিনি বললেন ছুটি কিভাবে দেব তোমার ওখানে ত আর কেউ নেই। আমি ত তোমার কাজ পারিনা। মন খারাপ করে চলে আসলাম। কিন্তু বন্ধুরা সবাই যাবে আর সবকিছু অ্যারেঞ্জ করেও আমি যেতে পারব না তা কি করে হয় ? তাই দুষ্টু বুদ্ধি নিয়ে সন্ধ্যায় আবার চাচার কাছে গেলাম এবং বললাম চাচা ঢাকায় যেতে হবে ফোন দিয়েছে ঢাকা থেকে। চাচা জিজ্ঞেস করলেন বিল দেবে। আমি বললাম জি। (তখন আমি ঢাকার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন নিয়ে আসতাম পত্রিকায়)। তাহলে আর কি যাও কিন্তু তোমার কাজ কে করবে ? আমি বললাম আপনি বলে দিলে সিদ্দিক চাচা (সিদ্দিক হোসেন) করে দেবে। চাচা বললেন ডাকো সিদ্দিককে। আমি সিদ্দিক চাচাকে ডেকে নিয়ে আসার পর তরিকুল চাচা বললেন ও সিদ্দিক শুনেছ জ্যোতির নাকি ঢাকায় যেতে হবে। বোঝই ত বিজ্ঞাপনের ব্যাপার তা তুমি একটু এই দুটো দিন সামলে দিও। সিদ্দিক চাচা বললেন আচ্ছা ভাই। আমি ত মনের আনন্দে ঘর থেকে বের হয়ে অফিসে আনোয়ারকে আর বার্তা সম্পাদক মিজান মাহমুদকে বলে বের হয়ে আসলাম। তখন বুঝিনি অভিভাবক কাকে বলে। আমি বের হওয়ার সাথে সাথে তরিকুল চাচা তার রুমে সেলিম ভাই (আশরাফুল আলম সেলিম) ও বাদল ভাই (মরহুম মিজানুর রহমান বাদল) ভাইকে ডেকে পাঠান তার রুমে। নির্দেশ দেন এই দেখত ত জ্যোতি কোথায় গেল? সকালে যেই ছুটি দিলাম না ওমনি সন্ধ্যায় বলে ঢাকায় যেতে হবে। ঢাকায় যাওয়ার নাম করে এদিক ওদিক গেলে দিবি পিটুনি। তারা দু’জন ঘর থেকে জি ভাই বলে হাসতে হাসতে বের হয়ে লেগে গেলেন আমার পেছনে স্পাই লাগাতে। তখন আমাদের অফিসে রাত্রীকালীন পিয়ন ছিল হামিদ আর নাইটসুপারভাইজারের কাজ করত লিটন। ওদের দুজনকে ডেকে সেলিম ভাই বাদল ভাই নির্দেশ দিয়ে দিলেন এই তোরা দেখিস ত জ্যোতি কোথায় যাচ্ছে। তারা যথারীতি নির্দেশ মেনে নিয়ে চলে আসে অফিস থেকে। রাতে আমি যখন গাড়িখানায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছি তখন হামিদ (যে অধিকাংশ দিন অফিস থেকে দেয়া আমার রাতের নাস্তা খেত) হয়তো সে কারণেই আমাকে বলে ভাই আপনি কোথায় যাচ্ছেন তা কিন্তু অফিসে সেলিম ভাই বাদল ভাইকে জানাতে হবে। এরপর লিটনের সাথে দেখা হলে সেও একই কথা বলে। আমি ওদেরকে বললাম তোরা শুধু বলবি ভাই ঈগল পরিবহণে গেছে। গাড়ি কোনদিকে গেছে তা বলার দরকার নেই। ওরা আমাকে কথা দিল ঠিক আছে। যদিও ওরা সেলিম ভাই বাদল ভাইয়ের চাপে আমার গাড়ি যে খুলনার দিকে গেছে তা বলে দিয়েছিল। তবে সেটি সেলিম ভাই বা বাদল ভাই তরিকুল চাচাকে জানাননি। কিন্তু আমি যেদিন ছুটি শেষ করে এসে অফিসে টাকা জমা দিই সেদিন সন্ধ্যায় তরিকুল চাচা আমাকে তার রুমে ডেকে জানতে চান টাকা দিয়েছি কিনা আমি হ্যা বলার পর তিনি বললেন কত টাকা। আমি বললাম ২০ হাজার। চাচা তখন বললেন তুমি ত বাবা ঢাকায় যাওনি তাহলে এত টাকা কোথায় পেলে ? আমি মিথ্যা উত্তর দেয়ার আগেই বড় খোকন চাচা বললেন হ্যা তোকে বলেছে ও ঢাকায় যায়নি। এই তুই যা ত ভাগ বলে আমাকে রুম থেকে বের করে দিলেন। বের বের হতে শুনলাম বড় খোকন চাচা তরিকুল চাচাকে বলছেন এই ছেলে মানুষ সবকিছু ধরতে হয়, গেছে একটু বন্ধুদের সাথে হয়তো ঘুরতে। উত্তরে তরিকুল চাচা বললেন বন্ধুদের সাথে গেলে কোন সমস্যা নেই কিন্তু যদি মেয়েদের সাথে যেয়ে থাকে তাহলে ত বিপদ, দেখ খোঁজ নে। দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে এ কথা শুনে গর্বে বুক ফুলে উঠলো। বুঝলাম অভিভাবক কাকে বলে।

কর্মীদের পিতা তরিকুল ইসলাম :
আমাদের অফিসের দুটি জানালা দিয়ে প্রায় সময়ই পাশের প্রতিবেশি দু’জন মেয়েকে দেখা যেত চোখ ঘুরালেই। এদের একজন বড় লোক ঘরের এবং অপরজন গরিব ঘরের। আমরা মনে করতাম বড়লোক ঘরের মেয়েটির সাথে আনোয়ারের হয়তো কোনভাবে সম্পর্ক হয়েছে। কিন্তু না। একপর্যায়ে জানা যায় আনোয়ারের সাথে গরীব ঘরের মেয়েটির সম্পর্ক হয়েছে এবং ওকে সে বিয়ে করতে চায়। তরিকুল চাচা তখন পূর্ণ মন্ত্রী। যেহেতু মন্ত্রীর প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে আবার ছেলের বাড়ি অনেক দূরে তাই মেয়েটির পরিবার ভাবে যদি উল্টা পাল্টা কিছু হয় তাহলে দায় নেবে কে। তরিকুল ইসলাম যদি বলে তাহলে বিয়ে হবে। এ ত বড় ফ্যাসাদ। তাহলে তরিকুল চাচাকে জানাবে কে। আনোয়ারের সে সাহস নেই। আমাকে বলে দুস্ত কি করা যায়। আমি মিজান মাহমুদ (বার্তা সম্পাদক) আনোয়ার মিলে আলোচনা করে ঠিক করি বাদল ভাইকে জানাতে হবে। সেই অনুযায়ী বাদল ভাই সেলিম ভাইকে জানানো হলে তারা বলেন বড় খোকন ভাইকে জানাতে হবে। তাকে জানানো হলে তিনি দেখছি বললেন। যাক একটা ফাঁড়া গেল। কিন্তু তরিকুল চাচার ব্যস্ততার মাঝে হয়েই ওঠে না। এরপর একদিন দুপুরে চাচাকে বিষয়টা জানানো হলে তিনি আনোয়ার ও মিজান মাহমুদকে ডেকে সব মন দিয়ে শুনলেন। আনোয়ারকে বললেন কিরে বিয়ে করে পালাবি না ত। বুঝিস আমি কিন্তু মন্ত্রী। মানসম্মান সব শেষ হয়ে যাবে কিন্তু। আনোয়ার ভয়ে ভয়ে জোর দিয়ে হ্যা বলার পর তরিকুল চাচা আব্বাস চাচাকে দায়িত্ব দিলেন মেয়ের পরিবারের সাথে কথা বলে বিয়ের কথা পাকা করার। সেই অনুযায়ী বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়। যদিও এর মাঝে আরো কিছু ঝড় ঝাপটা ওঠে তাও চাচার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ঠিক হয়। সেই থেকে বিয়ে পর্যন্ত তাঁর শত ব্যস্ততার মাঝেও খোঁজ নিয়েছেন কিভাবে কি হচ্ছে। এবং বিয়ের দিন তিনি খুলনার বিএনপি নেতাদের বলেও দেন অমুক জায়গার আমার এক কর্মীর বিয়ে হচ্ছে খেয়াল রেখো। কেননা তাঁর কাছে কর্মীরা ছিলেন সন্তানতুল্য।

সহকর্মী তরিকুল ইসলাম :
সেদিন রাতে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরেছি অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু বেশিই রাতে। এই ৩ টার দিকে। সকালে ৯ টা বাজতে না বাজতেই খবর আসে তাড়াতাড়ি অফিসে যেতে হবে। জেল বিদ্রোহ (যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে) হয়েছে। গোলাগুলিতে অনেকে মারা গেছে। আগুন দেয়া হয়েছে কারাগারে। বুলেটিন বের করা হবে। আমরা সবাই যথারীতি পৌঁছে গেলাম অফিসে। প্রফেশনাল ফটোসাংবাদিকতা কি সেদিন দেখিয়েছিল হানিফ ডাকুয়া। কিভাবে কিভাবে কোথায় কোথায় যেয়ে জেলখানার ভেতরকার আগুনের ছবিসহ নানা ছবি নিয়ে হাজির সে। স্লিপের পর স্লিপ লিখছেন নান্টু চাচা-মিজান মাহমুদ-রুহুল ভাই। প্রায় সময়ই আমি-আজগার-ইমতিয়াজ (পিয়ন) নিউজের স্লিপ নিয়ে কম্পিউটার রুমে ঢুকছি। দুপুরের দিকে শুরু হলো পেস্টিং। এর মাঝে তরিকুল চাচা, বড় খোকন চাচা, দেলোয়ার হোসেন খোকন চাচা, আব্বাস চাচাসহ সবাই অফিসে হাজির। দুপুরের পরপর শুরু হলো ট্যাবলেট সাইজের পত্রিকা ছাপানো। নিচেরতলায় কাগজ কিছু কিছু করে ছাপা হচ্ছে আর আর আমরা সকলে নিয়ে আসছি উপরে ভাজ করার জন্য। কিন্তু যে পরিমাণে ছাপা হচ্ছে তার থেকে কম ভাজ করা হচ্ছে দেখে একসময় তরিকুল চাচাও মেঝেতে বিছানো পাটিতে বসে পড়ে বলেন এই দে ত দেখি আমিও ভাজ করি। সেদিন প্রায় ১০ হাজার কপি বুলেটিন ছাপা হয়েছিল। যা যশোর থেকে প্রকাশিত বুলেটিন হিসেবে এখনো একমাত্র। এমন হাজারো সুখময় স্মৃতি রয়েছে লোকসমাজ পত্রিকায় কর্মরত এক যুগের বেশি সময়ের। যা লিখে শেষ করার মত নয়।
তরিকুল ইসলাম আজ হয়তো দুনিয়ায় নেই কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন তাঁর কর্মে লাখো মানুষের হৃদয়ে। আজকের এই বিশেষ দিনে ওই মহান মানুষটির রুহের মাগফেরাত কামনা করি। আল্লাহ তাঁকে বেহেশতের সর্বোচ্চ মকাম দান করুন।

লেখক : সম্পাদক দৈনিক বাংলার ভোর

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Home
News
Notification
Search
Exit mobile version