বাংলার ভোর প্রতিবেদক
রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও দাঁড়িপাল্লা প্রতীক পুনর্বহাল করা হয়েছে। নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পেল জামায়াতে ইসলামী। মঙ্গলবার (২৪ জুন) নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার আহমেদের সই করা এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক পুনর্বহাল করা হলো।
প্রতীক ফিরে পাওয়ায় যশোরে জামায়াত ও ছাত্র সংগঠন শিবির নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা আগামী নির্বাচনে প্রার্থীদের ছবি দিয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন।
২০১৩ সালের ১ আগস্ট সংবিধানের সঙ্গে গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক হওয়ার কারণ দেখিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত হয়, দাঁড়িপাল্লা ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহৃত হবে এবং কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও দলের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
ওই সিদ্ধান্ত ইসিকে পাঠানোর পর নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা থেকে জামায়াতের জন্য বরাদ্দ মার্কা দাঁড়িপাল্লা নির্বাচনি প্রতীক তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ২০১৭ সালের ৮ মার্চ গেজেট জারি করে ইসি। যে কারণে নিবন্ধন ফেরত পেতে জামায়াত আপিলের পাশাপাশিও ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক বরাদ্দ বিষয়ে আলাদা একটি আবেদনও করেছিল।
যশোর জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম কুদ্দস বলেন, আমাদের ন্যায় অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছিল ফ্যাসিস্ট সরকার। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের অধিকার ফিরি পেয়েছি। এর ফলে নেতা কর্মীরা আরো চাঙ্গা হয়েছেন।
তিনি বলেন, আপিল বিভাগের রায়ের মধ্য দিয়ে নিজ দলের প্রতীক নিয়ে আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার পথ খুলে গেল। আগামী নির্বাচনে যশোরের ৬ টি আসনে জামায়াতের প্রার্থীও চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রতীক ফিরে পাওয়ার ফলে নির্বাচন ঘিরে স্থানীয় পর্যায়ে জামায়াত ও ছাত্র সংগঠন শিবির নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা প্রার্থীদের ছবি দিয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই যশোরে জামায়াতের সাংগঠনিক পুনর্গঠন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এর আগের পৃথক তিনটি জেলা কমিটিকে একটিতে পরিণত করা হয়েছে। ১১টি সাংগঠনিক থানা, আটটি পৌরসভা ও ৯৩টি ইউনিয়ন কমিটি গঠন শেষ হয়েছে। এদিকে, জেলার সর্বত্রই দলটি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এখন প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচাণায় জামায়াত মাঠে থাকবে জামায়াত। এক প্রশ্নয়ের জাবাবে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে জামায়াত দেশ ও জাতীয় স্বার্থে ধানের শীর্ষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ছিল। তবে তখন নেতা কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কম ছিল। তবে এ বার দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছে।
জামায়াতের নির্বাচনী পরিসংখ্যান: খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ৭৬টি আসনে প্রার্থী দিলেও ১০টি আসনে জয়ী হয়। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে জামায়াতে ইসলামী। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ২২২টি আসনে প্রার্থী দিলেও ১৮টি আসনে জয়ী হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নীলফামারী-৩, সাতক্ষীরা-২ ও পিরোজপুর-১ আসনে জয়ী হয় জামায়াত। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে ১৭টি আসনে জয় ও ৪টি সংরক্ষিত নারী আসন পায় দলটি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত দুটি আসনে জয়ী হয়। ওই নির্বাচনে দলটি জোটগতভাবে ৩৯টি এবং ৪টিতে এককভাবে নির্বাচন করে। তবে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে ২২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল জামায়াত।