# দীর্ঘদিনের বকেয়া আদায় হয়নি
# লবণ-শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি
# চামড়া সংরক্ষণে বিনামূল্যে লবণ দেবে প্রশাসন
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
দীর্ঘদিনের বকেয়া আদায় হয়নি। সেইসঙ্গে বেড়েছে লবণের দাম ও শ্রমিকের মজুরি। তাই এবার ঈদুল আজহায় চামড়া ব্যবসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম যশোরের রাজারহাটের চামড়া ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, সমস্যা কাটিয়ে উঠতে দরকার ঋণ সুবিধা। তবে বাজার স্থিতিশীল ও চামড়া পাচার বন্ধে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। একই সাথে চামড়া সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণে লিল্লাহ বোডিংগুলোতে বিনামূল্যে লবণ দেয়ার পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম চামড়ার হাট যশোরের রাজারহাট। খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী নাটোরের বড় বড় ব্যবসায়ীরা চামড়া বেচা-কেনা করেন এখানে। হাটটি ঘিরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার ছোট বড় ব্যবসায়ী ব্যবসা করেন। ঈদ পরবর্তী প্রায় শত কোটি টাকার চামড়া হাতবদল হয় এখানে। কিন্তু ট্যানারি মালিক ও মহাজনদের কাছে থাকা বকেয়া আদায় না হওয়ার পাশাপাশি হঠাৎ লবণের মূল্যসহ শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিতে চামড়ার ব্যবসা নিয়ে হতাশ তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বকেয়া টাকা প্রাপ্তির পাশাপাশি ঋণ সুবিধা পেলে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারতেন। একই সঙ্গে বাজার চাঙ্গা করতে ইউরোপের বাজার ধরতে সরকারি উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এই হাটে তিন দশকের বেশি সময় ধরে হাটটিতে ব্যবসা করে আসছেন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ব্যবসার অবস্থা এবারও খারাপ হবে মনে হচ্ছে। গত বছরের ট্যানারি মালিকদের প্রতিনিধিদের কাছে চামড়া দিছিলাম, সেগুলোর টাকা এখনো পাইনি। তারপরেও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এবারও প্রস্তুতি নিচ্ছি। সরকার এবার গরুর চামড়া ৫৫ থেকে ৬০ টাকা বর্গ ফুট বেঁধে দিয়েছে, সেই দামে চামড়া কেনা যাবে না। তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকার কাঁচা চামড়া কিনলে এর পরে লবণ, শ্রমিক, পরিবহন খরচে দাম হয়ে দাঁড়ায় ৬ থেকে ৭শ’ টাকা। এরপর আমরা ট্যানারি মালিকদের কাছে পাঁচ থেকে ৬ শ’ টাকার উপরে দাম পাই না। এতে খরচই উঠে না। ফলে এবার চামড়া খুব হিসাব করে কিনতে হবে। সরকারের বেঁধে দেয়া দামে চামড়া কিনা কঠিন।’
রাকিবুজ্জামান রাকিব নামে আরেক ব্যবসায়ী জানান, ‘সবচেয়ে দুঃখের খবর হলো, প্রতি কুরবানি ঈদের সপ্তাহ খানিক আগে থেকে লবণের দাম দ্বিগুণ হয়। এবারও তার ব্যতয় ঘটেনি। হঠাৎ করে প্রতি বস্তায় পাঁচশ’ টাকা দাম বেড়েছে। সেই সিণ্ডিকেট রয়েই গেছে, সরকার ভাঙ্গতে পারেনি। আমাদের দাবি, ট্যানারি মালিকদের কোটি কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। কিন্তু এ রকম না দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-ফড়িয়াদের যদি অল্প সুদে ঋণ দিতো, তাহলে এই ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারতো।’
এদিকে, সরকার চামড়ার দাম বেঁধে দিলেও ক্রয়-বিক্রয়ে সেই দামে ব্যবসায়ীদের মধ্যে তেমন সাড়া থাকে না। ফলে স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা মনে করেন এ সময়টায় চামড়ার দাম ভারতে একটু বেশি থাকবে। সে জন্য বেশি মুনাফার আশায় চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতে চামড়া পাচার রোধে শার্শা ও বেনাপোল সীমান্তে সতর্কতা জারি করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা।
যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রতিনিয়ত আমাদের টহল অব্যহত। ঈদের মৌসুদে সেটা আরোও জোরদার করা হবে। বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে বিজিবি পোস্টে কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে।’
একই সাথে চামড়ার বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে ও সিণ্ডিকেট ভাঙতে ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘লবণকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণী ব্যবসায়ীরা সিণ্ডিকেট গড়ে তোলে। এই সিণ্ডিকেট ভাঙতে জেলায় ৩৭৭ টি লিল্লাহ বোডিংয়ে জন্য আড়াইশ’ মেট্রিকটন লবণ ক্রয় করেছি। বিনামূল্যে এসব লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে বিতরণ করা হবে। এছাড়া চামড়া নিয়ে যেন কোনো নৈরাজ্য না হয়, চামড়া যেন পচে না যায়, শৃঙ্খলার সঙ্গে যাতে বেচাকেনা হয় সে ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা আছে।’