বাংলার ভোর প্রতিবেদক
স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও আবাসন খাতের একটি ব্র্যাক প্রণোদনা প্রকল্পের নাম ব্যবহার করে সংঘবদ্ধ প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের সমন্বয়কারী পরিচয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ, শারীরিক নির্যাতন ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ এনেছেন এক ভুক্তভোগী নারী।

শনিবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মনিরামপুর উপজেলার ভুক্তভোগী নাজমা খাতুন এই অভিযোগ করেন। তিনি দোষীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নাজমা খাতুন বলেন, তার স্বামী মো. শফিকুজ্জামানের সঙ্গে তথাকথিত সমন্বয়কারী ও সুপারভাইজার মুরাদ হোসেন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে মোট তিনটি চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন। প্রতিটি চুক্তিপত্রে মুরাদ হোসেন, তার মা মনি বেগম ও ভগ্নিপতি জাকির হোসেন স্বাক্ষর করেন।

চুক্তি অনুযায়ী, বিভিন্ন প্রকল্পের (সৌর বিদ্যুৎ, বাথরুম, টিউবওয়েল, ঘর) জন্য নির্দিষ্ট ফিস নির্ধারিত থাকলেও মুরাদ হোসেনের কর্মীরা প্রতিটি প্রকল্পে অতিরিক্ত ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আদায় করতে থাকে। তার স্বামী এর প্রতিবাদ করলে কর্মীদের বিরোধিতার মুখে কৌশলে প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নিয়ে নেয়া হয়।

নাজমা খাতুনের অভিযোগ, প্রথম চুক্তির তারিখ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত তার স্বামী প্রকল্পের বিভিন্ন খরচ বাবদ মোট ৪১ লাখ ৯৬ হাজার ১৪০ টাকা মুরাদ হোসেনকে প্রদান করেন। কিন্তু হিসাব মিলিয়ে দেখা যায়, সেখানে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার গড়মিল এবং মুরাদ হোসেনের কাছে আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন কর্মীর কাছে আরও ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকারও বেশি অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুন .. ..

যশোরে হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

অর্থ আত্মসাতের প্রতিবাদ করায় অভিযুক্তরা তাদের বাড়িতে গিয়ে গালিগালাজ, অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে শারীরিক নির্যাতন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এমনকি তাদের ছেলে শাহরিয়ার নাফিজকেও ৭ নভেম্বর তারিখে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে তারা ৪ অক্টোবর তারিখে দৈনিক যশোর পত্রিকায় সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, মণিরামপুর থানায় জিডি (নং-২১৬) এবং সেনা ক্যাম্প ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর একাধিক অভিযোগ দায়ের করেন।

নাজমা খাতুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অভিযুক্তরা গত ১৫ ডিসেম্বর তারিখে যশোর প্রেস ক্লাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে। যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি ‘মানব সেবা ট্রেডার্স লি.’-এর স্বল্পমূল্য বাজার প্রকল্পেরও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনেন। তার স্বামীর নিয়োগকৃত নাসরিন বেগম এই প্রকল্পের টাকার কোনো হিসাব না দেয়ায়, তার সহকারী শফিকুল ইসলাম এই প্রকল্পের ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গত ৭ থেকে ৮ দিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় নাসরিন বেগম মারা যাওয়ার পর থেকেই শফিকুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন।

বর্তমানে প্রাণনাশের আশঙ্কায় গত দুই মাস ধরে পরিবারটি নিজ বাড়িতে বসবাস করতে পারছেন না জানিয়ে নাজমা খাতুন বলেন, তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে নাজমা খাতুনের সঙ্গে মানব সেবা ট্রেডার্স লি. প্রকল্পের উপদেষ্টা বিলকিস নাহার এবং তার আত্মীয় রাইসুল আলম অপু, ছেলে শাহরিয়ার নাফিজ উপস্থিত ছিলেন।

Share.
Exit mobile version