শরিফ ইসলাম
নির্বাচন আসলেই সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ, চলে নানামুখী প্রচার-প্রচারণা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পরপরই খটখট শব্দে ছাপাখানা থেকে বেরিয়ে আসবে সাদা-কালো পোস্টার। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছে ছাপাখানাগুলো। অনেকেই মেশিন পরিষ্কারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি মেরামতের কাজ সেরে নিচ্ছেন। যশোর শহরের পোষ্ট অফিস পাড়া, এইস এমএম রোডসহ অন্যান্য এলাকার ছাপাখানাগুলোতে গিয়ে দেখায় যায় এমনই সব চিত্র।
তবে প্রস্তুতির মাঝেও কোথাও কোথাও প্রার্থীদের থেকে টাকা না পাওয়ার শঙ্কা থাকায় অনাগ্রহও রয়েছে কোনো কোনো ছাপাখানা মালিকের। কয়েকটি ছাপাখানায় এখনো বকেয়া রয়েছে গত পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পোস্টার ছাপানোর টাকা। তবে হয়রানির ভয়ে নাম প্রকাশ করেনি তাঁরা।
যশোর শহরে সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের মান্নান প্রিন্টিং প্রেসে তেল ও পানি দিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে মেশিনের যন্ত্রাংশ। সঙ্গে কালার প্লেট বসানোর স্তরগুলোও তেল দিয়ে ঘষে রাখছেন এম এ মান্নান। এতে করে সেখানে ময়লা পড়বে না। পাশাপাশি কাজের চাপ শুরু হলে সার্ভিসও ভালো পাওয়া যাবে এখান থেকে।
এসব ছাপাখানাগুলোর কোথাও কোথাও কিনে রাখা হয়েছে স্টিল জাতীয় প্লেট। কোম্পানিগুলোতেও কাগজের অর্ডার দিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দ হলেই চাহিদা অনুসারে সেখান থেকে কাগজ এনে শুরু হবে পোস্টার ছাপানো। এই কাগজগুলো সংগ্রহ করা হয় বিভিন্ন কোম্পানির ডিলার ও সাব-ডিলারদের থেকে।
তবে বর্তমান সময়ে কাগজ, কালিসহ অন্য জিনিসের দামের বাড়ছে। দেড় বছরের ব্যবধানে কাগজের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমানে প্রতি রিম (৫০০ পিস) বড় সাইজের (২৩ ইঞ্চি বাই ৩৬ ইঞ্চি) ৫৫ গ্রাম পুরুত্বের দাম ২ হাজার ৩০০ টাকা, যা আগে ছিল ১ হাজার ৩০০ টাকা। এই কাগজ কিনে কাটিং মেশিনের সাহায্যে সাইজ করে তা দিয়ে পোস্টার ছাপানো হয়। বেড়েছে কালির দামও। দেড় বছর আগে কোম্পানি ভেদে প্রতি পাউন্ড কালির দাম ছিল ১০০-১৫০ টাকা। এখন তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকায়।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলায় ছাপাখানা রয়েছে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০। এর মধ্যে যশোর শহরেই রয়েছে শতাধিক। ছাপার কাজের জন্য অফসেট মেশিনের এক্সপোজ মেশিন (প্লেট মেশিন), কালি রোল, প্লেট বাধা সিলিন্ডার, ছাপা সিলিন্ডার, কালি ও মবিল স্টোর, পানির স্টোর, হাওয়া সিলিন্ডার, চেইনসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ পরিষ্কার রাখা খুবই জরুরি। সাধারণত কম্পিউটারে ডিজাইন তৈরি করে এক্সপোজ মেশিনের সাহায্যে প্লেটে ডাইস (ছাপ) তৈরি করা হয়। এরপর তা প্লেট সিলিন্ডারে দিয়ে প্রিন্ট করা হয়। আকার ভেদে একটি মেশিনে প্রতি মিনিটে ৭০ থেকে ১২০ পিস পোস্টার প্রিন্ট দেওয়া সম্ভব। এক হাজার পোস্টার ছাপালে গড়ে ৩০০ টাকা লাভ থাকে।
পোষ্ট অফিস পাড়ার প্রিন্টিং প্রেস ব্যাবসায়ী আবুল কাসেম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ছাপাখানার ব্যবসা করে আসছি। আমি নিজেই দেখাশোনা করছি। ছাপার কাজ অনেকদিন ধরেই খুব কম ছিল। তবে বর্তমানে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যবসা ভালো হবে, সেই আশায় মেশিনের সব যন্ত্রাংশ মেরামত ও তেল-মবিল ব্যবহার করে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। যেন প্রার্থীকে সব থেকে ভালো কাজটি উপহার দিতে পারি।’
শহরের জামে মসজিদ সড়কের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাপাখানার মালিক বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে মোটামুটি প্রস্তুতি আছে কিন্তু খুব আগ্রহ নেই। কারণ প্রার্থীরা পোস্টার ছাপাতে তাড়াহুড়ো করে, পরে আর টাকা দিতে চায় না। টাকা চাইলেও হয়রানি করে। যেমন গত সদর পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পোস্টার ছাপানোর এখনো প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে ঐ টাকা আদায় হবে কিনা সন্দেহ আছে।’
যশোর শহরের কাগজ ব্যাবসায়ী সাকিল বলেন, ‘মূলত ডলার সংকটের কারণই কাগজের দাম বেশি। ডলার দিয়ে ঠিকমতো কাগজের কাঁচামাল কিনতে পারছে না কোম্পানিগুলো।
একই সুরে কথা বলেন অপর কাগজ ব্যবসায়ী আবু সাঈদ।