দাকোপ সংবাদদাতা
শীতের আগমনে অতিথি পাখিতে ভরে উঠতে শুরু করেছে খুলনার দাকোপের খাল-বিল-ঝিল। কিন্তু এর মাঝেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে স্থানীয় অসাধু শিকারীরা। মোবাইলে রেকর্ড করা নকল ডাক, বিভিন্ন ফাঁদ, আলো ফেলা ও বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে নির্বিচারে ধরা হচ্ছে অতিথি পাখি। পরে এসব পাখি অগ্রিম অর্ডার নেয়া ক্রেতাদের কাছে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে।
সচেতন মহলের অভিযোগ, অতিথি পাখি নিধন রোধে আইন শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ, মাঠ পর্যায়ে নেই বাস্তব প্রয়োগ।
এলাকাবাসীর তথ্যে জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এ বছরও নভেম্বর থেকেই উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিলে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে। পাখির কিচির-মিচিরে এলাকা হয়ে উঠছে মুখরিত। কিন্তু সেই সৌন্দর্যকে বিবর্ণ করে তুলছে শিকারীদের সক্রিয়তা।
শিকারীরা মোবাইলে রেকর্ড করা পাখির নকল ডাক বাজিয়ে সহজেই পাখি নিচে নামিয়ে ফাঁদে ফেলছে। এছাড়াও তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলের খাল-বিল-নদী ও মাঠে নাইলনের সুতার ফাঁদ, কোচ মারা, কারেট জাল পাতা, কেঁচো দিয়ে বর্শি পেতে বিভিন্ন উপায়ে পাখি শিকার করছে। পরে এসব পাখি ২৫০-৩০০ টাকা দরে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, কিছু ব্যক্তি এই শিকারীদের ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রচণ্ড শীত থেকে বাঁচতে হিমালয়, সাইবেরিয়া ও শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে প্রতি বছর অতিথি পাখি এই এলাকায় আসে। বালি হাঁস, জলপিপি, কোম্বডাক, সরালী, কাস্তে চাড়া, পাতাড়ি হাঁস, কাদা খোচা, হুরহুর, খয়রা, সোনা রিজিয়াসহ বহু প্রজাতির পাখি এখানে দেখা যায়।
১৯৮০-এর দশকে দেশে প্রায় সাড়ে ৩০০ প্রজাতির অতিথি পাখি দেখা গেলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৬০-৭০ প্রজাতিতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিকারী জানান, প্রতি রাতে ধানক্ষেতে বসে মোবাইলে রেকর্ড করা পাখির ডাক অথবা বাঁশির নকল সুর বাজিয়ে পাখি নামিয়ে ফাঁদে ফেলি। পরে আগেই অর্ডার নেয়া ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি।
এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ (খুলনা অঞ্চল) বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল বলেন, অতিথি পাখি শিকার বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছি। কোথাও শিকার বা বিক্রির খবর পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
