নিজস্ব প্রতিবেদক, মহেশপুর
জরায়ুতে টিউমার অপারেশন করাতে এক সন্তানের জননী আন্না খাতুনকে নেয়া হয় মহেশপুর নার্সিং হোম অ্যাণ্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
সেখানে আল্টাসনোগ্রাফি শেষে জরায়ুতে টিউমার অপারেশনের কথা জানান নার্সিং হোম মালিক আজাদুর রহমান। ১৯ হাজার টাকার চুক্তিতে পরের দিন রাতে জরায়ুর টিউমার অপারেশনের জন্য থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় আন্না খাতুনকে। অপারেশন শেষে পেট সেলাই করা অবস্থায় বেডে দেয়া হয় তাকে।
কিন্তু তাৎক্ষণিক অপারেশন করা চিকিৎসকরা জানান আইসিইউ সাপোর্ট না থাকায় টিউমার অপসারণ করা সম্ভব হয়নি, এ অপারেশন এখানে সম্ভব না। পেট কাটার ক্ষত শুকালে খুলনায় নিয়ে গিয়ে পুনরায় অপারেশন করাতে হবে।
এরপর থেকে জরায়ু টিউমারের যন্ত্রণার সাথে পেট কাঁটার যন্ত্রণা নিয়ে ১০ দিন যাবত ওই নার্সিং হোমে থাকার পর সোমবার রিলিজ দেয়া হয়েছে আন্না খাতুনকে। আন্না খাতুন মহেশপুর শহরের পাতিবিলা গ্রামের নুর আলমের স্ত্রী। এ ব্যাপারে সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তোভোগীর স্বামী নুর আলম।
এর আগে গত ২৫ নভেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে সরকারি ওষুধ অবৈধ মজুদ ও ব্যবহারের দায়ে মহেশপুর নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ও নার্সকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল ও জরিমানা করে।
আরও পড়ুন .. .. পাইকগাছায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার
জানা গেছে, ৫ ডিসেম্বর মহেশপুর নার্সিং হোমে আল্টাসনোগ্রাফি শেষে জরায়ুতে টিউমার অপারেশনে ১৯ হাজার টাকা চান মালিক আজাদুর রহমান। ভুক্তভোগীর স্বামী নুর আলম টাকা দিতে রাজি হলে পরের দিন রাতে চিকিৎসক ফাহিম ও ফরহাদ অপারেশন করেন। কিন্তু টিউমার অপসারণ না করে অপারেশন থিয়েটর থেকে পেট সেলাই করা অবস্থায় আন্না খাতুনকে বেডে দেয়া হয়।
আন্না খাতুনের স্বামী বাংলার ভোরকে বলেন, ওরা আমার স্ত্রীকে ভুল অপারেশন করিয়েছেন। প্রায় ১ ফুটেরও বেশি পেট কাটা হয়েছে। আমার স্ত্রীর অবস্থা আগের তুলনায় আরো খারাপ হয়ে গেছে। আইসিইউ সাপোর্ট না থাকায় টিউমার অপসারণ করা হয়নি বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। ভালভাবে পরীক্ষ না করিয়ে কেন আমার স্ত্রীর পেট কাটা হল আমি এর বিচার চাই।
এ ব্যাপারে অপারেশন করা চিকিৎসক ফাহিম বলেন, টিউমারটি জটিল আকার ধারণ করায় অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। এসব অপারেশনে আরো উন্নতমানের বেশ কিছু পরীক্ষা করানোর দরকার হয়। তবে আমাদেরকে শুধু টিউমারের কথা বলা হয়েছিলো। আল্টাসনোগ্রাফি রিপোর্টে সম্পূর্ন অবস্থা ধরা না পড়ায় এমন অবস্থা হয়েছে। এ অপারেশনে আমরা কোন অর্থ নিইনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হেলেনা আক্তার নিপা বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে নার্সিং হোমের মালিক ও অপারেশন করা ডাক্তারদের দেখা করতে বলা হয়েছে। রোগীর যাবতীয় রিপোর্ট ও চিকিৎসকদের সাথে কথা বলার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এদিকে শুধুমাত্র একটি আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে কিভাবে এত বড় অপারেশন করা হয়েছে এনিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
