নিজস্ব প্রতিবেদক
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দশম সংসদ নির্বাচনে যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বপন ভট্টাচার্য। পরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পান। গত পাঁচ বছরে স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে পেয়ে স্বপনের বার্ষিক আয় তেমন না বাড়লেও বেড়েছে অস্থাবর সম্পত্তি। অবশ্যই এ সময়ে স্ত্রী ও সন্তান হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামা পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের বার্ষিক আয় ছিল ৩২ লাখ ৯৭৮ টাকা, যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ লাখ ৭৮ হাজার ৮১ টাকায়। অথচ তার ১ কোটি ১৮ লাখ ৭৩ হাজার ৪০৮ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৯০ লাখ ৫২ হাজার ৫৩৪ টাকায়। গোপন করা হয়েছে রাজউকে থাকা প্লটের তথ্য।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী, স্বপন ভট্টাচার্যের স্থাবর সম্পত্তি ছিল পৈতৃক সূত্রে পাওয়া চার বিঘা জমি, যার কোনো মূল্য উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র লালদীঘির পাড় এলাকায় পৌনে ৯ শতক জমিসহ ৪তলা বাড়ি, যার মূল্য ৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা। মণিরামপুরে ৮০০ স্কয়ার ফুটের দ্বিতল বাড়ি, যার মূল্য ২৫ লাখ টাকা। এছাড়া রাজউকে ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি প্লট।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় রাজউকের প্লটের তথ্য ছাড়া পূর্ববর্তী নির্বাচনের হলফনামা হুবহু তুলে ধরা হয়েছে। অথচ গত ৫ বছরের তার স্থাবর সম্পত্তির বাজার মূল্য বেড়েছে বহুগুণ। বিশেষ করে তার শহরের বাড়ির দাম অন্তত ৩ কোটি টাকা।
এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্যের বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছিল ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৩০০ টাকা, যা বর্তমান হলফনামায় দেখানো হয়েছে ৩৩ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৬ টাকা। অস্থাবর সম্পদ ৫৮ লাখ ৪৬ হাজার ৪৪ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ২ লাখ ৩৪ হাজার ৯১৮ টাকা। ব্যবসা ও সঞ্চয়পত্রের সুদ থেকে এ আয় হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনের দাখিল করা হলফনামায় স্থাবর সম্পত্তি ছিল ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের ৬৩ শতক জমি ও ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ টাকার ১৪০০ স্কয়ার ফুটের ফ্লাট। বর্তমান হলফনামায় ফ্লাটের তথ্য গোপন করা হয়েছে। এছাড়া তার হেফাজতে স্বর্ণালংকার দেখানো হয়েছে ১৭ ভরি, যার মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৮৫ হাজার টাকা। অথচ বর্তমানে এক ভরি স্বর্ণালংকারের বাজার মূল্য এক লাখ টাকার ওপরে। পূর্বের হলফনামায় ২৫ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকারের তথ্য দেওয়া হয়েছিল।
শুধু স্বপন ভট্টাচার্যের স্ত্রী নয়, একই সাথে বড়লোক হয়েছেন তার ছেলে সুপ্রিয় ভট্টাচার্যও। একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ছেলের কোনো আয়, অস্থাবর, স্থাবর সম্পত্তি না থাকলেও দ্বাদশ নির্বাচনের হলফনামায় তাকে কোটিপতি হিসেবে দেখানো হয়েছে। ব্যবসা ও বাড়ি ভাড়া বাবদ তার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৬৮ লাখ ৬১ হাজার ৫৬০ টাকা। নগদ, ব্যাংক জমা, ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী ও আসবাবপত্র মিলিয়ে অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে ৪৬ লাখ ৯ হাজার ১২৫ টাকা। স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে ২ কোটি ২ লাখ ৬৭ হাজার ১৩৪ টাকার অকৃষি জমি, ৭৭ লাখ টাকার একটি ফ্লাটের তথ্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়া হেবাসূত্রে পাওয়া একটি ফ্লাটের তথ্য দেয়া হলেও তার মূল্য উল্লেখ করা হয়নি।
এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী স্বপন স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, এমপি থেকে প্রতিমন্ত্রী হয়েছি, সম্মানি বেড়েছে এবং ব্যবসাও বেড়েছে। গতানুগতিকভাবেই সবকিছুই বেড়েছে। সম্পত্তি, অর্থ যা বেড়েছে সেটা স্বাভাবিক। হলফনামাতে যে তথ্য দেয়া আছে তাতে কারচুপি নেই।
একই সঙ্গে রাজউকে থাকা প্লটের তথ্যের কথা তিনি নিশ্চিত করেছেন।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version