রেহানা ফেরদৌসী
২০২৫ সাল স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ তম বছর। এ বছরে সমগ্র দেশে ঘটে যাওয়া আলোচিত কিছু ঘটনা এক নজরে দেখে নেওয়া যাক…
♦ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এতিমখানা ট্রাস্টের সাথে জড়িত একটি মামলায় দুর্নীতির দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মরহুমা বেগম খালেদা জিয়ার ২০১৮ সালের সাজা বাতিল করেছে।
♦ রাজধানীর মতিঝিলে এনসিটিবি সামনে হামলায় অন্তত ১০ আদিবাসী শিক্ষার্থী ও তাদের সমর্থক আহত হয়েছেন।
♦ সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জনাব লুৎফুজ্জামান বাবর সাড়ে ১৭ বছর কারাভোগের পর কারাগার থেকে মুক্তি পান।
♦ বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি-৩২ নং সড়কে অবস্থিত বাড়িটি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়া হয়।
♦ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে সারা দেশে শুরু হয় অপারেশন ডেভিল হান্ট।
♦ বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি আত্মপ্রকাশ করে।
♦ কক্সবাজারের উখিয়ায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থীদের সাথে ইফতার করেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস।
♦ আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়।
♦ ছাত্র-জনতার অভ্যুথান চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় না পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও এর সকল সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম ও অঙ্গসংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
♦ অর্থ উপদেষ্টা জনাব সালেহউদ্দীন আহমেদ ২০২৫-২৬ সালের জন্য ৭,৯০,০০০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন, যা আগের বাজেটের তুলনায় ০.৮৮% কম।
♦ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আন্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ কে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়।
♦ গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালে জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যদের উপর কয়েক দফা হামলা ও সংঘর্ষ।
♦ ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান এফ-৭ বিজিআই দুর্ঘটনায় ৩৫ জনের মৃত্যু হয় ।
♦ প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস জুলাই ঘোষণাপত্র উন্মোচন করেন।
♦মাই টেলিভিশন এর চেয়ারম্যান জনাব মোঃ নাসির উদ্দিন জুলাই অভ্যুথান সংক্রান্ত অভিযোগে গুলশান, ঢাকায় গ্রেপ্তার হন।
♦ ঢাকায় জাতীয় পার্টির সদর দপ্তর অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয় ।
♦ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
♦ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনাবলি স্মরণে ৭ অক্টোবর ও ২৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
♦ জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়।
♦ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালে একটি বড় অগ্নিকাণ্ডে সেখানকার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।
♦ ফার্মগেটে ঢাকা মেট্রোরেল থেকে বিয়ারিং প্যাড পড়ে একজন নিহত ও আরও দুইজন আহত হন।
♦ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয় ।
♦ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ,সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও সাবেক আইজিপি জনাব আব্দুল্লাহ আল মামুন কে জুলাই আন্দোলনে সাথে জড়িত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বাংলাদেশ অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দায়ী সাব্যস্ত করে।শেখ হাসিনা ও জনাব কামালের অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়,জনাব মামুন পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পান।
♦ ঢাকাসহ সারাদেশে ৫.৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যার কম্পন স্বল্পস্থায়ী ছিল। কমপক্ষে ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় ।
♦ সরকারি প্লট বরাদ্দ প্রকল্পে অবৈধভাবে জমি অধিগ্রহণের অভিযোগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা এবং ভাগ্নী ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকী কে তাদের অনুপস্থিতিতে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড আদালতের রায়ে আদেশ করা হয় ।
♦ আনুমানিক দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে রাজধানীর পল্টন বিজয়নগরের কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল থেকে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র জনাব ওসমান হাদী কে গুলি করে।
♦ ইনকিলাব মন্চের মুখপাত্র মরহুম শরীফ ওসমান হাদী সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
♦ দৈনিক প্রথম আলো, ডেইলি স্টার,ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়ি এবং ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে আক্রমণ, ভাঙচুর এবং আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় ।
♦ ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে একদল লোক এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে। মারধরের পর, যুবকের দেহ একটি গাছের সাথে বেঁধে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
♦ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন জনাব তারেক রহমান ও তার পরিবার দেশে ফিরেন।
♦ জুবায়ের রহমান চৌধুরী শপথ নেন।
♦ শারীরিক অসুস্থতা ও অন্যান্য জটিলতায় বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব,৩ বারের সফল প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া (বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী) ইন্তেকাল করেন ।
২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই বছরটি ছিল চ্যালেঞ্জ আর পরিবর্তনের। বাংলাদেশ জুড়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন আলোচিত ঘটনা আমাদের শিখিয়েছে মানবতা, সহনশীলতা, আর একতাবদ্ধ হওয়ার গুরুত্ব।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, ধর্মীয় বিদ্বেষ সবকিছুই আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, সময় এসেছে আমাদের সবার একসাথে কাজ করতে হবে…নিজ মাতৃভূমির জন্যে। এ বছরের শেষ সূর্যাস্ত যেমন আমাদের আগামী দিনের নতুন সূর্যোদয়ের আশা দেয়, তেমনি আমাদেরও উচিত আগামী দিনগুলো আরও উজ্জ্বল করার জন্য সব কষ্ট ভুলে, একসাথে কাজ করা।
২০২৫ সালের অভিজ্ঞতা আমাদের শিখিয়েছে, পরিবর্তন সম্ভব! যদি আমরা একসাথে কাজ করি। আসুন, নতুন বছরকে স্বাগত জানাই নতুন আশা, নতুন স্বপ্ন, আর একে অপরের প্রতি সহানুভূতি নিয়ে।বিশ্বের দরবারে নিজ মাতৃভূমিকে করি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ ।

