আব্দুল্লাহ বাশার, কোটচাঁদপুর
প্রতিবন্ধিকতার দোহাই দিয়ে সমাজের অনেক মানুষ যখন ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করে। ঠিক তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউটিউব দেখে জন্মগত বাকপ্রতিবন্ধী নয়ন শিখেছেন চুলকাটার বিভিন্ন স্টাইল। বদলে নিয়েছেন নিজের জীবন। নয়ন হতে পারেন অন্য প্রতিবন্ধীদের অনুকরণীয়।
নয়ন হোসেন (২৫) কোটচাঁদপুর উপজেলা কুশনা ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের ওসমান গনির একমাত্র ছেলে। ছোট বেলা থেকে তিনি তার মায়ের কাছে থেকেই বড় হয়েছেন। বাকপ্রতিবন্ধী জেনেও তার মা রেখা খাতুন লেখা-পড়া শেখাতে ভর্তি করান জালালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তবে বাকপ্রতিবন্ধীদের লেখা পড়া শেখানোর তেমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না বিদ্যালয়টিতে। এ কারণে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেই ওই পাঠ চুকিয়েছেন নয়ন। লেখাপড়া করে কিছু বলতে না পারলেও লিখে প্রকাশ করতে পারেন মনের ভাব। বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি চুলকাটার সেলুনে যেতেন নিয়মিত। তবে হাতে কলমে কোন কিছু শেখাতে হয়নি তাকে। এমনটাই জানালেন কোটচাঁদপুর শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জালালপুর বাজারের সেলুন মালিক সুকেশ দাস। তিনি বলেন, আমি যে সময় কাজ করতাম নয়ন পাশে দাঁড়িয়ে দেখতো। এর কিছুদিন পর আমি জানতে পারলাম নয়ন ইউটিউব দেখে চুলকাটার ভিন্ন ভিন্ন ধরন শিখেছেন। নিজেই দিয়েছেন সেলুনের দোকান। ওই গ্রামের ইউপি সদস্য জীবন হালদার বলেন, নয়ন সদা হাস্যোজ্জ্বল একটা ছেলে। এই বাজারে গেল দুই বছর হল দোকান দিয়েছেন। কাজও করেন আর দশটা মানুষের মত করে। দেখে বোঝার উপায় নাই বাকপ্রতিবন্ধী। দোকানটিও সাজিয়েছেন বেশ পরিপাটি করে। এয়ারকুলারও আছে নয়নের সেলুনে। তিনি বলেন, বর্তমান যুগে চুলের ভিন্ন ভিন্ন কাটিং বের হয়েছে। যা সবকিছুই তার রপ্ত। এ কারণে অনেক দূর থেকে মানুষ আসেন চুল কাটাতে নয়নের দোকানে। এ ধরনের প্রতিবন্ধী মানুষ যে সময় ভিক্ষাবৃত্তি ও মানুষের কাছে চেয়ে জীবনযাপন করছেন; ঠিক সেই সময় নয়ন রীতিমতো সেলুনে চুলকাটার কাজ করে বদলে নিয়েছেন নিজেকে। তিনি অনুকরণীয় হতে পারেন অন্য সব প্রতিবন্ধী মানুষের। যোগ করেন জীবন হালদার।