বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের দুঃখ হিসেবে পরিচিত ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে ১০ দফা দাবিতে লংমার্চ ও গণসমাবেশ করেছে বিএনপি। রোববার দুপুরে দুপুরে মনিরামপুর থেকে শুরু হওয়া লংমার্চে নেতৃত্ব দেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। কয়েক’শ যানবাহনযোগে হাজার হাজার নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে এ লংমার্চ শেষে ভবদহপাড়ে কপালিয়া রাজবংশিপাড়ার কালিমন্দির মাঠে বিশাল গণ জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়। গণ জমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে ভবদহের সকল সমস্যা সমাধান করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বিগত পতিত স্বৈরাচার সরকারের মন্ত্রী, নেতা আমলারা ভবদহের বিভিন্ন প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন বলেই আজ ভয়াবহ দুর অবস্থা বিরাজ করছে। ভবদহপাড়ের দুর্গত মানুষের সাথে বিএনপির সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকালে আমাদের প্রিয় দুই অভিভাবক আমার প্রয়াত পিতা তরিকুল ইসলাম এবং আফসার আহমেদ সিদ্দিকী এই অঞ্চলে এসে দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের দুঃখ কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করেছেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আনুকুল্যে আমাদের প্রয়াত অভিভাবক তরিকুল ইসলাম ভবদহপাড়ের দুর্গত মানুষের কষ্ট লাঘবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সেই সময় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে টিআরএম বাস্তবায়ন হয়েছিল। যার ফলে ভবদহ পাড়ের দুর্গত মানুষের মুখে হাসি ফুটেছিল। দীর্ঘ তারা স্বস্তি অনুভব এবং ফসল উৎপাদন করতে পেরেছিল। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে একের পর এক ভবদহ সংস্কার প্রকল্পের নামে কোটি কোটি লুটপাট করায় সে সুফল ভেস্তে যায়।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ইতিমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে ভবদহ সমস্যার ব্যাপারে বিস্তারিত কথা হয়েছে। আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান আশ^স্ত করেছেন বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে ভবদহের সকল সমস্যা সমাধান করা হবে। ভবদহবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে তিনি ঘোষনা দেন, আজ থেকে এ অঞ্চলের মানুষদের ঋনের কিস্তি যেন আপাতত: না দিতে হয় সে ব্যাপারে প্রশাসনের কর্তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। একই সাথে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারণে সেচ পাম্পের বন্ধ সংযোগ বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে কথা বলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করার ঘোষণা দেন অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেনের সভাপতিত্বে গণ জমায়েত সূচনা বক্তব্য রাখেন লংমার্চ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মনোহরপুর ইউপি চেয়ারম্যান আকাতর ফারুক মিন্টু। বিএনপি নেতা প্রভাষক নাজমুল হক লিটনের সঞ্চালনায় গণ জমায়েতে বক্তব্য রাখেন যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, কেন্দ্রীয় বিএনপির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য জাহানারা সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান খান, মোহাম্মদ মুছা, কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ, সাধারন সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, শাহিদুল ইসলাম, অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজি মতিয়ার রহমান, মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মফিজুর রহমান, পৌর সভাপতি খায়রুল ইসলাম, সাধারন সম্পাদক আব্দুল হাই, মুক্তিযোদ্ধা আকতার হোসেন খান, অ্যাডভোকেট মকবুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান মিন্টু, জাহাঙ্গীর বিশ^াস, হামিদুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন, জেলা মহিলাদলের সহসভাপতি মেরী ইকবাল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুন্নাহার প্রমুখ।
এ দিকে নির্ধারিত সময়ের আগেই রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন প্রাপ্ত থেকে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীরা যানবাহন যোগে মনিরামপুরে আসতে থাকে। দুপুর একটার দিকে বিশাল গাড়ির বহর নিয়ে লংমার্চ শুরু হয়। মনিরামপুর থেকে ভবদহের দুরুত্ব বিশ কিলোমিটার জুড়ে ছিল লংমার্চের বহর। সেখানে পৌঁছে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ভবদহ গেট পরিদর্শন করেন এবং দুর্গত মানুষের সাথে কথা বলেন।
সমাবেশস্থল কপালিয়া রাজবংশিপাড়ার কালিমন্দীর মাঠ বিকেল তিনটার আগেই কানায় কানায় পূর্ন হয়ে যায়। এছাড়া আশাপাশের গোটা এলাকা জুড়ে সাধারণ মানুষের ঢেউ নামে। প্রধান অতিথি সবার প্রিয় অনিন্দ্য ইসলাম অমিত দীর্ঘ ভীড়ের মধ্যে বিকেল চারটায় মঞ্চে ওঠেন। এসময় উপস্থিতিরা হাততালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এসময় অনিন্দ্য ইসলাম অমিত উপস্থিতি মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে দুহাত উচু করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন