কাজী নূর
ঘড়ির কাটায় তখন দুপুর ১টা ছুঁই ছুঁই। যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন বিভাগের ৯নং ওয়ার্ড চিকিৎসক কর্মচারী, রোগী দর্শনার্থীদের ভিড়ে ঠাসা। হঠাৎ চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মচারীর হাঁকডাক। ওয়ার্ডে বেওয়ারিশ একটি ট্রলি দেখে তিনি রাগান্বিত। ‘ট্রলি কার, ট্রলি কার’ ওয়ার্ডের এ মাথা ওমাথা চিৎকার করে তিনি ট্রলির মালিক খুঁজছেন।
প্রায় মিনিট কুড়ি পরে বছর পঁচিশের দুই যুবক এসে দাবি করে ট্রলিটি বেওয়ারিশ নয়। এটির মালিক হাসপাতালের সামনে অবস্থিত একটি বেসরকারি ক্লিনিক। জেরার একপর্যায়ে হাসপাতালে আসার কারণ হিসেবে যুবকরা জানায়, ম্যানেজার স্যারের নির্দেশে হাসপাতালের কর্মচারী অনুপম দাসের কাছে রোগী নিতে এসেছে তারা। তৎক্ষণাৎ তাদের ধরে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরএমও ডা. আ ন ম বজলুর রশীদ টুলু কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা স্বীকারোক্তি দেয় হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক অনুপম দাসের সাথে তাদের চুক্তি রয়েছে। সে ফোনে ক্লিনিক ম্যানেজারকে জানিয়েছে, স্টাফ পাঠিয়ে রোগী নিয়ে যান। নিজেদের নির্দোষ দাবি করে তারা জানায়, অফিসের নির্দেশে তারা রোগী নিতে এসেছে মাত্র।
পরে ধৃতদের নিয়ে অনুপম দাসকে খুঁজতে হাসপাতালের মডেল সার্জারি ওয়ার্ডে গেলে, অনুপম দাস প্রথমে এ বিষয়ে তার সম্পৃক্ততার বিষয় অস্বীকার করে জানায়, আমি কাউকে ফোন করি নি বা এদেরকে আমি চিনি না।
অসংলগ্ন নানা কথা বলার সময় অনুপম বলে ওঠে এ রোগী আমার আত্মীয় হয়। তখন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোগী মুসলিম ধর্মাবলম্বী। বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে অনুপম স্বীকার করে নেয় যে, সে হাসপাতালের সামনে অবস্থিত বেসরকারি কিংস হাসপাতালের সাথে কমিশনের বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ। চুক্তির অংশ হিসেবে সে নিয়মিত রোগী পাঠায়।
হঠাৎ কিছুক্ষণ পর অনুপম বলে ওঠে, আমার বাড়ি মণিরামপুরে। আমার মা মণিরামপুরের খেদাপাড়া কাশিমনগরের আওয়ামী লীগ নেত্রী। আওয়ামী লীগ শাসনামলে এ হাসপাতালে আমাকে চাকরি দিয়েছে কিংস হাসপাতালের মালিকরা।
চাকরির শর্ত হিসেবে তখন বলা ছিল সিটি স্ক্যানসহ সব ধরনের পরীক্ষা নীরিক্ষার জন্য কিংসে রোগী পাঠাতে হবে।
রোগী যশোরে শার্শা থানার লক্ষণপুর ইউনিয়নের বহিলাপোতা গ্রামের লুৎফর রহমান (৪০) জানান, তাকে বলা হয়েছিল যে, এ হাসপাতালে এসে পরীক্ষা নীরিক্ষা হয়না। তাই সামনের হাসপাতালে যেতে হবে। পরে বুঝতে পারি আমি প্রতারিত হতে যাচ্ছিলাম।
জানতে চাইলে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরএমও ডা. আ ন ম বজলুর রশীদ টুলু বলেন, দালালদের উৎপাতে আমরা অস্থির। এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

