বাংলার ভোর প্রতিবেদক
ট্রাকের চাকা অনুপাতে এনবিআরের শুল্কায়ন নির্ধারণের প্রতিবাদে খালাস বন্ধ থাকায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে তিনদিন ধরে খাদ্যপণ্য নিয়ে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। প্রচণ্ড গরমে পচে নষ্টের পথে আটকে থাকা মাছ, টমেটো, আদা, রসুন, কাচা মরিচ, আপেল ও আনারসহ বিভিন্ন ধরনের পচনশীল পণ্য। এই তিনদিনে ব্যবসায়ীদের লোকসান হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। আর সরকার বঞ্চিত হয়েছে ৫০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে। আমদানি করা মাছ, ফল ও সবজি জাতীয় পণ্যে যুক্ত করা অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার না করায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে তিনদিন ধরে পণ্য নিয়ে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। এতে আটকে থাকা পণ্যে ব্যবসায়ীদের লোকসান হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। আর পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় সরকার ৫০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
জানা গেছে, পচনশীল খাদ্যদ্রব্য আমদানিতে শুল্কায়নের ক্ষেত্রে এনবিআরের নতুন নীতিমালায় পণ্যবাহী ট্রাকের চাকা অনুপাতে আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন নির্ধারণের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রেখেছেন আমদানিকারকরা। এদিকে প্রচণ্ড গরমে পচে নষ্টের পথে আটকে থাকা মাছ, টমেটো, আদা, রসুন, কাচা মরিচ, আপেল ও আনারসহ বিভিন্ন ধরনের পচনশীল পণ্য। এনবিআরের নতুন নির্দেশনায় আমদানি কমে যাওয়া এবং বাজার উর্ধ্বমুখি হওয়ার শঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। ক্ষোভ জানিয়ে আইন বাতিলের দাবিতে এরই মধ্যে বিক্ষোভ করেছেন তারা। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, এনিবিআরের আদেশ তারা পালন করছেন।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয় তার বড় একটি অংশ ফল, মাছ ও সবজি জাতীয় পণ্য। সাধারণত পণ্যের পরিমাপ ও সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে আমদানি শুল্ককর আদায় করা হয়ে থাকে। কিন্তু এনবিআর ফল, সবজি ও মাছের ক্ষেত্রে কয় চাকার ট্রাকে পণ্য আসছে তার ওপর ভিত্তি করে পণ্যের শুল্ককর আদায় করে।
গত ২৩ জুন আবার নতুন করে ট্রাকের চাকা অনুপাতে পণ্যের ওজন বাড়িয়ে শুল্ককর নির্ধারণ করে চিঠি দেয় এনবিআর।
এতে প্রতি ট্রাকে অতিরিক্ত ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা গুনতে হয়। ফলে লোকসানে পড়ে পণ্য খালাস বন্ধ রাখেন তারা। এছাড়া নতুন করে চাপিয়ে দেয়া শুল্ককর প্রত্যাহারে কাস্টমসের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। তবে কোনো সমাধান না হওয়ায় পণ্য চালান আটকে নষ্ট হচ্ছে। তবে খাদ্যপণ্য খালাস বন্ধ থাকলেও অন্যান্য পণ্যের আমদানি-রফতানি ও খালাস কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানা গেছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এ নিয়মে পণ্য আমদানি যেমন কমবে তেমনি সরকার রাজস্বও হারাবে।
আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে শতাধিক ট্রাক মাছ, ফল ও সবজি জাতীয় পণ্য আমদানি হয়। খালাস বন্ধ থাকায় ৩ দিনে সরকারের ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় কমেছে। আমদানি-রফতানি সমিতির সেক্রেটারি জিয়াউর রহমান বলেন, কাস্টমস শুল্ককর বৃদ্ধির আগে তাদের ১২ চাকার এক ট্রাক হিমায়িত মাছে ৬ লাখ ১২ হাজার টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। এখন নতুন নিয়মে তাদের অতিরিক্ত দেড় লাখ টাকা গুনতে হবে। এছাড়া ফলের ট্রাকে বেশি গুনতে হবে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। যা বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।
বন্দরে মাছ নিয়ে আটকে থাকা ট্রাকচালক মহিদুর রহমান জানান, কাস্টমস ছাড়পত্র না দেয়ায় ৩ দিন আটকে থেকে পণ্য নষ্ট হচ্ছে। একই কথা জানান সবজি বহনকারী ভারতীয় ট্রাক চালক উত্তম। আমদানি-রফতানিকারক উজ্বল বিশ্বাস জানান, এনবিআর নির্দেশনায় বলেছে কোনো পণ্যবাহী ট্রাকে পণ্যের ওজন কমবেশি হলে তা শতভাগ ওজন করে খালাস দেয়া যাবে। তবে কাস্টমস এনবিআরের ৪ নম্বর নির্দেশনা মানছে না। ফলে পণ্য খালাস নেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমদানিকারক আবুল হোসেন জানান, এনবিআরের নতুন নিয়মে পণ্যের শুল্কায়ন হলে যেমন আমদানি কমে যাবে তেমনি ফল, মাছ ও সবজির বাজার চড়া হবে। ৩ দিন পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় কেবল ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েননি, আমদানি কমায় সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের আমদানি-রফতানিকারক রেজাউল বিশ্বাস বলেন, বাংলাদেশ কাস্টমস পচনশীল খাদ্যদ্রব্য আমদানিতে নতুন করে শুল্ক বৃদ্ধি করায় তার প্রভাব পড়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। গত ৩ দিনে কোনো সমাধান না আসায় পণ্যবাহী অনেক ট্রাক খালাসের অপেক্ষায় পেট্রাপোল বন্দরে দাঁড়িয়ে আছে। এতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের আটকে থাকা ট্রাকের ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ বাবদ প্রায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা জাহিদ হাসান বলেন, নতুন নিয়মে পণ্য খালাস নিতে বাধা নেই। তবে কিছু কিছু আমদানিকারক শুল্ক বৃদ্ধির কারণে পণ্য খালাস নিচ্ছে না। তাদের দাবির বিষয়ে কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখছেন।