বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে বজ্রপাতসহ ১১৭ মিলিমিটার ভারি বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। শহরে বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি মসজিদেও ঢুকে পড়েছে পানি। অধিকাংশ রাস্তায় গোড়ালি, আবার কোথাও জমেছে হাঁটুপানি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শহরবাসী। অপরদিকে, ভেসে গেছে মাছের ঘের, পুকুর জলাশয়। মাঠের পর মাঠ ফসল পানির নিচে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজি চাফষরা। বৃষ্টি বাড়লে ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধির শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২ টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা বজ্রসহ তুমুল বৃষ্টি হয়।
যশোর বিমান বাহিনীর নিয়স্ত্রণাধীন আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, শুক্রবার বেলা ১১ টা থেকে যশোরের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন দেখা দেয়। বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে থেকে হাওয়া বজ্রপাতসহ গুড়িগুড়ি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। কিছুক্ষণ চলা এই বৃষ্টিপাত ভারি বৃষ্টিপাতে রূপ নেয়। থেমে থেমে বজ্রপাতের সঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাত হয় আড়াইটা পর্যন্ত। তবে পুরোপুরি বৃষ্টি বন্ধ হতে দেখা যায় বিকাল চারটার দিকে। বেলা সাড়ে ১২ টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ১১৭ মিলিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে তুমুল বৃষ্টিতে শহরের নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ রাস্তায় পানি জমে গিয়ে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। জমে থাকা পানিতে বাসিন্দাদেরও কষ্টের সীমা নেই।
শহরের খড়কী শাহ আবদুল করিম সড়কের বাসিন্দা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘সামান্য একটু বৃষ্টি হলেই আমাদের এই এলাকার বাড়িঘরে হাঁটু পানি জমে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। এই অঞ্চলের ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। দীর্ঘদিন ধরে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানালেও কোনো কাজ হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা বর্তমান পৌর প্রশাসক মহোদয়ের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি, তিনি যেন এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের কষ্টের দিকে নজর দেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মেনে নিলেও পৌর কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে বলে জানান শহরের বেজপাড়া চোপদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা জিল্লুর রহমান ভিটু। অবিলম্বে পরিকল্পিতভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে পানি অপসারণসহ এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
ওয়াপদা এলাকার মুদি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ও খোকন বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। আমাদের দোকনসহ পাশের অনেক দোকানের মধ্যেই পানি ঢুকে পেড়েছে। এতে আমাদের অনেক মালামাল নষ্ট হয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে।
ওয়াপদা বনবিথী লেনের বাসিন্দা আজগর আলী দেওয়ান তাজ বলেন, এলাকায় পানি জমে থাকায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, শুক্রবার রাত ৮ টার দিকে যাত্রী নিয়ে সরকারি মহিলা কলেজ সড়কের ভাঙা অংশ অতিক্রম করার সময় রিকশা নিয়ে উল্টে পড়েন চালক আমজাদ আলি। তিনি বলেন, রাতে পানিতে তলিয়ে থাকা ভাঙা গর্তে তাঁর রিকশা উল্টে পড়ে দুই যাত্রী সামান্য আহত হন। রিকশার মাডগার্ড গেছে ভেঙে। ক্ষোভ প্রকাশ করে রিকশাচালক আমজাদ বলেন, মহিলা কলেজ থেকে রাজ্জাক খলেজ অংশটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কে গর্ত থাকায় ও পানিতে তলিয়ে থাকায় যানবাহন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মসজিদের মুসল্লি আতাউর রহমান বলেন, পানি মসজিদের নিচ তলায় ঢুকে পড়ায় আমরা মসজিদের দ্বিতীয় তলায় নামাজ আদায় করছি।
পানি জমে এলাকাবাসীর ভোগান্তির বিষয়টি স্বীকার করে যশোর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর রাজিবুল আলম বলেন, এই সড়কের পানি নিস্কাশনের নালা বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে সড়ক থেকে পানি সরতে পারছে না। ফলে বাসা-বাড়িতেও ঢুকছে সড়কের পানি। তিনি তার নিজের বাড়ির সামনেও পানি জমে থাকার কথা জানান।
যশোর পৌরসভার পানি নিষ্কাশন বিভাগের প্রকৌশলী এসএম কামাল বলেন, জলাবদ্ধতার অনেকাংশ হ্রাস পেয়েছে। আমরা ড্রেনের পানি নিস্কাশনে যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলো অপসারণ করছি। বর্তমানে পৌর প্রশাসকের উপস্থিতিতে চাঁচড়া এলাকায় এস্কেভেটর দিয়ে পানি বের হওয়ার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে কাজ চলছে।
অপরদিকে, ভারি বর্ষণে তলিয়ে গ্রামঞ্চলের নিম্নাঞ্চলও। ভেসে গেছে মাছের ঘের, পুকুর জলাশয়। মাঠের পর মাঠ ফসল পানির নিচে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজি চাষীরা। বৃষ্টি বাড়লে ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধির শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, ‘গেল কয়েক মাস ধরে যশোরে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হচ্ছে; এতে সবজি চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আগাম শীতকালীন সবজি রোপন চলমান, সেই ক্ষেতগুলো এই বৃষ্টিতে পানির নিচে। বারবার চাষীদের রোপণ করা সবজির গাছ নষ্ট হওয়াতে সবজি উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। এতে বাজারে সবজির সংকট দেখা দিয়েছে। তার পরেও চাষীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে ; জমিতে বাধা পানি দ্রুত সরানোর’।