স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
জরুরী চিকিৎসা সেবা কিংবা বিদেশ ভ্রমণের জন্য মানুষের পাসপোর্ট প্রয়োজন পড়ে। সেই প্রয়োজন থেকেই পাসপোর্টের জন্য যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সকাল থেকে বিকেল অবধি ভিড় করে পাসপোর্ট প্রত্যাশী মানুষেরা। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা কিংবা ধীরগতিতে কাজ চলতে থাকা সেবা প্রত্যাশী এই মানুষগুলোকে সেখানে নানান পরিস্তিতির শিকার হতে হয়। নতুন পাসপোর্ট করতে আসা মানুষদের ভোগান্তি থাকে পুরাতনদের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। তবে দালাল ধরে যারা আসে টাকা বেশি খরচ হলেও তাদের সময় এবং ভোগান্তি নেই বললেই চলে। দালাল ছাড়া পাসপোর্ট করতে আসাদের কাগজপত্রে বিভিন্ন অসংগতি দেখিয়ে হয়রানি করা হয়। হয়রানির শিকার হয়ে কোন কূল খুঁজে না পেয়ে অনেকে হতাশ হয়ে বাসায় ফেরে। দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের থেকে এমন হয়রানির শিকার মানুষগুলো অভিযোগ জানানোর জায়গা টুকুও না পেয়ে বাধ্য হয়ে দালালের চক্করে পড়ে।
রোববার সকালে সরেজমিন যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, প্রবেশ পথেই পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছে পাসপোর্ট করতে আসা মানুষ। দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হচ্ছেন অনেকেই। এখানে দেখা গেল ভিন্ন একটি চিত্রও। অনেকেই বেলা ১২ টার পর থেকে অবাধে যাতায়াত করছেন অফিসের ভিতরে। যাদের প্রবেশে কোনো বাধ্যবাধকতা নেয়। বেলা ১০ টায় গেট পার হয়ে ভিতরে প্রবেশ করেই দেখা গেল লম্বা লাইন দিয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। সকলের লক্ষ্য ৫ ও ৬ নম্বর কাউন্টারে আবেদন পত্র জমা দিয়ে ডাটা এন্ট্রি করা। মূলত ৬ নম্বর কাউন্টারে পুরুষ আবেদন পত্র জমা দেন। ৫ নম্বর কাউন্টার মহিলা, বৃদ্ধ, অসুস্থ ও বীরমুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্ধ। সেখানে আবেদনপত্র জমা নেয়া রবীন্দ্রনাথ নামে এক কর্মকর্তাকে একজন নতুন আবেদনকারির আবেদনপত্র ছুড়ে ফেলতে দেখা গেল। অভিযোগ আছে দালাল ও কর্মকর্তাদের সংকেত না থাকলে সেই সব আবেদন পত্রে ভুল ত্রুটি ধরা হয় ৫ ও ৬ নম্বর কাউন্টার থেকে। এখানেও লাইনের সিরিয়াল মানা হয় না। ৬ নম্বর কাউন্টার থেকে যার আবেদন পত্র ছুড়ে ফেলা হয় তার নাম শাহিনুর রহমান। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করে ব্যাংকের মাধ্যমে নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করে তিনি আবেদনপত্র জমা দিতে এসেছেন। তার আবেদনপত্রের কাগজপত্র নাকি ঠিকমত সাজানো হয়নি বলে ওই কর্মকর্তা তা ছুড়ে ফেলে দেন।
৫ ও ৬ নম্বর কাউন্টারের কাজ শেষ হলে পুনরায় লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে ছবি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার জন্য। ১০২ ও ১০৩ নম্বর কাউন্টারে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ছবি তুলছেন নারী ও পুরুষ। সেখানেও দেখা যায় গোজামিল। আনসার সদস্যরা তাদের লোক ঢুকাচ্ছেন কোনো সিরিয়াল ছাড়া। যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের।
ঝিকরগাছা থেকে পাসপোর্ট করতে আসা সত্যপদ রায় বলেন, সকাল ৯ টায় তার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে স্ত্রীর পাসপোর্ট জমা দিতে এসেছেন। বেলা সাড়ে ১২ টা নাগাদ তিনি তার কাজ শেষ করতে পেরেছেন। দালাল ছাড়া নিজে নিজে পাসপোর্ট করতে এসে প্রত্যেক কাউন্টারে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে তার। এর আগে দালালের মাধ্যমে তার নিজের পাসপোর্ট করেছিলেন। তখন এত সমস্যা হয়নি। আবেদনপত্রে সংকেত দেওয়া ছিলো। সেই সংকেত দেখে তার কাগজপত্র তখন দ্রুত ছেড়ে দিয়েছিলো বলেও তিনি জানান।
কেশবপুর থেকে আসা শাহিনুর রহমান বলেন, নিজে আনলাইনে আবেদন করে ৫৭শ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে এসেছেন। আবেদন পত্র জমা দিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন তিনি। এমনকি ছবি তুলতে গিয়েও তার সিরিয়াল অভারটেক করে অনসার সদস্যরা অন্য লোক ঢুকাচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে যশোর পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক মাকসুদুল রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে খুদে বার্তাসহ একাধিক বার কল করা হলেও তিনি ফোন কল রিসিভ করেনি।