কোটা আন্দোলন বিরোধী বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল

বাংলার ভোর প্রতিবেদক
ডা. মাহমুদুল হাসান যশোরের সিভিল সার্জন। এই পদে তাকে পদায়নের জন্য আওয়ামী লীগের তিনজন সংসদ সদস্য ডিও লেটার দেন। তিনি আওয়ামী লীগের অনুগত সেটি প্রমাণ হিসেবে একাধিক সংসদ সদস্যের ডিও দেয়া হয়। যোগদানের পর তিনি শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই নিজেকে জাহির করতেন। জুলাই-আগস্টের কোটা বিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে ও সরকারের পক্ষে জনমত গড়তে সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে একাধিক কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ওই কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বিরোধী বক্তব্য দিয়ে চিকিৎসকদের সরকারের পক্ষে উজ্জীবিত করেছেন।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসানের বির্তর্কিত ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই বিতর্কে আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া এক মিনিট ১৯ সেকেণ্ডের একটি বক্তব্যের ভিডিও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়। তবে পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে ভোল পাল্টে ফেলেছেন ডা. মাহমুদুল হাসান। তিনি এখন নিজেকে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক নেতা দাবি করছেন। এর মাধ্যমে তিনি যশোরের সিভিল সার্জন পদে বহাল তবিয়তে থাকার চেষ্টা করছেন। অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সারাদেশে যখন টালমাটাল। তখন এই আন্দোলনের বিরোধিতা করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে জেলার চিকিৎসকদের নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন তিনি সিভিল সার্জন। ওই বিক্ষোভ সমাবেশের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসানকে বলতে শোনা যায়-আন্দোলনকারীদের তিনি ফ্যাসিবাদি, জঙ্গি বলে আখ্যা দেন। তিনি দেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে যে হত্যাযজ্ঞ ভাংচুর চালানো হয়েছে এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা কোটা আন্দোলনের প্রতিটা দাবি মেনে নিয়েছেন। এসব শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলনের নামে এক দফা দাবি উঠিয়েছে। সেটা কখনো আমরা মেনে নিতে পারি না। এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই, এবং এই শক্তিকে আমরা ঘৃণা করি। এই শক্তিকে আমরা প্রতিহত করবো। সব স্তরের চিকিৎসকের এক দফার দাবির বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হওয়ার অনুরোধ জানান সিভিল সার্জন।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১১ জুন যশোর জেলার সিভিল সার্জন পদে যোগদান করেন মাহমুদুল হাসান। এর আগে তিনি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ছিলেন। যশোরের সিভিল সার্জন পদে পদায়নের জন্য তিনি তৎকালীন কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসান পলাশ, যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ও কেশবপুর আসনের সাবেক সংসদ আজিজুল ইসলামের ডিও লেটার নেন। তিন সংসদ সদস্যের সুপারিশেই তিনি সিভিল সার্জন পদায়ন পান। সিভিল সার্জনের দায়িত্ব নিয়ে তিনি জেলার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সাথে আওয়ামী লীগের প্রভাব প্রদর্শন করতেন। সাবেক সাংসদ বিপ্লব হাসান পলাশের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি প্রভাব বিস্তার করতেন। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তিনি জেলা ও উপজেলার ডায়গস্টিক ও ক্লিনিক থেকে লাইসেন্স নবায়নের নামে মোটা টাকা ঘুস নিতেন। তার হাত ধরেই মোটা টাকার বিনিময়ে বিগত সময়ে নানা অনিয়মের অভিযোগে বন্ধ হওয়া ক্লিনিকগুলো নতুন করে চালু হয়েছে। এছাড়া জেলা উপজেলার স্বাস্থ্যখাতের আউটসোসিং নিয়োগ দেয়ার নামে নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন।

সিভিল সার্জন অফিসের একাধিক সূত্রে জানা যায়, যশোর সিভিল সার্জন অফিস ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসমূহে ১১-২০ তম গ্রেডে (৩য় ও ৪র্থ শ্রেণি) ১৯৯ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। অভিযোগ আছে, নিয়োগ শেষ না হলেও এসব নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য আট উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে মোটা টাকার মাধ্যমে বাণিজ্য শেষ করেছেন ডা. মাহমুদুল হাসান।

এদিকে, আওয়ামী লীগের দোসরের ভূমিকায় থাকা এই সিভিল সার্জন ৫ আগস্টের পর নিজের ভোল পাল্টানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আগে অফিসে ও আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতাদের কাছে নিজেকে আওয়ামী চেতনার পরিচয় দিলেও; রাজনীতি পটপরিবর্তনের পর তিনি ছাত্রজীবনে শিবির করতেন বলে পরিচয় দিচ্ছেন। সম্প্রতি সিভিল সার্জন মাহমুদুল হাসানের আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকাকালীন কার্যক্রম, বর্তমান সময়ে তার ভোল পাল্টানোর নানা তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে সমালোচনা করছেন।

সম্প্রতি আলোচিত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক ও চিকিৎসক পিনাকী ভট্টাচার্য তার ফেসবুকে ছাত্র আন্দোলনের সময়ে বিরোধীতা করার এমন বক্তব্য শেয়ার করে সমালোচনা করেন। পিনাকী তার ফেসবুকে লিখেছেন, যশোরের বর্তমান সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান, হ্যান্ড মাইক হাতে। শান্তি সমাবেশে তার বক্তব্য। শোনেন আপনারা। এখন নাকি উনি বিপ্লবী সাজিছেন। উনি এখন দাবি করতেছেন, উনি নাকি ছাত্রজীবনে শিবির করতেন। ফ্যাসিবাদের দোসর ও গণশত্রুদের ডেটাবেইজ হইতেছে। কাউকে রঙ পাল্টাইয়া বিপ্লবী সাজতে দেয়া হবে না।

রিপন হোসেন নামে আরেক ব্যক্তি ফেসবুকে লিখেছেন, হাসিনার পতনের আগে জামায়াত বিএনপি ছাত্র-জনতাকে সন্ত্রাস-জঙ্গি বলে এখন যশোরের গণঅধিকার আর কথিত সমন্বয়কদের সাথে অভিযান করতেছেন আওয়ামী ডাক্তার যশোরের সার্জন মাহমুদুল হাসান। কেন আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছে না, কেন হাসপাতালগুলোতে এখনো নিয়োগ বাণিজ্য করছে এগুলোর কারণ আপনাদের হাতে ছেড়ে দিলাম ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের সিভিল সার্জন মাহমুদুল হাসান জানান, আমি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করেছি। সেখানে শিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম। গত সরকারের আমলে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) নেতারা আমাকে দিয়ে জোর করে কোটা বিরোধী ছাত্রদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে বাধ্য করেছে। আর আমি দুর্নীতি করেছি কেউ প্রমাণ করতে পারবেনা। আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে।

Share.
Leave A Reply

Home
News
Notification
Search
Exit mobile version