বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে তারুণ্যের উৎসব সেমিনার মঞ্চে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধির বসার চেয়ার না রাখায় বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন না করায় অনুষ্ঠান বয়কট করে বুধবার সন্ধ্যায় যশোর শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় তারা জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। পরে সার্কিট হাউজে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার। তার আশ্বাসের পর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করেন।
জানা গেছে, বুধবার বিকেলে যশোর শিল্পকলা একাডেমিতে ‘তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানকে ঘিরে শিল্পকলাতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনার বিভিন্ন ছবি প্রদর্শনের আয়োজন করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। সন্ধ্যা ৫টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হলে জেলা প্রশাসক ও অনুষ্ঠানের সভাপতি আজাহারুল ইসলাম আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি, বিএনপি ও জামায়াতের প্রতিনিধিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ মঞ্চে উঠেন। তবে মঞ্চে বসার চেয়ার রাখা হয়নি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোন প্রতিনিধির। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। এরপর অনুষ্ঠান স্থলের পাশে জুলাই-আগস্ট শহীদদের ছবি প্রদশর্নীর থেকে সকল ছবি খুলে নিয়ে স্থান ত্যাগ করেন। এরপর শিল্পকলা একাডেমির প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসককে উদ্দেশ্য করে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। সেখান থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ডিসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভের সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের যুগ্ম সদস্য সচিব জান্নাতুল ফুয়ারা অন্তরা বলেন, ‘যে অনুষ্ঠান তরুণদের নিয়ে; সেই অনুষ্ঠানে উপেক্ষিত সেই তরুণরা। এই জুলাই বিপ্লব এনেছে তো; এই তরুণরা। আর এই তরুণদের অধিকাংশ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। সেই জায়গা থেকে আজ আমাদের সাথে যে আচরণ করা হলো; সেটা অগ্রহণযোগ্য। অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতারা জায়গা পেয়েছে; কিন্তু জুলাই আগস্ট বিপ্লবে যা নেতৃত্ব দিয়েছে তারা উপেক্ষিত কেন?
সংগঠনটির মুখপাত্র ফাহিম আল-ফাত্তাহ বলেন, ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বিন্দুমাত্র মূল্যায়ন করা হয়নি। আমাদের রক্তের উপরে বসে এইসব কর্মকর্তা বড় বড় চেয়ারে বসেছে; সেখানে আমাদের কেন অবমূল্যায়ন করা হলো ? এই ডিসিকে আমাদের প্রশ্ন- ‘আপনারা যে তারুণ্যের বাংলাদেশ গড়বেন; সেটা কি তরুণদের বাদ দিয়ে? কাদের মতামত নিয়ে আগামীর বাংলাদেশ গড়বেন। যেহেতু আমাদের মূল্যায়ন করা হয়নি; তাই আমরা এই প্রোগ্রাম বয়কট করেছি।
এদিকে, সন্ধ্যার পরে শিল্পকলা একাডেমি চত্বর থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা সার্কিট হাউজে সমবেত হন। এরপর সার্কিট হাউজ সভাকক্ষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার। শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। তারা অভিযোগ করেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যদের বাদেই তারুণ্যের উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠান মঞ্চে শিক্ষার্থীদের জন্য কোন চেয়ার দেয়া হয়নি। অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের জন্য চেয়ার সংরক্ষিত থাকলে, ছাত্রদের জন্য কেন থাকবে না। শুধু এই অনুষ্ঠান নয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করছে না। সরকারি বরাদ্দ ও সুযোগ সুবিধা বন্টনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। তাদেরকে মূল্যায়ন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্যের জবাবে বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার বলেন, আপনাদের সাথে আমি একমত। আপনাদের ছাড়া আজকের অনুষ্ঠান অসম্পূর্ণ থেকে গেল। আপনারা ফের তারুণ্যের উৎসবের আয়োজন করেন, আমি প্রধান অতিথি হিসেবে আসবো। একই সাথে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন, সরকারের বিভিন্ন কাজে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির (টিসিবি পণ্য, ত্রাণ বিতরণ) বরাদ্দ বন্টনে তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
বিভাগীয় কমিশনারের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা তাদের বয়কট আন্দোলন আপাতত স্থগিত করেছেন বলে জানান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের মুখপাত্র ফাহিম আল-ফাত্তাহ।