বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের মণিরামপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই পরিবারের সদস্যদের নামে ৪ থেকে ৬টি পর্যন্ত ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ৬টি ঘর বরাদ্দ পেয়ে অবাককাণ্ড ঘটিয়েছে একটি পরিবার। ঘরের মেঝেতে লাগিয়েছেন টাইলস। দেয়ালে ঝুঁলছে তিনটি এসি ও রঙিন টেলিভিশন। দুই স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বিলাসী জীবনযাপন করছেন আলতাফ হোসেনের পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে মণিরামপুর উপজেলার মধুপুর গ্রামের আশ্রয়ণপ্রকল্পে। বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে কি না খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তথ্যমতে, ২০২১ সালে বরাদ্দ দেয়া দুই শতক জমির উপর নির্মিত আশ্রয়নের প্রতিটি ঘরে দুটি বেডরুম, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট ও বারান্দা রয়েছে। একটি ঘর নির্মাণে সরকারের খরচ হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মণিরামপুর উপজেলার মধুপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২২টি ঘর। সাদা রঙের ঘরগুলোর মধ্যে ব্যতিক্রম উত্তর প্রান্তের ৬টি ঘর। দুই বছর আগে গোলাপী রঙের ঘরগুলোর বারান্দা ঘেরা হয়েছে গ্রিল দিয়ে, মেঝে মোড়ানো হয়েছে টাইলসে, তিনটি ঘরে লাগানো হয়েছে দেড় টনের তিনটি এসি। ঘরে রয়েছে মূল্যবান আসবাবপত্র, টেলিভিশ ও ফ্রিজ। এমনকি উঠানটিও করা হয়েছে পাকা ঢালাই। দুই স্ত্রী, সন্তান ও শ্যালিকা মিলে ১২ সদস্য নিয়ে এই ৬ ঘরে বসবাস করছেন আলতাফ হোসেন নামে এক ব্যক্তি। অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ এসব ঘর বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। এরপর নিজেদের মত করে সাজিয়েছেন। তার বিলাসী জীবনযাপন নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়।
তবে ভিন্ন কথা বলছেন আলতাফ হোসেন। তার দাবি, আশ্রয়ণের এই জমিতে তিনি ২০০৮ সাল থেকে সপরিবারে বসবাস করতেন। ২০২১ সালে ওই জমিতে (৭২ শতক) আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। তাকে উচ্ছেদ করার নির্দেশনা দেন ইউএনও। একপর্যায়ে ইউএনও প্রতিশ্রুতি দেন তার পরিবারের যতগুলো ঘর লাগবে, এই প্রকল্প থেকে দেয়া হবে। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইউএনও স্যার আমাকে ৬টি ঘরই দিয়েছে। সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকছি। তিনি বলেন, প্রকৃত ভূমিহীন হিসবেই তারা ঘর পেয়েছেন; স্বচ্ছলতা ফেরায় শখ পূরণ করেছেন। তার দুই ছেলে ঢাকায় চাকরি করেন। তারাই ঘরগুলো সংস্কার করেছে। ঘরে টাইলস, ফ্রিজ, এসি লাগিয়েছে। এটা তো দোষের কিছু না।’
শুধু আলতাফ হোসেন নয়, তার মত এজাজুল হক মধু নামে আরেক ব্যক্তি বাগিয়েছেন চারটি ঘর। এজাজুল চারটি ঘর নিলেও সেখানে থাকেন না। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আধা কিলো দূরে তার নিজ বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন তিনি। স্থানীয়রা জানান, চারটি ঘরে মাঝে মধ্যে একটি ঘরে আসেন তিনি। বাকিগুলো তালাবদ্ধ থাকে।
এ বিষয়ে এজাজুল বলেন, চারটি ঘরের মধ্যে একটিতে মাঝে মধ্যে থাকেন তিনি। বাকি তিনটির মধ্যে একটি তার মেয়ে, ভাগ্নি ও ভাইপোকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ থাকেন না এখানে।’
এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরও তিনটি ঘর তিনজন পেলেও তারা কেউ সেখানে বসবাস করেন না। জমির দলির ও বাড়ির কাগজপত্র বুঝে নিয়ে তারা অন্য জায়গা বসবাস করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত সরকারের সময়ে প্রভাব খাটিয়ে যে যার মতো ঘর বাগিয়ে নিয়েছে। ঘর বরাদ্দের সময় সরকারি কর্মকর্তারা কারো কথা শোনেনি। তারা যথেচ্ছাচার করেছেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা পেলে নেয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।
##