বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় খারাপ ফল করা শিক্ষার্থীরা। রোববার বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে শিক্ষা বোর্ডে অবস্থান নেন বিভিন্ন কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী। দাবি আদায়ে তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। তাদের অভিযোগ, বোর্ড কর্তৃপক্ষ মনগড়া ফল দিয়েছে। যশোর বোর্ডের ইংরেজিসহ বিভিন্ন প্রশ্ন সহজ আসার পরও গণহারে ফেল করানো হয়েছে। সিলেট বোর্ডে মাত্র দুই বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা হলেও তাদের সবাইকে পাস করানো হয়েছে। যশোর বোর্ডে সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন করা হয়নি।
সাবজেক্ট ম্যাপিংও সঠিকভাবে করা হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় যশোর বোর্ডের ফল খারাপ করা শিক্ষার্থীরা আবেদন ও প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে না। এ সময় ফলাফলে বৈষম্য দূর এবং পুনরায় সাবজেক্ট ম্যাপিং করে নতুনভাবে ফল প্রকাশের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
এর আগে থেকে সকাল থেকে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার কলেজ থেকে এসব শিক্ষার্থীরা বোর্ড প্রাঙ্গনে জড়ো হয়। সাড়ে ১১ টার দিকে মিছিল সহকারে বোর্ডে প্রবেশ করতে গেলে প্রধান ফটকে তালা মেরে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে তালা ভাঙ্গার চেষ্টা ও শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হলে কর্তৃপক্ষই তালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতে দেন। একপর্যায়ে বোর্ড সচিব প্রফেসর আব্দুর রহিম গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু তারা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে চান।
শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান এবং সেখানে বিভিন্ন দাবিসমূহ নিয়ে বিক্ষোভ ও স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্রনেতাদের নিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মর্জিনা আক্তার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললেও তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত অবস্থান ও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অটল থাকেন। বিকেলেও সেখানে বিক্ষোভ চলছিল। দাবি আদায়ে তারা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
তাবাসসুম তাসফিয়া নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সিলেট বোর্ডে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা না দেয়া সত্ত্বেও তাদের প্রত্যেকটা সাবজেক্টে প্লাস এসেছে, তাহলে আমাদের সঙ্গে কেন বৈষম্য করা হলো। জানতে পেরেছি, অনেক থানায় পরীক্ষার খাতা পুড়ে গেছে, তাহলে কিসের ভিত্তিতে পরীক্ষার খাতার মূল্যায়ন করা হলো? পরীক্ষার সঠিক মূল্যায়ন করা হলে যশোর বোর্ডে বিভিন্ন বিষয়ে ফেল আসতো, কিন্তু ইংরেজি বিষয়ে একচেটিয়া ফেল এসেছে।’
আলমডাঙা সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী শাকিব মাহমুদ বলেন, ‘আমরা অবিলম্বে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে ম্যাপিং পদ্ধতিতে পরীক্ষার খাতা পুনঃমূল্যায়ন করে আবার ফলাফল চাই।’
বিক্ষোভের প্রায় দেড় ঘণ্টার মাথায় যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মর্জিনা আক্তার ঘটনাস্থলে যান। একই সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর একটি দলও সেখানে উপস্থিত হয়। একপর্যায়ে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো উল্লেখ করে বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা। আন্দোলনকারীদের দাবি অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মর্জিনা আক্তার। তিনি বলেন, পরীক্ষায় খারাপ ফল করা কিছু শিক্ষার্থী আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেছে। অল্প কিছু শিক্ষার্থী বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করছে। তারা পরীক্ষা খারাপ দিয়ে খারাপ ফলাফল করলে বোর্ড কর্তৃপক্ষের তো কিছু করার নেই। তারা আমাদের কিছু লিখিত দাবি জানিয়েছে। বিষয়টি আন্তঃবোর্ডের চেয়ারম্যানকে পাঠাবো; আমরা নির্দেশনা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ প্রসঙ্গত, গত ১৫ অক্টোবর চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। যশোর বোর্ডে পাসের হার ৬৪ দশমিক ২৯। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯ হাজার ৭৪৯ জন শিক্ষার্থী।