নীতিনিষ্ঠ সংগ্রামী মার্ক্সবাদী দাউদ হোসেন শুক্রবার সকালে ঢাকার নয়াটোলার বাসায় মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। মৃত্যুর সময় তিনি স্ত্রী, ১ পুত্র, ২ কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রখে গেছেন। আজ শনিবার সকাল ১০টায় ঝিকরগাছার বায়সা হাই স্কুল মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
দাউদ হোসেন ১৯৪৪ সালের ২ মার্চ যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার বায়সা গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্ম নেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়।
১৯৪৯ সালে গ্রামীণ পাঠশালায় হাতেখড়ি। বাল্য ও কৈশোর কেটেছে শার্শা উপজেলার নাভারণ রেলবাজারে। এখানকার বুরুজবাগান প্রাইমারি ও হাইস্কুলে শিক্ষালাভ।
১৯৫৭-এ বিদ্যালয়ে পড়াকালে স্কুলের সহপাঠীদের নিয়ে স্কুল প্রাঙ্গণে ভাষা শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ শহীদ মিনার তৈরি করেন।
১৯৬০-এ বুরুজবাগান হাই স্কুল থেকে প্রতিটি বিষয়ে রেকর্ড সংখ্যক নম্বর পেয়ে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন।
১৯৬২ সালে যশোরের মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে আইএসসি পাশ এবং কলেজে অধ্যয়নকালে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে হাতেখড়ি নেন। এ বছরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা (অনার্স) বিভাগে ভর্তি হন। এ সময়েই স্বাধীন পূর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখার শুরু।
১৯৬৩-৬৪তে রবীন্দ্র চর্চা নিষিদ্ধের প্রতিবাদে গড়ে ওঠা আন্দোলন ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ।
১৯৬৫ তে পাকিস্তানের নাগপাশ থেকে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে সমমনাদের নিয়ে, পূর্ববাংলা জাতীয় মুক্তিসংস্থা গঠন। ওই বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের মার্শাল-‘ল’ চলাকালে বর্তমান যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা গ্রামে ‘পূর্ববাংলা জাতীয় মুক্তিসংস্থা’র গোপন সম্মেলনের আয়োজন করেন। ১৯৬৭ তে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৬৮ তে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামকে সমাজবিপ্লবের পথে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে শ্রমিক-কৃষক কর্মীসংঘে যোগদান করেন।
১৯৬৯-এ মুক্তিযুদ্ধের ড্রেস রিহার্সাল খ্যাত ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে জামুস সদস্যগণ এবং কর্মীসংঘ দাউদ হোসেনের নেতৃত্বে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে এবং ছয় দফা ও এগারো দফার সমর্থনে কৃষক সমিতির মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকায় জনমত সংগঠিত করে।
১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শতধাবিভক্ত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে ক্রিয়াশীল নানামুখি দল-উপদলের সমন্বয়ে কলকাতায় বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম সমন্বয় কমিটি গড়ে তুলতে শ্রমিক-কৃষক কর্মীসংঘের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং সমন্বয় কমিটির অন্যতম সংগঠক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের কালপর্বে জাতীয় মুক্তিসংস্থার সকল নেতা-কর্মী স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এদিকে তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। এক শোক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, বিপ্লবী বুদ্ধিজীবী দাউদ হোসেনের পরলোকে বাংলাদেশের প্রগতিশীল আন্দোলন, বাম রাজনীতি এবং নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চার সংগ্রামের জন্য এক গভীর শোক ও অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
দাউদ হোসেন ছিলেন এক অগ্নিমনস্ক, নিভৃতচারী কিন্তু দৃঢ়চেতা তাত্ত্বিক কর্মী।
তাঁর অনুবাদকর্ম রাশিয়ায় পুঁজিবাদের বিকাশ-বাংলার মার্কসবাদী চিন্তার জগতে এক অমূল্য সংযোজন।
নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চা যশোর জেলার পক্ষে খবির শিকদার বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।-প্রেস বিজ্ঞপ্তি
