বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার গভীর রাতে যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ূর রহমান ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার (৩০৬ নাম্বার) কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। রাতভর নির্যাতনের পর ওই শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম শাহরীন রহমান প্রলয় (২৪)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রাবাসের আবাসিক বাসিন্দা। তিনি গুরুতর আহত অবস্থায় ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বুধবার রাতে হাসপাতালে ওই শিক্ষার্থীকে দেখতে যান উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন। এ সময় তিনি দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা যায়, গত ৩ জুন সোমবার ক্যাম্পাসে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে শাহরীনকে মারধর করেন শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান ২০২৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার অনুসারী শাহীনুর রহমান। এই ঘটনায় শাহীনুরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দেন শাহরীন। ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার রাত দুইটার দিকে ছাত্রাবাসের শাহরীনের কক্ষ থেকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে ছাত্রলীগের সভাপতির কক্ষে নিয়ে যায়। এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতিসহ তার কয়েকজন অনুসারীরা উপস্থিত ছিলেন। সভাপতি সোহেল রানার কক্ষে নিয়ে যেয়ে শাহরীনকে এলোপাতাড়ি মারধর ও রড দিয়ে পিটানো হয়। রাত দুইটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত দফায় দফায় নির্যাতন করা হয়েছে দাবি ওই শিক্ষার্থীর। এর পর ঘটনাটি যাতে ভুক্তভোগীরা কাউকে জানাতে না পারে, সে কারণে শাহরীন ও তার রুমমেট সহপাঠী আমিনুল ইসলামের ফোন কেড়ে নেয় অভিযুক্তরা। একপর্যায়ে ঘটনা জানাজানির ভয়ে বুধবার সকালে মোটরসাইকেলেযোগে কালিগঞ্জ বারোবাজার গ্রামের বাড়ি চলে যান তিনি। পরে স্বজনরা তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। দুপুরে শাহরীনের মায়ের মুঠোফোনে বিষয়টি যাতে কাউকে না জানানো হয় বলে হুমকি দেয়া হয় অজ্ঞাত নাম্বার থেকে। এমনকি এই বিষয়ে কাউকে জানালে বাড়িতে বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার হুমকিও দেয় দৃবৃর্ত্তরা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শাহরীন জানান, ‘সোমবারের ঘটনায় আমাকে মাথা ফাটিয়ে দেয়ায় ঘটনায় আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। এই ঘটনায় ঘুম থেকে তুলে রাত দুইটাই ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা ভাইয়ের নির্দেশে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ কর্মী আমিনুল ইসলাম ও সিয়াম। সভাপতির কক্ষে প্রবেশ করার সাথে সাথেই ছাত্রলীগ নেতা আশিকুজ্জামান লিমন, ইসাদ, রায়হান রহমান রাব্বি, বেলাল হোসেন, শেখ বিপুল, রাইসুল হক রানাসহ প্রায় ১০-১৫ জন আমার উপর অতর্কিত মারধর শুরু করে। এ সময় রুমের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ি। তখন তারা আমাকে পা দিয়ে লাথি মারতে থাকে। এ সময় তারা আমাকে বলতে থাকে কেনো প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিস? সে সময় তারা আমার মোবাইল কেড়ে নেয়। একপর্যায়ে তারা আমাকে মোটা রড দিয়ে আমার সারা শরীরে পেটাতে শুরু করে। ভোর পাঁচটা পর্যন্ত চলে দফায় দফায় এমন নির্যাতন। এমন সময়ে আমার মনে হচ্ছিল আমিও মনে হয় বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো মরে যাবো।’
প্রাণে বাঁচতে আমি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা ভাইয়ের পা জড়িয়ে ধরে বাঁচার আকুতি জানায়। এ সময় সোহেল রানা বলেন- ‘কালকের মধ্যে অভিযোগ তুলে নিবি, না হলে তোকে গুলি করে মারবো।’ এ সময় সোহেল আমাকে বুকে লাথি মেরে আমাকে মেঝেতে ফেল দেয়। ভোর হওয়ার সাথে সাথে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি চলে যাবি বলে নির্দেশ দেয়।
হাসপাতালে কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমার ও আমার পরিবার নিয়ে হুমকির মুখে আছি। অভিযুক্তরা আমার পরিবারের উপর বোমা মারাও হুমকি দিচ্ছে। এই ঘটনায় বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ‘ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব থাকে। এসব গ্রুপিংয়ে বারবার আমার নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, ক্যাম্পাসে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে যা হয়েছে, সেটা মাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। ঘটনার দিন আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম না। যশোরের বাইরে ছিলাম। মঙ্গলবার রাত তিনটার দিকে আমি ছাত্রাবাসে প্রবেশ করেছি। আমরা বিরুদ্ধে যা অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটা রাজনীতিকভাবে আমি প্রতিহিংসার শিকার।’
এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমার কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছে। তাকে এতই ভীতসন্ত্রস্ত মনে হচ্ছিল যে কথা বলতে পারছিলো না। তাকে বলেছি লিখিত অভিযোগ দিতে। অভিযোগ পেলে তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত রিপোর্ট শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’