# নির্বাচন ঘিরে নেতাকর্মীরা চাঙা
# রাজপথের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় সরগরম
# শেষে মুহূর্তে সদরে থাকতে পারে নতুন চমক
শেখ জালাল
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে সামনে রেখে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী। ইতোমধ্যে সারাদেশে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দলটি। সেই তালিকায় যশোরের ৬টি আসনের চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম প্রকাশ করা হয়েছে। দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়িয়েছে দলটি। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রকাশ্য কর্মসূচিতে জামায়াতের পালে হাওয়া লেগেছে। নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ভোটের মাঠে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে প্রচারণা।
৬টি আসনে চূড়ান্ত প্রার্থীরা হলেন- যশোর-১ (শার্শা) আসনে মাওলানা আজিজুর রহমান, যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে ডা. মোসলেহ উদ্দীন ফরিদ, যশোর-৩ (সদর) আবদুল কাদের, যশোর-৪ (বাঘারপাড়া, অভয়নগর ও বসুন্দিয়া) আসনের অধ্যাপক গোলাম রসুল, যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক ও যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে অধ্যাপক মোক্তার আলী। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জামায়াতে ইসলামীর যশোর জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল। তিনি বলেন, দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা করা হয়েছে। নির্বাচনের ব্যাপারে প্রার্থীদের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা নিজ নিজ এলাকায় রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। অংশ নিচ্ছেন সামাজিক কর্মসূচিসহ নানা অনুষ্ঠানেও। তবে সদর আসনে শেষ মুহূর্তে প্রার্থী রদবদল হতে পারে।’
জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই যশোরে জামায়াতের সাংগঠনিক পুনর্গঠন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এর আগের পৃথক তিনটি জেলা কমিটিকে একটিতে পরিণত করা হয়েছে। ১১টি সাংগঠনিক থানা, আটটি পৌরসভা ও ৯৩টি ইউনিয়ন কমিটি গঠন শেষ হয়েছে। এদিকে, জেলার সর্বত্রই দলটি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাতে নির্বাচনী প্রচাণায় জামায়াত মাঠে রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা সদরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলীয় কার্যালয় খোলা হয়েছে। উপজেলা, ইউনিয়ন ও তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতেও কার্যালয় খোলা হয়েছে। মূল দলের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটিও পুনর্গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি কার্যালয় প্রতিদিন নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সরব থাকতে দেখা যাচ্ছে। জামায়াত তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও দায়িত্বশীলরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ছোট ছোট গ্রুপে মানুষকে উপস্থিত করে আলোচনা করছেন।
বিভিন্ন দিবসে বা আয়োজনে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের সেবায় নানা সহায়তা দিচ্ছেন। যোগ দিচ্ছেন নানা সামাজিক অনুষ্ঠানেও। জামায়াতের নারী সদস্যরাও এসব কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর-১ (শার্শা) আসনের প্রার্থী জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান। তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ আফিল উদ্দিনের কাছে মাত্র পাঁচ হাজার ভোটে হেরেছিলেন। দিন বদল হওয়ায় ফের আজিজুরে ভরসা করছে জামায়াত।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনটি দীর্ঘদিন জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীকে ছাড় দিয়ে আসছিল বিএনপি। চারটি নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীই এ আসনে জোটের মনোনয়ন পেয়েছেন। একবার বিজয়ীও হয়েছেন। আপাতত সমীকরণে জামায়াতের মূলপ্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে বিএনপি সামনে রয়েছে। নিজেদের পুরোনো আসন পুনরুদ্ধারে প্রার্থী বাছাইয়ে কৌশলী হয়েছে জামায়াত। এতদিন জামায়াতের একক প্রার্থী হিসাবে মাঠে ছিলেন মাওলানা আরশাদ আলী। সম্প্রতি তাকে সরিয়ে শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোসলেহ উদ্দীন ফরিদকে মাঠে নামানো হয়েছে। জামায়াতের নতুন প্রার্থী বাছাইকে চমক হিসাবে দেখছেন নেতাকর্মীরা।
জেলার ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত যশোর-৩ (সদর)। জেলা সদরের এ আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী সরকারি এমএম কলেজের সাবেক ভিপি আব্দুল কাদের। এক্ষেত্রে সাবেক ছাত্রনেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসেবে আব্দুল কাদেরের পরিচিতিকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন। এ আসনে জামায়াতকে লড়তে হবে বিএনপির প্রভাবশালী প্রার্থী খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এ অঞ্চলের গণমানুষের নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের সাথে। এ ক্ষেত্রে জামায়াত প্রার্থী বাছাইয়ে কৌশলী হয়েছে। এতদিন জামায়াতের একক প্রার্থী হিসাবে মাঠে ছিলেন সাবেক ভিপি আব্দুল কাদের। জামায়াত নেতারা জানিয়েছেন তাকে সরিয়ে নতুন কাউকে মাঠে নামানো হতে পারে। জামায়াতের নতুন প্রার্থী বাছাইকে চমক থাবকে বলে জানান তারা।
তবে কে সে প্রার্থী তার নাম এখনই তারা প্রকাশ করছে না। আগামী দুই-তিন দিনে মধ্যে তা প্রকাশ্যে আসবে বলে জানিয়েছেন জেলা জামায়াতের নেতৃবৃন্দ।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া, অভয়নগর ও বসুন্দিয়া) আসনের প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল। তিনি নির্বাচনী এলাকার পাশাপাশি গোটা জেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে তৎপর রয়েছেন। তিনি বিগত সাড়ে ১৭ বছর ধরে (আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে) হামলা, মামলাসহ বহু নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তিনি বাড়ি ঘর ও পরিবার পরিজন ছেড়ে বছরের পর বছর পালিয়ে বেড়িয়েছেন। তিনি একজন ত্যাগী নেতা। তিনি ১৯৮৮-৮৯ ও ৯০-৯১ নড়াইল ও যশোর জেলার ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যশোর জেলার ইসলামী ছাত্রশিবিরের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের প্রার্থী জেলা শূরা কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক। তিনি একজন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি। সুবক্তা হিসেবে দলীয় পরিসরের বাইরেও তার পরিচিতি আছে।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের প্রার্থী থানা আমির অধ্যাপক মোক্তার আলী। তিনি ১৯৯৬ সালেও এই আসন থেকে দলের প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু সেবার তিনি ভালো ফলাফল করতে পারেননি। অধ্যাপক মোক্তার আলী কেশবপুর কলেজের ইংরেজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।
নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে অধ্যাপক মোক্তার আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকার মানুষে সাথে কাজ করছি। কেশবপুরের মানুষ আমাকে ভালবাসে। আগামী নির্বাচনে জয়ের ব্যাপরে তিনি আশাবাদী। নির্বাচিত হলে সকলকে সাথে নিয়ে কেশবপুরের উন্নয়নে কাজ করে যাব।
যশোর-১ (শার্শা) আসনে প্রার্থী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান বলেন, আগামী নির্বাচনে পার্থী হিসাবে মাঠে আছি। আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছি। ভালো সাড়া পাচ্ছি। জামায়াতে ইসলামীর প্রতি অতীতের চেয়ে মানুষের ভালোবাসা বেড়েছে। মানুষ চায়, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ। এজন্য জামায়াতের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে।’