♦ পুলিশের অভিযানে তিনদিনে মাদক, অস্ত্রসহ ৬৫ সন্ত্রাসী গ্রেফতার
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে পুলিশের সাড়াসি অভিযানে তিনদিনে পৌর কাউন্সিলরসহ ৬৫জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ৩২টি মামলা হয়েছে। শহরের মোড়ে মোড়ে চলছে পুলিশের তল্লাশি। সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পুলিশের হানায় আতংক ছড়িয়েছে তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের মধ্যেও। ফলে বিতর্কিত জনপ্রতিনিধি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকেই গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে পুলিশের এই অভিযান নিয়ে প্রশ্নে তুলেছেন আওয়ামী লীগের একাংশের জনপ্রতিনিধিরা। আর অপর অংশের নেতাকর্মীরা পুলিশের অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ যাই বলুক, সাধারণ মানুষ পুলিশের কঠোর অবস্থানে খুশি। সন্ত্রাস দমনে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, যশোর জেলায় গত দেড় মাসে ১২জন খুন হয়েছেন। এরমধ্যে জানুয়ারিতে ৬জন ও ফেব্রুয়ারিতে আরও ৬ জন নিহত হয়েছেন। একই সাথে বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারি। বুধবার থেকে যশোর শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশের তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। যশোরের বিভিন্ন স্থান থেকে ৬৫জনকে মাদক ও ছুরিসহ আটক করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের আস্তানায় হানা দিয়েছে পুলিশ। কিশোর গ্যাংয়ের আশ্রয়দাতা ও মাদক, চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত অনেক জনপ্রতিনিধি গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন। পুলিশের তৎপরতায় স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মাঝে। তারা সন্ত্রাস দমনে পুলিশকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি যশোর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ জাহিদ হোসেন মিলনসহ চার জনকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার প্রতিবাদে যশোর পৌরসভা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের অপসারণের দাবিতে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।
এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল দাবি করেছেন, বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইনের অপসারণের দাবি জানানোর পর থেকে জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুলিশ হুমকি দিচ্ছে। গত রাতে চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন দফাদার ও রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান লাইফের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ মানববন্ধন কর্মসূচিতে না আসার জন্য হুমকি দিয়েছে। সকাল থেকে পুলিশ তার বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়। সকাল থেকে পুলিশের একাধিক টিম যশোর উপ-শহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদসহ অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ হুমকি দিয়েছে।
এ বিষয়ে লেবুতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলীমুজ্জামান মিলন সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ আমাদের বাড়ি এসে নানা ধরনের কথা বলছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে যা অত্যন্ত অসম্মানের।
এ বিষয়ে নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ জনপ্রতিনিধিদের সম্মান নিয়ে খেলছে। বাড়িতে এসে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলছে। আমাদের কাছে খবর আছে, জনপ্রতিনিধিদের সম্মানহানির জন্য আটক করে কাউকে মাদক, কাউকে অস্ত্র আবার কাউকে গোল্ড দিয়ে চালান দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন থেকে জনপ্রতিনিধিরা একই দাবিতে ১৬ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন, ১৭ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল, ১৮ ফেব্রুয়ারি দড়াটানায় বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দেন। এরপরও তাদের অপসারণ করা না হলে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়।
এ বিষয়ে যশোর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যশোর জেলায় পুলিশের সাড়াসি অভিযানে মাদক, চাকুসহ ৬৫জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ৩২টি নিয়মিত মামলা হয়েছে।
তিনি বলেন, পুলিশের অভিযান কোন ব্যক্তি কিংবা জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে নয়। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক ও কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত ও মদদদাতাদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই বিবেচনা করছি। তার অন্য পরিচয় আমাদের কাছে মূখ্য নয়। জেলার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে মানুষকে স্বস্তি দিতে পুলিশ কাজ করছে।’
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, পুলিশের এই অভিযান সঠিক আছে। আজকাল শহরে বাড়ি করতে চাঁদা দিতে হয়, শহরে চলাচল করতে শঙ্কাবোধ করে সাধারণ মানুষ। এই অভিযান চালানোর ফলে বিতর্কিত জনপ্রতিনিধিরা, সন্ত্রাসীরা আত্মগোপনে চলে গেছে। এই অভিযানে জনসাধারণের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। তিনি বলেন, পুলিশের এই অভিযানকে বিতর্কিত করতে যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন বা পুলিশ সুপারকে অপসারণ দাবি করেছেন; সেই কাউন্সলির মোকছিমূল বারী অপু আমাদের দলের কেউ নন। উনি বিএনপির রাজনীতি থেকে এসেছেন।