বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট। ইতোমধ্যে তিনজন মারা গেছেন। করোনা নিয়ে জনমনে অস্বস্তি থাকলেও ‘গভীর ঘুমে’ স্বাস্থ্য বিভাগ। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা কিটের মজুতের কথা বলা হলেও গণপরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাদের দাবি, সংক্রমণরোধে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে।
পাঁচ বছর আগে করোনা ভাইরাসের এক ভয়াবহ রূপ দেখেছিল বিশ্ববাসী। সম্প্রতি সেই মহামারী ফের নতুন রূপে দেখা দিয়েছে। যশোরে ইতোমধ্যে শনাক্ত হয়েছে ৫ জন। যার মধ্যে তিনজনই মারা গেছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, শনাক্ত হওয়ার পরপরই দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন রোগীরা। ফলে আগের মতো সব হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা জরুরি। অথচ জেলার হাসপাতালগুলোতে নেই প্রয়োজনীয় গণপরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা বা সচেতনতামূলক কার্যক্রম। যা এ মুহূর্তে জরুরি বলে মনে করেন সচেতন মানুষ।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ ও সংক্রামক ওয়ার্ডের ইনচার্জ ডা. রবিউল ইসলাম তুহিন বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে সর্বমোট পাঁচজন করোনা রোগী ছিল। এরমধ্যে আইসিইউতে তিনজন রোগী মারা যান। এসব রোগী পজেটিভ শনাক্ত হওয়ার ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছেন। আমরা তাদের পূর্ণ চিকিৎসা শুরুর আগেই তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। ফলে আমরা সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। কেউ করোনার উপসর্গ বুঝতে পারলেই যেন তিনি হাসপাতালে এসে পরীক্ষাটা করে নেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন।’
এদিকে, করোনা নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন বলে জানিয়েছেন শহরের সাধারণ নাগরিকরা। সংস্কৃতিজন অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান হিরু বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশ শঙ্কিত। পত্র-পত্রিকা থেকে জেনেছি যশোরে আবারও করোনায় মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল এসে দেখলাম এখানে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বলাই নেই। করোনা পরীক্ষার জন্য কোনো বুথও করা হয়নি। শুধু সবাইকে মাস্ক পরতে বলা হচ্ছে। আমার মনে হয় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। নইলে করোনা ছড়িয়ে পড়লে সেটা আমাদের জন্য ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াবে।’
রফিকুল ইসলাম নামে অপর একজন বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে করোনার গণপরীক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত। এ পরীক্ষা না হলে নিরবে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকবে।’
নাছিমা আক্তার নামে অপর একজন বলেন, ‘প্রতিনিয়ত শুনছি যে যশোরে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু হাসপাতালগুলো করোনা প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনকি জনসচেতনতা তৈরিতে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। হাসপাতালগুলোতে গেলে সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে শোনা যাচ্ছে। আমরা চাই আগের মতো করোনার ভ্যাকসিন ও পরীক্ষার ব্যবস্থা সহজলভ্য করা হোক।’
এদিকে, স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি সংক্রমণ রোধে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সবকিছুই রয়েছে। যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হুসাইন সাফায়াত বলেন, ‘মূলত বয়স্ক লোকজন করোনায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। যারা মারা গেছেন তারা জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন। করোনা প্রতিরোধে আমাদের সব প্রস্তুতি আছে। করোনা পরীক্ষার জন্য আমরা দুই হাজার কিট হাতে পেয়েছি। এসব কিট দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের কেবল পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। বাইরে আপাতত বুথ খেলা হবে না। আমরা বলব, যদি করোনার উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিন। অবস্থা গুরুতর হলেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।’
সিভিল সার্জন মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘করোনা নিয়ে এত আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। করোনার যে ভ্যারিয়েন্টটি ছড়িয়েছে সেটি মারাত্মক কিছু না। বর্তমান যে প্রেক্ষাপট তাতে প্যানিক সৃষ্টি হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। তবে আমাদের সব প্রস্তুতি নেয়া আছে। প্রত্যেকটি হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড করা আছে। পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত কিট রয়েছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও করোনার নমুনা পরীক্ষার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আমরা জনগণকে সচেতন করছি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শও দিচ্ছি।’
সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, মহামারীর সময় যশোর জেলার ২৫ হাজার ৪৭৪ জন করোনায় আক্রান্ত হন। যার মধ্যে মারা যান ৫৯০ জন।