বিবি প্রতিবেদক
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যশোরের ছয়টি সংসদীয় আসনেই দলীয় প্রার্থী দিয়েছিলেন জাতীয় পার্টি (জাপা)। নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে করেছেন প্রচার-প্রচারণাও। ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েও মন জয়ের চেষ্টা করেন ভোটারদের।
কিন্তু নির্বাচনে তার কোন ছাপ পড়েনি। ফলে কেবল হারেননি ছয় প্রার্থীই, জামানতও হারিয়েছেন তারা। রোববার পাওয়া নির্বাচনী ফলাফল অনুযায়ী তারা নিজেদের কর্মী সংখ্যার ভোটও পাননি। এতে করে প্রশ্ন উঠেছে কর্মীদেও ভোটগুলো গেল কোথায়?
নিজেদের শোচনীয় পরাজয়কে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কারণেই হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পরাজিত এসব প্রার্থীরা। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের ওপর নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না জাতীয় পার্টি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া জাতীয় পার্টি বারবার নির্বাচনে অংশ নেয়াতে জনগণ ও নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এসব নানা কারণে দলটির অবস্থা একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়ছে, যা নির্বাচনে স্পষ্ট হচ্ছে।
যশোর-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিলেন আক্তারুজ্জামান। নির্বাচনে ১০২টি কেন্দ্রে লাঙ্গল প্রতীকের এই প্রার্থী পেয়েছেন দুই হাজার ১৫১টি ভোট। মোট প্রদত্ত ভোটের নির্দিষ্ট অংশের কম ভোট পাওয়ায় জামানত হারিয়েছেন এ প্রার্থী। নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসনটির ৪০ শতাংশ কেন্দ্রেই পোলিং এজেন্টের তালিকা করেছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। এই প্রার্থী নির্বাচন পরিচালনায় কর্মী ছিলেন পাঁচ হাজারের বেশি। আর ভোট পেয়েছেন মাত্র দুই হাজার ১৫১ ভোট। জাতীয় পার্টির প্রার্থী আক্তারুজ্জামান বলেন, এই আসনে দীর্ঘদিন জাতীয় পার্টি কোন প্রার্থী দেয় না। সর্বশেষ ২০০১ সালের পর আমি এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলাম। অনেক কর্মী ছিলো; তবে কর্মী অনুযায়ী ভোট পাইনি।
যশোর -২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিলেন ফিরোজ শাহ। নির্বাচনে ১৭৬টি কেন্দ্রে লাঙ্গল প্রতীকের এই প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র এক হাজার ৯৫০ ভোট। নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসনটির ৮০ শতাংশ কেন্দ্রেই পোলিং এজেন্টের তালিকা করেছিলেন। এই প্রার্থী নির্বাচন পরিচালনায় কর্মী ছিলেন আট হাজারের বেশি। কিন্তু ভোট পেয়েছেন মাত্র এক হাজার ৯৫০ ভোট। ফিরোজ শাহ বলেন, ‘ভোট গ্রহণের দিন ১২টা পর্যন্ত ভালো ছিলো। একটার পরে নৌকা ও স্বতন্ত্র ভোট ভাগভাগি করে নিয়েছে। দুই উপজেলায় ৭-৮ হাজার কর্মী ছিলো। তবে তারা কেউ ভোট দিতে আসেননি। এছাড়া ভোট কারচুপি হয়েছে। আমার ভোট আরো বাড়ার কথা।’
যশোর-৩ (সদর) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিলেন এড. মাহবুব আলম বাচ্চু। নির্বাচনে ১৮৯টি কেন্দ্রে লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন তিন হাজার ৭১০ ভোট। আসনটির ৬০ শতাংশ কেন্দ্রেই পোলিং এজেন্টের তালিকা করেছিলেন। এই প্রার্থী নির্বাচন পরিচালনায় কর্মী ছিলেন সাত হাজারের বেশি। নির্বাচন শেষে দেখা গেছে তিনি পেয়েছেন মাত্র তিন হাজার ৭১০ ভোট। একই সাথে হারিয়েছেন জামানত। মাহবুব আলম বলেন, ‘অনেক কর্মী সমর্থক থাকলেও তারা ভোট দিতে আসেননি। কেননা ভোটের আগে ও ভোটের দিন আসনে ১৫টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। এছাড়া এখন নির্বাচন অর্থ, অস্ত্র আর পেশিশক্তি নির্ভরতা হয়ে পড়েছে। এসব না থাকলে এখন বিজয়ী হওয়া যায় না।’
যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছিলেন জহুরুল হক। ১৪৯টি কেন্দ্রে তিনি ১০ হাজার ৩৫৬ ভোট পেয়েছেন। এই প্রার্থী নির্বাচন পরিচালনায় কর্মী ছিলেন ১৫ হাজারের বেশি। তার পরেও কর্মী সংখ্যক ভোট পাননি তিনি। হারিয়েছেন জামানত।
যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিলেন এমএ হালিম। ১২৮টি কেন্দ্রে তিনি ভোট পেয়েছেন ৬২৪। যদিও ভোট গ্রহণের দুই দিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। ভোট পরিচালনার জন্য তিনি ১০ হাজার কর্মী নিয়েজিত করেছিলেন। ভোট শেষে তিনি সেই কর্মী সংখ্যক ভোট পাননি তিনি। হারিয়েছেন জামানত। এমএ হালিম বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। তবে দলের অব্যবস্থাপনা কারণে দলের অবস্থা দিন খারাপ হচ্ছে। প্রার্থী হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় নেতারা কোন খোঁজ খবর নেয়নি। দলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।’
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিলেন জি এম হাসান। এই প্রার্থী নির্বাচন পরিচালনায় কর্মী ছিলেন দুই হাজারের বেশি। তবে নির্বাচন শেষে দেখা গেছে তিনি পেয়েছেন মাত্র ৬৪০ ভোট। হারিয়েছেন জামানতও। জিএম হাসান বলেন, ‘এই সরকারের প্রহসনের নির্বাচনে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা আওয়ামী লীগের দালাল। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া জাতীয় পার্টি বারবার নির্বাচনে অংশ নেওয়াতে জনগণ ও নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টি থেকে মুখ ফিরিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, কর্মী ছিলো; তবে তারা ভোট দিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে। শেষ পর্যন্ত টাকা পয়সা না থাকাতে তারা আমার পক্ষে কাজ করেনি।’
জাতীয় পার্টির কয়েকজন কর্মী ভোটারদের ভাষ্য, ‘এবারের নির্বাচন প্রতীকের নির্বাচন হয়নি, হয়েছে ব্যক্তির। এলাকায় যার অবস্থান ভালো এবং মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও গণসংযোগ আছে, তারাই ভালো করেছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের এলাকার মানুষের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই, এলাকায় তেমন দলীয় কর্মকাণ্ডও নেই। শুধু উপজেলাতে নয়; জেলাতেও দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টির কোনো কর্মকাণ্ড নেই। শুধু মুখে প্রচারণা। মানুষের সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততা ছিল না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির জেলার এক শীর্ষ এক নেতা বলেন, এলাকায় জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক নেই জাতীয় পার্টির কোন প্রার্থীদের। মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর ধরে এলাকার জনগণের সঙ্গে কুশল বিনিময় নেই, এমন নেতা নির্বাচনে দলের প্রার্থী হয়েছেন। ফলে জনগণ তাদের নূন্যতম ভোট দিয়ে সম্মান করেনি। এমনকি তাদের কর্মী সমর্থকরাও ভোট দেয়নি।
জাতীয় পাটির কেন্দ্রীয় সহ-সভপতি ও যশোর শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সরিফুল ইসলাম চৌধুরী সরু বলেন, ‘মানুষের মধ্যে প্রচার ছিল আপনারাতো ভাগভাটোয়ার মাধ্যমে ২৬টি আসন পেয়েছেন। সেখানে গিয়ে ভোট চান? যে কারণে আমাদের যশোরের প্রার্থীদের ভোট দেয়নি। এমনকি দলীয় নেতা-কর্মীরাও ভোট দিতে যাইনি। তাছাড়া যশোর জেলা আওয়ামী লীগ বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা। এখানে এই দুই দলের প্রভাব বেশি।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে নামেন ৩২ জন প্রার্থী। নৌকার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ৮ প্রার্থী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে দুটিকে স্বতন্ত্র ও চারটিতে নৌকা বিজয়ী হয়েছেন।
শিরোনাম:
- আলুর দাম লাগামহীন ভোক্তার নাভিশ্বাস
- শীতে ফুটপাতে গরম কাপড় বিক্রির ধুম
- একটা সংস্কার কমিটি দিয়ে সংবিধান সংস্কার সম্ভব না: মির্জা ফখরুল
- নিখোঁজের ৩ দিন পর কপোতাক্ষ নদে মিলল বৃদ্ধার মরদেহ
- কৃষ্ণনগরে আরাফাত কোকো স্মৃতি ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন রতনপুর
- পাখির সাথে মানুষের ভালোবাসার গল্প !
- সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখবে বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা
- যশোর মটর পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন সংস্কার ও উন্নয়ন পরিষদের পক্ষে ২৭টি মনোনয়নপত্র ক্রয়