বাংলার ভোর প্রতিবেদক
আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যশোরে গত দুই দিনে ১১ জন প্রার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পাঁচজন ও এর আগের দিন বুধবার জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের পাঁচ প্রার্থীসহ ছয়জন মনোনয়ন সংগ্রহ করেন।
দুই দিনই ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে নেতাকর্মীরা জেলা রিটার্নিং কার্যালয় থেকে তাদের মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। তবে নির্বাচনী উৎসব শুরু হলেও এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি বলে অভিযোগ করেন প্রার্থীরা।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সারাদেশে এক উৎসবমুখর ও নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। সম্ভাব্য প্রার্থী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে শুরু হয়েছে মাঠ পর্যায়ের তৎপরতা। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রার্থীদের মাঝে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন .. .. যশোরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৫ প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ
তবে যশোরে প্রার্থীরা মনোনয়ন সংগ্রহ শুরু করেন বুধবার থেকে। বুধবার জেলায় পাঁচটি আসনে জামায়াতের পাঁচ প্রার্থী ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ছয়জন প্রার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করেন।
এদিন যশোর-১ আসনে জামায়াতের ইসলামীর মুহাম্মাদ আজীজুর রহমান, যশোর-৩ আসনে আব্দুল কাদের, যশোর-৪ গোলাম রসুল, যশোর-৫ গাজী এনামুল হক, যশোর-৬ আসনে মোক্তার আলী মনোনয়ন সংগ্রহ করেন।
এছাড়া এদিন স্বতন্ত্র হিসেবে যশোর-৫ আসনে কামরুজ্জামান মনোনয়ন সংগ্রহ করেন।
মনোনয়ন সংগ্রহের সপ্তম দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পাঁচ প্রার্থী জেলা রিটার্নিং কার্যালয়ে দায়িত্বরত সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কবির উদ্দিনের কাছ থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেন।
এদিন যশোর-১ আসনে দলটির শার্শা উপজেলার সহ সভাপতি বখতিয়ার রহমান, যশোর-৩ আসনে দলটির কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা সোয়াইব হোসেন, যশোর-৪ দলটির আইএবি পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. বায়োজিদ হোসেন, যশোর-৫ উপজেলার সহ সভাপতি জয়নাল আবেদীন, যশোর-৬ আসনে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন জেলার সাধারণ সম্পাদক কাজী শহিদুল ইসলাম মনোনয়ন সংগ্রহ করেন।
এর আগে সকাল থেকে ব্যাপক উৎসাহের মধ্যে দিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যশোরের নেতাকর্মীরা রিটার্নিং কার্যালয় প্রাঙ্গনে জড়ো হন। ইসলামী মূল্যবোধের একটি রাষ্ট্রগঠনে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন নেতাকর্মীরা। তবে মনোনয়ন সংগ্রহ শুরু হলেও এখনও দেশে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি বলে অভিযোগ করেন মনোনয়ন সংগ্রহ করা পাঁচ প্রার্থীই।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ও যশোর-৩ আসনে দলটির মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা সোয়াইব হোসেন বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে নির্বাচনে ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি।
এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। যদি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হতো, তাহলে জুলাই যোদ্ধা ও এই নির্বাচনে ঢাকার এক প্রার্থী ওসমান হাদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলিবিদ্ধ হতে হতো না। তাহলে নিরাপত্তা কোথায়? এই পরিস্থিতিতে প্রার্থীরা কীভাবে নির্বাচন করবেন? দ্রুত প্রার্থী, ভোটারের নিরাপত্তা ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে ভূমিকা রাখবে নির্বাচন কমিশন এমনটা প্রত্যাশা।’
যশোর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও যশোর-৪ আসনে দলটির মনোনীত প্রার্থী গোলাম রসুল বলেন, ‘এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি হুমকি চলছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রাখতে ভূমিকা নিবেন।’
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোরের ঝিকরগাছায় ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। এতে প্রধানি অতিথি ছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশেক হাসান। এ সময় তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচন ও গণভোটকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে জেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করবে। একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।’
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর।
৩০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৪ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র বাছাই হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের শেষ সময় ১১ জানুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তি হবে ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি মধ্যে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি।
রিটার্নিং কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে প্রতীক বরাদ্দ দেবেন ২১ জানুয়ারি।
নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হবে ২২ জানুয়ারি। প্রচার চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। আর ১২ ফেব্রুয়ারি হবে ভোটগ্রহণ।

