বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে নাশকতা ও বিস্ফোরক মামলায় আওয়ামী লীগের ১শ’ ৬৭ নেতাকর্মী আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে যশোর সদর উপজেলায় ২০, অভয়নগর উপজেলার ১শ’৫ ও কেশবপুরের ৪২ জন। পৃথক তিন আদালতে আজ রোববার তারা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক যশোর সদর ও অভয়নগরের ১শ’২৫ জনের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সাথে কেশবপুর উপজেলার ৪২ জনের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোর্ট ইন্সপেক্টর রোকসানা খাতুন। আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে রয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর যশোর সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্রে বোমাবাজির ঘটনায় গত ১৯ নভেম্বর কোতোয়াালি থানায় মামলা করেন অ্যাডভোকেট মুন্সী মঞ্জুরুল ইসলাম। এ মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনসহ ৯৬ জন। রোববার চেয়ারম্যানসহ ২০ জন এজাহারভুক্ত আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানালে বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম কিবরিয়া তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এছাড়া অভয়নগরের পৃথক দুইটি মামলায় একই দিন ১০৫ জন আদালতে আত্মসমর্পন করেন। এ মামলার আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, কোষাধক্ষ্য আনিছুর রহমান মিন্টু, সাবেক হুইপ আব্দুল ওহাবের ছেলে শেখ কাফি সম্রাট, কমিশনার বিপুল শেখ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক শফি কামাল, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক কাজী মামুনসহ নেতৃবৃন্দ আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিনের আবেদন জানালে বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালাল তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এছাড়া একই দিন কেশবপুরের আরেকটি নাশকতার মামলার এজাহারভুক্ত ৪২ আসামি আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিনের আবেদন জানান। বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদুর রহমান তাদের জামিন মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এ বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা ও অভয়নগর উপজেলার আত্মসমর্পণকারী আসামি পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ কবীর হোসেন জনি বলেন, ‘মামলার ঘটনার সাথে বাস্তবে কোনো মিল নেই। মনগড়া অভিযোগ দিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের পক্ষে তারা জেলা জজ আদালতে জামিন ধরবেন। যা প্রক্রিয়াধীন।’ এ বিষয়ে কোর্ট ইন্সপেক্টর রোকসানা খাতুন বলেন, আদালতের নির্দেশে তারা আত্মসমর্পনকারী আসামিদেরকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করেছেন ‘
এদিকে আদালত খাসকামরা থেকে কারাগারের উদ্দেশ্য পিজন ভ্যানে উঠানোর আগে আদালত চত্বরে স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল করে তোলেন নেতাকর্মীরা। ওই সময় নেতাকর্মীরা ‘জয় বাংলা, ‘শেখ হাসিনা ভয় নাই, রাজ পথ ছাড়ি নাই’, ‘জাতির পিতা শেখ মুজিব, লও লও লও সালাম’ বলে স্লোগান দেন। এসময় আদালত চত্বরে একধরণের উত্তপ্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তবে সবধরনের অপ্রতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলাতে এসময় আদালত চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন লক্ষ করা গেছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এমনভাবে ফিরে আসায় জেলা জুড়ে বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে।
এই বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও পাবলিক প্রসিকিউটর সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘আদালত চত্বরে স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হওয়া ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে জনেমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, আমরাও অনেক হাজার হাজার মামলার আসামি হয়েছিলাম, আত্মসমর্পণ করেছি। কিন্তু আদালত চত্বরে এ ধরণের ঔদ্ধত্য আচারণ ও আদালতের শ্রঙ্খলা ভঙ্গ হয় এমন কোন কর্মকান্ড করেনি। বিষয়টি নিয়ে আমরা কোর্টে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবো।’