বাংলার ভোর প্রতিবেদক
তৃপ্তি ভরে খিচুড়ি-মাংস খেয়ে মানুষেরা চলে যায়। এ জন্য কাউকে কোনো টাকা দিতে হয়না। দরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যে প্রতিমাসের প্রথম শুক্রবার দুপুরে এ খাবারের ব্যবস্থা করে যশোরের এসএসসি ১৯৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ব্যাক বেঞ্চার’। ‘খাবার আছে যতক্ষণ, পরিবেশন করা হবে ততক্ষণ’- এমন স্লোগান নিয়ে ২০২৩ সালের পহেলা আগস্ট থেকে সংগঠনটি নিয়মিত প্রতিমাসের প্রথম শুক্রবার দুপুরে মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করে। প্রথম দিকে ৬০ থেকে ৭০ জন মানুষ এই মেজবানে অংশ নিলেও এখন সেটি চার শতাধিক মানুষে দাঁড়িয়েছে। যা প্রতি মাসে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সংগঠনটি এসব মানুষের খাবার দেয়ার পাশাপাশি শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, রক্তদান, সামাজিকভাবে সচেতনামূলক কর্মকান্ড করে আসছেন। করোনা কালেও সংগঠনটি অক্সিজেন সেবা, খাদ্য সামগ্রী বিতরণের মধ্যে দিয়ে মানুষের পাশে ছিলেন।
শুক্রবার দুপুরে রবীন্দ্রনাথ সড়কের (আরএন রোড) যে মার্কেটে খাবার দেয়া হচ্ছে; সেই মার্কেটের সামনে অর্ধশতাধিক ইজিবাইক রিকসা সড়কের পাশে দাঁড়ানো। এসব যানের চালকরা সবাই হাত মুখ ধুয়ে পাটিতে বসে খেতে বসেছেন। এদের সাথে হতদরিদ্র পথচারীরাও রয়েছেন। সংগঠনের সদস্যরা কেউ প্লেটে তাদের মুরগির মাংস ও খিচুড়ি পরিবেশন করছে। কেউ বা গ্লাসে পানি দিচ্ছেন। সবাই ঠিকমতো খাবার পাচ্ছে কিনা কয়েকজনকে আবার তদারকিও করতে দেখা গেছে।
সেখানে খেতে আসা শংকরপুর বস্তিতে থাকা প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক রুহুল আমিন জানান, ‘শহরে ভিক্ষা করি। গেল বছর একজনের মাধ্যমে জানতে পারি এখানে প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার ভালো খেতে দেয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভিক্ষা করে দুপুরে এখানে এসে ভালোমন্দ খাই।’
গহরজান বিবি নামে আরেক ভিক্ষুক বলেন, ‘বাড়িতে মন ভরে খেতে পারিনে। আজ মন ভরে খেয়ে গেলাম। দোয়া করি আমরা এটা প্রতি মাসে না; প্রতি সপ্তাহে যেন এমনভাবে খেতে পারি। রিকশাচালক হাবিবুর রহমান জানান, ‘দরিদ্র মানুষ, তাই ভালো খাবার সব সময় খেতে পারেন না। সব সময় পাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। এই সংগঠন মাসে একবার এমন আয়োজন করে ভালো লাগে।’
সুলতান নামে এক ব্যক্তি জানান, ‘শহরে এসেছিলেন একটা কাজে। এখানে আসার পর দেখলেন, বিনামূল্যে খাওয়ানো হচ্ছে। তাই তিনি খেয়ে নিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পৌরসভার কর্মচারী আরিফ হোসেন জানান, ‘দরিদ্র মানুষ তৃপ্তির সঙ্গে খায়। এটি দেখতে তাঁর খুব ভালো লাগে। তাই তিনি সময় পেলে চলে আসেন এখানে।’
সংগঠন ‘ব্যাক বেঞ্চার’ সদস্য সংখ্যা ১৯ জন। সদস্যরা কেউ চাকুরিজীবী কেউ বা ব্যবসায়ী। এই সদস্যদের চাঁদার টাকা দিয়ে প্রথমে নিজেদের উদ্যোগে অসহায়দের মাঝে একবেলার খাবারের আয়োজন শুরু করা হয়। পরে অনেক ভালো মনের মানুষ এতে শরিক হচ্ছেন। এ ছাড়া অনেক দানশীল ব্যক্তির সহযোগিতায় এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
সংগঠনটির সভাপতি জাকিউল ইসলাম পিন্টু জানান, ‘আমরা ভালো আছি, আমরা এই নীতিতে বিশ্বাসী না। আমরা চাই যারা এই সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ, হতদরিদ্র তাদেরকে সাথে নিয়েই ভালো থাকতে চাই। সেই নীতি থেকেই আমরা গত বছর থেকে এই খাবারের আয়োজন করে আসছি। প্রথমে ৬০-৭০ জন খাবার খেতে আসলেও এখন সেটি চার শতাধিক মানুষে পৌঁচ্ছেছে। নিজেরা চাঁদা ছাড়াও বিভিন্ন দানশীল মানুষ এখানে সহযোগিতা করছেন। তিনি আরও জানান, ‘এসব অর্থ দিয়ে খরচ মেটে না। বাজারে জিনিসপত্রের অনেক দাম।’
সংগঠনটির উপদেষ্টা লেনিন আনোয়ার বলেন, ‘আমরা প্রতিমাসেই বিভিন্ন আইটেমে খাবার দিয়ে থাকি। খাবার হিসেবে ভাতের সঙ্গে ডাল, সবজি ও মুরগির মাংস দেয়া হয়। কখনো খিচুড়ি মাংসও দেয়া হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে আমরা মানবতা, মমত্ববোধকে প্রাধান্য দেই।
তিনি জানান, ‘আমাদের লক্ষ্য মাসে একবার নয়; প্রতি শুক্রবার আমাদের খাবার পরিবেশনের। ছোট ভাবে আমরা শুরু করেছি; যদি সমাজের বিত্তবানরা আমাদের এই কাজে এগিয়ে আসেন তাহলে সেই লক্ষ্যে আমরা পৌঁছে যাবো। পাশাপাশি সমাজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সবাই নিজ নিজ এলাকা থেকে এভাবে এগিয়ে আসলে সমাজের এই হতদরিদ্ররা ভালো থাকবে।’