বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের অভয়নগরে দুবৃর্ত্তদের দেওয়া আগুনে ১৩টি পরিবারের ১৮টি বাড়িঘর অগ্নিসংযোগ লুটের ঘটনায় ভুক্তভোগী পাড়াটিতে পরিদর্শন করেছেন ঢাকার একটি নাগরিক প্রতিনিধিদল। আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আক্রান্ত পরিবারগুলোর সাথে কথা বলেন। ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন পোড়া বাড়িঘর পরিদর্শন ও ঘটনার দিনের বর্ণনা শুনেন ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে। এছাড়া প্রতিনিধিদল হত্যাকান্ডের শিকার কৃষকদল নেতা তরিকুল ইসলামের বাড়িঘরও পরিদর্শন করেন।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, নারী ঐক্য পরিষদের সভানেত্রী সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য, মানবাধিকার কর্মী দীপায়ন খীসা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি দীপক শীল, অধিকার কর্মী এবং আইপিনিউজ এর নির্বাহী সম্পাদক সতেজ চাকমা। প্রতিনিধি দল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিফ্রিং করেন।
নারী ঐক্য পরিষদের সভানেত্রী সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশের বিগত ৫৩ বছরে সবসময় ক্ষমতাবান জনগোষ্ঠী সবসময় সংখ্যালঘুদের টার্গেট করেছে। ক্ষমতার পালাবদলে কিংবা ক্ষমতা ও আধিপত্যের দ্বন্দ্বে ভুক্তভোগী হয় জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। আমরা আশা করবো আক্রান্ত পরিবারগুলোর নিরাপত্তা, বিচার ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানে প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ নিবে।’
নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, আমরা দেখলাম যাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তারা এখন সর্বশান্ত। আমাদের পর্যবেক্ষণে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি আমরা লক্ষ্য করলাম সে পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা তারা পাচ্ছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে এবং ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে সেটা খুবই নগণ্য৷ আমরা আশা করি প্রশাসন এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপন করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবেন৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছে এ হত্যাকান্ড ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব নিয়ে। তবে এ হত্যাকান্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য নিরীহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর অগ্নিসংযোগ ও বাড়িঘরে লুটপাট চালানো হয়েছে। দুটি ঘটনায় যারা সত্যিকারের আসামী তাদেরকে ধরতে হবে। এই ঘটনায় যাদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে, তারা নিরীহ। আগুনে মানুষের স্বপ্ন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে বসাবসের মানসিক জোস সেটা হারিয়ে ফেলেছেন তারা। তারা আতংকের মধ্যে রয়েছেন। আমরা দেখলাম, হত্যা মামলায় যাদের নাম এজাহারে দেওয়া হয়েছে, তারা এই ঘটনায় সঙ্গে জড়িত না। আইনের ফাক দিয়ে অপরাধী বেরিয়ে যাক সেটা যত না খারাপ, তত খারাপ যখন একজন নিরপরাধী মানুষ শাস্তি পায়। এখানে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।’
গেল ২২ মে বৃহস্পতিবার রাতে যশোরের অভয়নগর ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের একটি বাড়িতে উপজেলার পৌর কৃষক দলের সভাপতি তরিকুল ইসলামকে কুপিয়ে গুলি করে দুবৃর্ত্তরা। ঘেরের ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে গ্রামটির বাদেড়া পাড়ার পিল্টু বিশ্বাসের বাড়িতে ডেকে নিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয় অভিযোগ স্বজনদের। এ ঘটনার পর রাতে একদল লোক পিল্টু বিশ্বাসের প্রতিবেশির ১৩টি পরিবারের ১৮টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। তার আগে চলে লুটপাট, ভাঙচুর ও মারধর। এ সময় আহত হন অন্তত ১০ জন। আক্রান্তরা মতুয়া সম্প্রদায়ের।
এই ঘটনায় নিহতের পরিবার ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করেছেন। হত্যাকান্ডের মামলায় দুই আসামি ও অগ্নিসংযোগের মামলায় দুইজন মোট চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার ১৩ দিন কেটে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে মানবতার জীবনযাপন করেছেন পাড়াটির বাসিন্দারা। রাতে ঘুমানোর জায়গা না থাকায় এখনো পাড়াটির সদস্যরা কেউ অর্ধপোড়া গোয়ালঘর কিংবা মন্দিরে থাকছেন। এখনো বাড়িতে জ্বলেনি উনুন আর বিদ্যুতিক বাতি। তবে এখন বাড়ি মেরামত করে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা চলছে বলে জানালেন বাসিন্দা। নিশ্চিয়তা চেয়েছেন আতংক ভয় ডরহীন জীবনযাপনের।