বাংলার ভোর প্রতিবেদক
সোমবার বিকেলে যশোর দড়াটানা শহীদ চত্বরে কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি প্রয়াত কৃষক নেতা মাস্টার ইমান আলীর ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ বিএম শামীমুল হক, কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক তাপস বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় সদস্য ও মাগুরা জেলার সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান মাস্টার, নড়াইল জেলার সভাপতি আহম্মদ বিশ্বাস, যশোর জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক সমীরণ বিশ্বাস এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট যশোর জেলা সহ-সভাপতি আলী কদর মাস্টার, জেলার অন্যতম নেতা আব্দুর রাজ্জাক মাস্টার, জাতীয় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মধুমঙ্গল বিশ্বাস, খুলনা জেলার আহ্বায়ক সুকৃতি সরকার, কৃষকনেতা জগন্নাথ বিশ্বাস প্রমুখ। স্মরণসভা পরিচালনা করেন এসএম তৌহিদুর রহমান বাদল।
স্মরণসভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, প্যালেস্টাইনে ইসরায়েলের আগ্রাসন-গণহত্যা ও রুশ-ন্যাটো যুদ্ধ তথা সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কট বৃদ্ধি করছে। খাদ্যসহ দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য প্রয়োজন ছিল সকল কৃষি উৎপাদনের উপকরণ বিনামূল্যে কৃষকদের সরবরাহ করে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা। তা যেমন সরকার করে না, অন্যদিকে সরকার সারের যে মূল্য নির্ধারণ করে সেই মূল্যে কোথাও সার বিক্রি হয়না বা পাওয়া যায় না। সার, বিজসহ প্রত্যেকটি কৃষির উৎপাদনের উপকরণ ও খাদ্য আমদানী নির্ভর। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে ওই সকল উপকরণ ও খাদ্য আমদানিতে সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়ে দেশেও খাদ্য সঙ্কট পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। যার প্রতিফলন হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধগতি।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সকল ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে। ফলে ধানের বাজার দর পুনর্মূল্যায়ন করে নির্ধারিত মূল্য প্রাপ্তির যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছিল সময়ের দাবি, সরকার তাও করেনি। শহরের নিম্নমধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, শ্রমজীবী, কর্মজীবী, পেশাজীবীসহ গ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভূমিহীন গরিব কৃষকদের এ দুর্বিসহ দ্রব্যমূল্যের বাজার রেশনিংয়ের ব্যবস্থাও করেনি। পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদীদের নির্মম শোষণের কারণে বিশ্বব্যাপি পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। যার অংশিদার হিসেবে ভারত সরকার কর্তৃক একতরফাভাবে অভিন্ন নদ-নদীর পানি প্রত্যাহার করছে এবং আমাদের সরকারও পরিবেশ ধ্বংসের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে। ফলশ্রুতিতে মৌসুমে মৌসুমে কৃষকের ফসলসহ সকল সম্পদ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অথচ সরকার এর দায় বহন করছে না।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ভূমিহীন গরিব কৃষকসহ মেহনতি-জনতার জীবন-জীবিকা দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সীমাহীন বেকারত্ব ও আয় কমে যাওয়ায় জনগণের জীবন নির্বাহ করা যেখানে দুঃসাধ্য সেখানে সরকার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থে বার্মা এক্ট কার্যকরের জন্য মিয়ানমারের সীমান্তে জাতিসংঘের সহায়তার নামে করিডোর বা চ্যানেল ও চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের কাছে লিজ দেয়ার পাঁয়তারা করছে। মূলত ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার স্বার্থে সরকার দেশকে সাম্রাজ্যবাদীদের অন্যায়যুদ্ধে শামিল করতেও নানা অপতৎপরতায় যুক্ত হয়ে দেশের মানুষের জীবন ও সর্বস্ব ধ্বংস করার পথ প্রসস্থ করছে। দেশের কৃষক ধ্বংসের প্রায় দারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে। শহরে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, বিদেশে শ্রম বিক্রি করতে যাওয়ার ঢল নেমেছে, ঋণের দায়ে জর্জরিত কৃষককে উদ্ধার না করে উল্টো কৃষি আধুনিকায়নের নামে ভূমি থেকে উচ্ছেদ বা কৃষককে উৎপাদন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া ষড়যন্ত্র চলছে। বর্তমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় জাতীয় স্বার্থে যেখানে কৃষিভিত্তিক শিল্প, ব্যবসা ও কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে গনমানুষের খাদ্য ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধানে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন ছিল। সেখানে সরকার শোষকশ্রেণির স্বার্থ সংরক্ষিত করার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে এ রাষ্ট্র ব্যবস্থা শোষকশ্রেণির তথা শ্রমিক-কৃষক-জনগণের নয়। বর্তমান বিশ্বব্যাপি সঙ্কট হচ্ছে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার সঙ্কট। নেতৃবৃন্দ এমতাবস্থায় কৃষি বিপ্লব তথা জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয় সঙ্কট থেকে জনগণের মুক্তির জন্য কৃষক-জনতাকে কৃষক সংগ্রাম সমিতির ৭ দফা দাবি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।