বাংলার ভোর প্রতিবেদক
শীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যাওয়ার কথা থাকলেও যশোরে উল্টো সংক্রমণ বেড়েছে। গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। রোগীদের অভিযোগ, মশা নিধনে কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। তবে জলাবদ্ধতাকে মশার বংশবৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন সিভিল সার্জন।

যশোরে এখন পুরোপুরি শীতের আবহ বিরাজ করছে। কিন্তু এ অবস্থার মধ্যেও এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। গত সেপ্টেম্বরে জেলার হাসপাতালগুলোতে ২০২ জন, অক্টোবরে ৩৩৯ জন এবং চলতি মাসে (অদ্যবধি) ২৮০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। রোগীদের বেশিরভাগ যশোর সদর ও অভয়নগর উপজেলার বাসিন্দা।

রোগীরা অভিযোগ করেন, মশা নিধনে কার্যকরী উদ্যোগ না থাকায় ডেঙ্গুর বিস্তার বাড়ছে। চিকিৎসকদের মতে, শীত মৌসুমে অস্বাভাবিক বৃষ্টির কারণে মশার প্রজনন অব্যাহত থাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না তারা। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকদের।

বাগুটিয়া ইউনিয়নের ডেঙ্গু আক্রান্ত শাহজালাল হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়ি বাগুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পাশে। বলতে গেলে আমাদের পুরো পরিবারই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। আমার বড় চাচি প্রথম আক্রান্ত হন, এরপর চাচার দুই সন্তান, পরে আরেক চাচা এবং শেষে আমি আক্রান্ত হই। এখনও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মশা নিধনের কোনো কার্যক্রম দেখি না। কিন্তু গ্রামে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দিন দিন বাড়ছে। আগেও আমাদের গ্রামে ডেঙ্গু মশার কারণে দুই-তিনজন মারা গেছে। আমি চাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশক নিধনে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিন।’

ডেঙ্গু আক্রান্ত আরেক রোগী সালমা বেগম বলেন, ‘এক মাস ধরে জ্বর। একবার সুস্থ হয়ে বাসায় গিয়েছিলাম, আবার হাসপাতালে আসতে হয়েছে। পেটে ব্যথা, গায়ে ও গিরে প্রচণ্ড ব্যথা। আমরা পৌরসভার ভেতরেই থাকি, কিন্তু মশা নিধনে কোনো কার্যক্রম দেখি না। দ্রুত মশক নিধন কর্মসূচি শুরু করা উচিত।’ অন্য রোগী কামরুন্নাহার বলেন, ‘আট দিন ধরে জ্বর। মাথা ঘোরে, খেতে পারি না, বমি আসে। কয়েকদিন আগে পরীক্ষা করিয়েছি, ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। আমাদের এলাকায় প্রায় সব বাড়িতেই ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে। আমাদের গ্রাম থেকে সাতজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’

রোগী আকলিমা খাতুন বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে জ্বর। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। চিকিৎসা ভালো পাচ্ছি। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে মশার ওষুধ ছিটানো হয় না, সে কারণেই আমরা অসুস্থ হচ্ছি। আমাদের গ্রামে অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।’ যশোর অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. মাহফুজুর রহমান সবুজ বলেন, ‘এ বছর আমাদের এখানে অনেক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। বিশেষ করে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বেশি রোগী এসেছে। সাধারণত নভেম্বরের মধ্যেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসে, কিন্তু এ বছর আশানুরূপভাবে কমানো সম্ভব হয়নি। শীতের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় মশার ব্রিডিং প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এ হাসপাতালে ৬৯১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এখনও ভর্তি আছে ১৯ জন। আমরা নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। আল্লাহর রহমতে এখনো পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।’

এদিকে সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা বলেন, ‘এ বছর ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যু নেই। বর্ষায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় তখন ডেঙ্গুর প্রকোপ তুলনামূলক কম ছিল। এখন বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার কারণে মশা জন্ম নিচ্ছে। আগে বৃষ্টির সময় মশা নিধন কার্যক্রম পুরোপুরি সক্রিয় ছিল না, কিন্তু এখন কার্যক্রম চলছে। ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত কিট উপজেলাসহ জেলা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। মানুষের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। জ্বর হলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা করতে হবে; নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।’ সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে অদ্যবধি জেলায় ১ হাজার ২২০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ১৭০ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version