বাংলার ভোর প্রতিবেদক
প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরনো কারাগার যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার। কারাগারের কয়েকটি পুরনো ভবনগুলোর দেয়ালে ফাটল ধরেছে। খসে পড়ছে ভবনের ছাদের পলেস্তারা। এমনকি নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে কারাগারের অতিগুরুত্বপূর্ণ কনডেম সেলও।
ভবনের পাশাপাশি পুরনো বৈদ্যুৎতিক সঞ্চালন ও পানির লাইনের অবস্থাও বেহাল। দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ এই কেন্দ্রীয় কারাগারটি এমন ভঙ্গুর অবস্থার কথা জানালেন খোদ কারাগারের জেল সুপার নুরশেদ আহমেদ ভুঁইয়া। রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে মাসিক সমন্বয় সভায় এমন তথ্য পেয়ে জেলা প্রশাসকসহ বিস্মিত হয়েছেন সভার অন্যান্য উপস্থিত কর্মকর্তারাও। ভবন সংস্কার কিংবা নির্মাণে উদ্যোগ না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসকসহ কয়েকজন কর্মকর্তাও। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম।
সভায় জেল সুপার নুরশেদ আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে কারাগার। অভিযোগ করে বলেন, কারাগারে ভিতরে পানির লাইন ও বিদ্যুত লাইনের ত্রুটি রয়েছে। কনডেম সেলে ফাঁসির আসামিরা পানি পাচ্ছে না।
হ্যালোজেন লাইটের অভাবে আলোর স্বল্পতায় থাকতে হচ্ছে। ফাঁসির সেলের ছাদ ও সুপারের বাসভবনের ছাদ যে কোনো সময় ধসে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। এতে তার জীবন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। একই সময়ে আসামিরা ঝুঁকিপূর্ণ পুরনো ভবনের ছাদ বা দেয়াল ভাংচুর করে পালিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি। ফলে দ্রুত তিনি ভবন ও নানা সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেন।
সভায় আগামী ডিসি সম্মেলন নিয়ে নানা বিষয় গুরুত্ব পায়। ডিসি সম্মেলনে যাওয়ার আগে জেলা প্রশাসক জেলার বেশ কিছু বিষয়ে প্রস্তাব পেশ করবেন বলে সভায় জানানো হয়। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে যশোর রোডকে সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড নামকরণ, জিআই পণ্য হিসেবে ফুল, মিষ্টি অন্তর্ভুক্তি, রাধা গোবিন্দ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ, গদখালি রেল স্টেশন চালু, রেল ক্রসিং এ ফ্লাইওভার নির্মাণ, ফুলের বাজারজাত ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য হিমাগার তৈরি, ভবদহের নাব্যতার জন্য প্রস্তাব, যশোর জেলাকে ট্যুরিস্ট হাব করা, মধুমেলাকে জাতীয় মেলা করা, মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতাল, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজাড়িত স্থান শনাক্ত ও রক্ষণাবেক্ষণ করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করা হবে।
মাসিক সমন্বয় সভায় পর পর তিন বার উপস্থিত না হওয়া দপ্তর প্রধানদের নোটিশ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বিভিন্ন দপ্তরের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুত শেষ করাসহ সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবা বা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালু রাখা, পৌরসভা এলাকায় ড্রেন ও স্ট্রিট লাইট সচল করা, দ্রুত মডেল সমজিদ নির্মাণ, কারাগারের পানির লাইন ও বিদ্যুৎ লাইনের টেকনিশিয়ান দেয়াসহ ফাঁসির সেলের ছাদ ও জেলারের বাসভবন মেরামত করা, এতিমদের ভাতার সুষ্ঠু ব্যবহার করা, এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা দেয়া, সরকারি অফিসের ভিতরের জায়গা অবৈধ দখল মুক্ত করা, সব ধরনের মোবাইল কোর্ট জোরদার, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত নিহতদের স্মৃতি স্মারক প্রকাশ, শিক্ষক ও ইমামদের ডাটা বেজ তৈরিসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ মাতৃদুগ্ধ পানের স্থান ও নিরাপদ পানি সরবরাহসহ একাধিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষ ৫ আগস্ট পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করেছে। ভালো কাজ করার মাধ্যমে পরিবর্তন করতে হবে। আমরা এখন গোল্ডেন আওয়ার পার করছি। কোথাও কোনো জনপ্রতিনিধি নাই। এমন সুযোগ কখনও আসবে না। কাজের মাধ্যমে দেশের মানুষের জন্য কিছু করার এখন সময়। মাসিক সমন্বয় সভার মিটিং করে এজেন্ডা রেজুলেশন করে রাখার মধ্যে কোনো উপকার নেই। আমাদের যার যার কাজ দায়িত্বের সাথে শতভাগ করতে হবে।
এসময় তিনি আরও বলেন, ডিমের ট্রান্সপোর্ট চালু হলেও তার সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ডিম কোল্ডস্টোরে মজুত করে থাকে। উৎপাদন ও চাহিদা ঠিক থাকলে ডিমের সংকট হওয়ার কথা না। প্রতিদিন উৎপাদিত ডিম বাজারজাত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও সিণ্ডিকেট ভাঙ্গতে কাজ করতে হবে।
জেলার কোথাও বাঁশের সাঁকো বা সাধারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলে জেলা প্রশাসন দ্রুত সেটা চলাচলের উপযোগী করে দেবে।
জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম শাহীনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই আলম সিদ্দিকী, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান, স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক ও পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হাসান, সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার, সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশীদ, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম।