বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সালেহা বেগম (৭৭) নামে এক বৃদ্ধার শরীরে দেওয়া হয়েছে অন্য গ্রুপের রক্ত। ফলে ওই রোগী শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। ঘটনাটি গত ২০ মে হলেও মঙ্গলবার (৪জুন) সকালে নতুন করে রক্ত দিতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। বর্তমানে ওই রোগী জেনারেল হাসপাতালের মহিলা পেয়িং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছে। তিনি যশোরের মণিরামপুর উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়নের খড়িঞ্চা হেলাঞ্চি গ্রামের মৃত শামসুর রহমানের স্ত্রী।
ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনেরা জানান, বাধর্ক্যজনিত রোগে গত ২০ মে যশোর মেডিকেল কলেজের মেডিসিন চিকিৎসক গৌতম কুমার আচর্য্যরে পরামর্শে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন সালেহা বেগমের স্বজনেরা। তারপর সালেহার রক্ত শূন্যতার কারণে রক্ত দেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। রক্ত প্রদানের জন্য হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে গিয়ে সালেহার রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করেন স্বজনেরা। সেখানে সালেহার রক্তের গ্রুপ আসে বি পজেটিভ (বি+)। ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের রক্তের গ্রুপ জেনে সালেহার স্বজনেরা বি পজেটিভ ডোনার খুঁজে সালেহার শরীরে রক্ত দেন। ২০ মে , ২২ মে ও ২৪ মে তিনদিন তিন ব্যাগ বি পজেটিভ ডোনারের মাধ্যমে সালেহাকে রক্ত দেয়া হয়। তিন ব্যাগ রক্ত দেয়ার পরে দুইদিন পর সালেহার পরিবার সালেহাকে গ্রামে নিয়ে যায়। গ্রামে গিয়ে সালেহার শরীরে গা জ্বালাপোড়া, বমিসহ খিঁচুনি শুরু হয়। এসব উপসর্গের কারণে স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে তাকে বিভিন্ন চিকিৎসা দেয়া হয়।
সর্বশেষ মঙ্গলবার বিকেলে অবস্থার অবনতি হলে আবারও যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক সালেহাকে আবারও রক্ত দেয়ার পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের পরামর্শে মঙ্গলবার সকালে বি পজেটিভ ডোনার নিয়ে সালেহাকে রক্ত দিতে গেলে সেই ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তারাই বলে সালেহার রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ না। তার রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ (এ+)। এর পর রোগীর বিষয়টি জানাজানি হলে হাসপাতালে হুলুস্থুল পড়ে যায়। রোগীর স্বজনেরা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হট্টগোল শুরু করে। পরবর্তীতে হাসপাতালের কর্মকর্তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
ভুক্তভোগী ওই রোগীর মেয়ে শিরিনা আক্তার বলেন, ‘২০ তারিখে এই হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে তারা বলে মায়ের রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ। তাদের কথামতো বি পজেটিভ ডোনার এনে মাকে তিন দিন তিন ব্যাগ রক্ত দিয়েছি। রক্ত দেয়ার পরে মাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। খিচুনি-বমিসহ শরীর দুর্বল হয়ে যায়। স্থানীয় ডাক্তারদের চিকিৎসা নিয়ে তিনি আরো অসুস্থ হয়ে যান। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল আবার হাসপাতালে নিয়ে এসে রক্ত দিতে গেলে ব্লাড ব্যাংক বলে মায়ের রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ না। তার রক্তের গ্রুপ এ+। বিষয়টি জানার পরে মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা। তিনি অভিযোগ করেন, ‘হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের ভুলের কারণে আমার মা এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তিনি এখন খুব অসুস্থ। তার শরীরের অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছে। কিছু খেতে পারছেন না। সুস্থ্য করার জন্য আমার মাকে হাসপাতালে এনেছি; এখন তার অবস্থা খারাপ। এই ঘটনার বিচার চাই।’
ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের ইনচার্জ চঞ্চল হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালের ওয়ার্ডের নার্সরা রোগীর রক্তের নমুনা দেয় স্বজনদের কাছে। তারা সেই নমুনা নিয়ে ব্লাড ব্যাংকে আসেন। এর পর পরীক্ষা করে ডোনারের রক্তের ম্যাচিং করে ডোনারের রক্ত নেয়া হয়। ডোনানের রক্ত টেনে স্বজনদের কাছে দিয়ে দেয়। তারা ওয়ার্ডের নার্সদের কাছে দিলে তারা রোগীর শরীরে প্রদান করে।
তিনি জানান, সালেহার রক্তের গ্রুপ পরিবর্তনের বিষয়টি কিভাবে হলো বুঝতে পারছি না। আমরা ধারণা করছি- একই নামে একাধিক রক্তের নমুনা সিরিঞ্জ ছিলো। নমুনা পরীক্ষাকালে এমন ভুল হতে পারে। আবার ওয়ার্ডের নার্সের রক্ত সংগ্রহকালে তারাও ভুল করতে পারে। এর আগেও একই নামে একাধিক রোগী থাকাকালে এমন ঘটনা ঘটেছে বলেও জানান তিনি।’
এ বিষয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. হারুন আর রশিদ জানান, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। রোগীর স্বজনরা মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করতে কমিটি করা হবে। কারো কোন গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’