বাংলার ভোর প্রতিবেদক
স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ বিদ্যুৎ বিল উঠার অভিযোগ ও সরকারি দপ্তরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করার ঘটনায় যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ কর্মকর্তারা তোপের মুখে পড়েছেন। রোববার দুপুরে জেলা মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিদের কাছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা এই তোপের মুখে পড়েন। নানা সময়ে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের অভিযোগ ও নোটিশ ছাড়াই সরকারি দপ্তরগুলোর সংযোগ বিছিন্ন করার ঘটনায় সভায় উপস্থিত সদস্যরা সমিতির মহাব্যবস্থাপককে শান্তির আওতায় আনার দাবি তুলেন। সভায় তাৎক্ষণিক কোন শাস্তি না দেয়া হলেও এই ঘটনায় শোকজ করা হবে জানান জেলা প্রশাসক।
বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে জেলা প্রশাসকের অমিত্রাক্ষরে জেলা মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভা শুরু হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার।
জানা গেছে, গত জুন মাসে সদর উপজেলার বসুন্দিয়া, কচুয়া ও নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের প্রায় ১৫ হাজার টাকা বিল বকেয়া ছিলো। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে অফিস তিনটিকে কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেন। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করার আগে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাদেরকে মুঠোফোনে সংযোগগুলো না কাটার অনুরোধ করলেও তারা শোনেননি।
বরং এসিল্যান্ডের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা। বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করার ফলে ওই তিনটি অফিসে জনগণের সেবা দিতে বেগ পেতে হয়। ফলে বিষয়টি নিয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উত্থাপন করেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রিপন বিশ্বাস। এমনকি তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে সরকারি অফিসের বিদ্যুৎ কেন বিছিন্ন করা হলো তার কৈফিয়ত চান? ক্ষোভের তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিল তো কোন অফিস নিজ পকেট থেকে দেয় না।
গেল দুই মাসে সরকারের অর্থবিভাগ থেকে ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলো কোন অর্থ পায়নি। তাই তারা বিদ্যুৎ বিল দিতে পারেনি। বারবার এসিল্যান্ড তাদের অনুরোধ করলেও তারা সংযোগগুলো কেটে দিয়েছে। এমনকি তারা এসিল্যান্ডদের সাথে খারাপ আচারণ করেছেন। পরবর্তীতে জেলায় কতগুলো সরকারি অফিসে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তথ্য অধিকার আইনে আবদেন করলেও তারা কোন তথ্য দেয়নি। ক্ষোভের স্বরে সভায় এই ঘটনার ব্যাখা জানতে চান ইউএনও। এর পরেই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিভেন্স যশোরের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ জেলা প্রশাসককে উদ্দেশ্য করে বলেন, যশোরের আটটি উপজেলাতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিভেন্স অফিসগুলোতে প্রতিমাসে ১৮ থেকে ২০ হাজার বিদ্যুৎ বিল আসে। কিন্তু বেনাপোল অফিসে গত জুনে এসেছে ৭৫ হাজার টাকা। হঠাৎ করে এতো বিদ্যুৎ বিল অর্থ দপ্তরে প্রেরণ করলে তারাও এই বিলের প্রতি অনাপত্তি জানাবে। পরবর্তীতে ভুতুড়ে এই বিদ্যুৎ বিলের কাগজ দেখে আমরা যোগাযোগ করি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তারা পরামর্শ দেন আগামি পাঁচ মাসে আপনাদের মিটারের কাগজে একটু একটু বাড়তি টাকা বসিয়ে দিয়ে পূরো টাকার ফিগার মিলিয়ে দিবো। বিষয়টি নিয়ে আমরা জটিলতায় রয়েছি।
এমন পরিস্থিতিতে উপস্থিত বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের সভায় ক্ষোভ প্রকাশ ও তীব্র সমালোচনা করেন জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম শাহীন। একই সঙ্গে সভায় উপস্থিত সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তারাও বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার সমালোচনা করেন। এ সময় উপস্থিত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ কর্মকর্তারা তোপের মুখে পড়েন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘সরকারি দপ্তর একে অন্যের পরিপূরক। বিভিন্ন সময়ে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের নানা অভিযোগ রয়েছে আমাদের কাছে। সরকারি দপ্তরের বিল সরকার দেয়। যখন সরকার বরাদ্দ দেয় তখন পরিশোধ করে। ফলে সরকারি দপ্তরগুলোতে কঠোর হয়ে পাবলিক সার্ভিস বিঘ্নিত করা উচিত হয়নি বিদ্যুৎ বিভাগকে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ যে কাজটি করেছে তার কারণে আমরা অনেক অ্যাকশনে যেতে পারতাম। তবে যাচ্ছি না। দ্রতুই সমিতির মহাব্যবস্থাপককে স্বশরীরে এর ব্যাখা দিতে বলার নির্দেশনা দেন। একই সাথে তিনি বলেন, মোবাইল অপারেটরগুলোর মতো জনগণ পল্লী বিদ্যুৎ অপারটের বা কোম্পানি পরিবর্তন করতে পারতো, তাহলে তারা আর পল্লী বিদ্যুৎ কোম্পানি ব্যবহার করতো না। পরিবর্তন করে অন্য কোম্পানি ব্যবহার করতো। ব্যবহারের চেয়ে দ্বিগুন বা অস্বাভাবিক বিলের কারণে মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন।
জেলায় পাট চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণোদনার যে পাটবীজ দেওয়া হয় কৃষকদের, সেটি আগ্রহ নেই কৃষকদের। ফলে সরকারের দেওয়া বীজ বিভিন্ন ইউনিয়ন কৃষি অফিসগুলোতে বস্তাবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। প্রণোদনার বীজ দপ্তরে পড়ে থাকায় সম্প্রতি শার্শার কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তাকে শোকজও করা হয়েছে। বিষয়টি সভায় উপস্থাপন করেন শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার রাজবংশী।
এর প্রতিউত্তরে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, কৃষকদের দেওয়া হয় লাল রঙের পাট বীজ। এই বীজ পরিপক্ক হতে সময় লাগে ১২০ দিন। অথচ বাজারে যে সাদা পাটের বীজ পাওয়া যায় সেটি পরিপক্ক হতে সময় লাগে ৮০ থেকে ৯০ দিন। ফলে লাল বীজের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ কম। তিনি বলেন, সাদা পাটের বীজ আসে ভারত থেকে। কখনো যদি ভারত আমাদের দেশে বীজ দেওয়া বন্ধ করে, তাহলে দেশে পাট চাষ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সরকার এই বীজ আমদানি কমাতে দেশের লাল বীজ চাষ বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছে। প্রণোদনা হিসাবে এই বীজ কৃষকদের দিচ্ছেন। তবে লাল পাটের মান ভালো। এই পাট চাষে সবাইকে আগ্রহী হতে হবে।
এদিকে, চলমান অস্থিরতায় যশোরের আইনশৃঙ্খলা সন্তোষজনক বলে জানান জেলা পুলিশ। চলমান অস্থিরতায় ও নরসিংদি কারাগারে বন্দি পালানো ও হামলার ঘটনায় যশোর কারাগারও ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কারাগারের সকল নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বন্দিদের ল্যান্ডফোনে ও সরাসরি সাক্ষাতকার বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন চলমান কাজের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান ও প্রতিনিধিরা তাদের চলমান সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় সেইসব সমস্যাগুলোও সমাধানে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী আছাদুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম শাহীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর ই আলম সিদ্দিকী, যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকসিমুল বারি অপু, প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন প্রমুখ।