♦ ভবন মালিককে গুণতে হবে প্রতিমাসে ৩শ’ টাকা
♦অতিরিক্ত বিল নিয়ে ক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ

প্রতীক চৌধুরী
যশোর পৌরসভার বাড়ি ও ভবনে অন্তত ১১ হাজার সাব-মার্সিবল পাম্প শনাক্ত করা হয়েছে। বিকল্প পানির উৎস হিসেবে এই সাব-মার্সিবল পাম্প ব্যবহার করছে নাগরিকরা। এবার সেই সাব-মার্সিবল পাম্প ব্যবহারের লাগাম টানতে যাচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ। প্রত্যেক ভবন মালিককে প্রতিমাসে গুণতে হবে ৩শ’ টাকা। যদিও প্রথম পর্যায়ে তিন হাজার বাড়ি ও ভবন মালিককে নোটিশ দেয়া হয়েছে। এ মাসের মধ্যেই বিল পরিশোধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নাগরিক সমাজ। এই বিল প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণার হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে। তবে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছে, পৌরসভার মাসিক সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিধি অনুসারে এই বিল ধার্য করা হয়েছে।

জানা যায়, ২০২৩ সালের ২২ মার্চ যশোর পৌরসভার মাসিক সভায় বাড়ি ও ভবন মালিকদের সাব-মার্সিবল পাম্প ব্যবহারে ফি আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর পৌর এলাকায় জরিপ চালিয়ে সাব-মার্সিবল পাম্প ব্যবহারকারী ১১হাজার বাড়ির মালিক ( হোল্ডিং) শনাক্ত হয়। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে তিন হাজার বাড়ির মালিককে সাব-মার্সিবল পাম্প ব্যবহার বাবদ প্রতি মাসে ৩শ’ টাকা হারে ফি পরিশোধের জন্য নোটিশ করা হয়েছে। চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি মেয়র হায়দার গণি খান পলাশ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌরসভা পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা ২০২৩ মোতাবেক যেখানে পৌরসভা কর্তৃক পানি সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে পৌর পরিষদের অনুমোদন ব্যতিত অন্য কোন উৎস হতে পানি সংযোগ গ্রহণ করা যাবে না। সেই কারণে ২০২৩ সালের ২২ মার্চ পৌর পরিষদের মাসিক সভায় যশোর পৌর এলাকায় বাসাবাড়ি বা অন্য ভবনে স্থাপিত সাব মার্সিবল পাম্পের জন্য ভবন মালিককে মাসিক ৩শ’ টাকা বিল পরিশোধ করতে হবে। এই চিঠি নাগরিকদের হাতে পৌঁছানোর পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে যশোর শহরের বাসিন্দা ও সাংস্কৃতিকর্মী নওরোজ আলম খান চপল বলেন, যশোর পৌরসভার নাগরিকরা নিয়মিত পৌর কর পরিশোধ করে থাকে। এই কারণে সেবা প্রদান করবে পৌরসভা। দুইশত বছরের পুরাতন বসতি এলাকায় গেলে দেখতে পাবেন পানি নেই, ড্রেন নেই। ভাঙাচোরা রাস্তায় নাজেহাল অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে আবার নতুন করে সাব-মার্সিবল বিল জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া অযৌক্তিক। এটা চাঁদাবাজির শামিল।

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বাম নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, পৌরসভায় নিয়মিত কর নেয়। তার ভিতরে ১০ শতাংশ পানি কর। এছাড়া সাপ্লাইয়ের পানি বাবদ মাসে প্রায় ৩শ’ টাকা বিল নেয়। কিন্তু নাগরিকরা ঠিকমত পানি পায় না। নাগরিকরা বাধ্য হয়ে নিজ খরচে সাব-মার্সিবল পাম্প স্থাপন করেছে। সেই সাব-মার্সিবল পাম্প বাবদ প্রতি মাসে ৩শ’ টাকা ফি ধার্য্য করেছে পৌরসভা। এটা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। একই মুরগি তিনবার জবাই দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৌরসভা। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় নাগরিক সমাজ বৃহত্তর কর্মসূচি দিবে।

জানতে চাইলে যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি) বিএম কামাল আহমেদ বলেন, এক বছর আগের মাসিক সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক পৌর এলাকার ১১ হাজার বাড়ি মালিক শনাক্ত করেছি। যারা সাব-মাসিবল ব্যবহার করছেন। এদের মধ্যে তিন হাজার বাড়ির মালিককে সাব-মার্সিবল পাম্প বাবদ প্রতিমাসে ৩শ’ টাকা বিল পরিশোধের নোটিশ দেয়া হয়েছে। বাকিদের পর্যায়ক্রমে নোটিশ দেয়া হবে। এটা আইন অনুযায়ী আদায়ের নোটিশ করা হয়েছে। আমরা কম ফি ধার্য্য করেছি। ঝিনাইদহ পৌরসভায় ৫শ’ ও কুষ্টিয়া পৌরসভায় ৮শ’ টাকা আদায় করা হয়। সেই হিসেবে আমাদের পৌরসভায় ৩শ’ টাকা অনেক কম।
যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শরীফ হাসান বলেন, পৌরসভা থেকে পানি নেয়া বাধ্যতামূলক। অন্য কোন উৎস থেকে পানি নিলে ফি দিতে হবে, এটাই আইনে আছে। এটা শুধু যশোর পৌরসভা নয়, সব পৌরসভার জন্য প্রযোজ্য। যশোর পৌরসভা অনেক দেরিতে সাব-মার্সিবল পাম্প বিল আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে।

Share.
Exit mobile version