♦ মেয়রের পদত্যাগ দাবিতে হরিজনদের ঝাড়ু মিছিল

♦ বিকল্প ব্যবস্থায় শহর পরিস্কারের ঘোষণা পৌরসভার

প্রতিবেদক
যশোর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী দু’পক্ষই কঠোর অবস্থানে রয়েছে। হরিজন পল্লীর বিদ্যুত সংযোগ পুনঃস্থাপনের দাবিতে তিন দিন ধরে তারা কর্মবিরতি পালন করছে। গতকাল দাবি আদায় ও পৌর মেয়রের পদত্যাগ দাবি করে শহরে ঝাড়ু মিছিল করে হরিজনরা। আর পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, হরিজন পল্লীর বিদ্যুত বিল তাদেরকেই পরিশোধ করতে হবে। বিকল্প ব্যবস্থায় ময়লা পরিস্কার করা হবে। তবুও হরিজনদের দাবি মানা হবে না। দু’পক্ষের এই কঠোর অবস্থানে পৌর নাগরিকরা পড়েছেন বিপাকে। ময়লা আবর্জনা পরিস্কার না হওয়ায় গোটা পৌর এলাকা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। পৌরবাসী দ্রুত সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্দোলনের চতুর্থ দিন আজ (বুধবার) দুপুরে হরিজন পল্লীর বাসিন্দারা ঝাঁড়ু মিছিল করে। টানা ৪ দিনের এই আন্দোলনে বেতন ভাতা বৃদ্ধিসহ বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রতিস্থাপনপূর্বক নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রদানের জোর দাবি জানান তারা। এ সময় হরিজন পল্লীর শত শত বাসিন্দা সড়ক অবরোধ করে মেয়রের পদত্যাগ দাবিরও শ্লোগান দেন।
আন্দোলনরত হরিজনরা জানিয়েছেন, যশোর পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসাবে দৈনিক ১০০ টাকা মজুরিতে পাঁচ শতাধিক হরিজন কাজ করে থাকেন। এরা শহরের বড় বাজার, রেলবাজার ও খুলনা স্ট্যান্ড তালতলা এলাকায় বসবাস করেন। পূর্বপুরুষদের পেশা হিসেবে তারা পৌরসভায় পরিচ্ছন্ন কর্মীর কাজ করে আসছেন। দিনে দিনে সবকিছুর উন্নতি হলেও তাদের জীবন মানের উন্নয়ন হয়নি। সরকারি তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা তারা পাননা। পৌরসভা থেকে জায়গা দিলেও ঘর করে দেয়নি। দৈনিক ১০০ টাকা মজুরিতে তারা কাজ করেন। তাদের পূর্বপুরুষরা কখনও বিদ্যুৎ বিল দেয়নি। পৌরসভা বিদ্যুৎ বিলের ব্যয়ভার বহন করত। কিন্তু বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি রেলস্টেশন হরিজন কলোনীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এই ঘটনার পর তারা আন্দোলনে নামেন। আর গত তিনদিন ধরে তাদের কাজ বন্ধ রাখে। বুধবার ৪র্থ দিনের মত কাজ বন্ধ করে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
হরিজন নেতা মতিলাল বলেন, এখনও পর্যন্ত তাদের সাথে পৌর মেয়র কোনো আলোচনা করেননি। তাদের দাবি না মেনে নিলে তারা কাজ করবেন না। কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
যশোর পৌরসভা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিরন লাল সরকার বলেন, বর্তমান মেয়র আমাদের সাথে আলোচনা না করে রেল স্টেশন এলাকার হরিজন কলোনির বিদ্যুৎ এর লাইন গত তিন দিন ধরে বিচ্ছিন্ন রেখেছেন। তার প্রতিবাদে আমরা পরিচ্ছন্ন কর্মীরা পৌরসভার সকল পরিচ্ছন্নের কাজ বন্ধ রেখেছি। সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মবিরতিসহ আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
এদিকে, গত তিনদিন ধরে ময়লা আবর্জনা পরিস্কার না হওয়ায় গোটা শহর ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। হরিজনরা গত তিন দিন ময়লা-আবর্জনা অপসারণ বন্ধ করে রেখেছেন পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। এতে বিভিন্ন সড়কের পাশে বর্জ্যরে স্তুপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সাধারণ পথচারীরা ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে চলাচল করতে পারছেন না। শহরের রেলগেট তেঁতুলতলা এলাকার বাসিন্দা ওয়াসিম হোসেন বলেন, পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ময়লা না নিয়ে যাওয়ায় পশু-পাখিতে এসব ময়লা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলছে। এতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া দরকার।
পৌরবাসীর প্রশ্ন, পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দ্বন্দ্বের কারণে কেন তারা সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। তারা তো নিয়মিত পৌরসভার কর পরিশোধ করে আসছেন।এদিকে আজ (বুধবার) বিকেলে পৌরসভার পক্ষে থেকে এই ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেন পৌর মেয়র মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনি খান পলাশ। তিনি বলেন, আমরা সব কাউন্সিলররা মিলে বসে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা নিজেরা কিছু লোক নিয়োগ দিয়ে ও প্রশাসনকে সাথে নিয়ে ডাস্টবিনগুলো পরিস্কার করাবো। তিনি আরো বলেন, আমরা নাগরিক সুবিধা দেয়ার জন্য যা যা করার দরকার সেটা করব।
পৌর মেয়র আরও বলেন, যশোরের প্রেক্ষাপটে এখন আর হরিজনদের দরকার হয় না। তবুও ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য তাদের বেতন বাড়িয়ে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু পৌরসভার উন্নয়নের টাকা দিয়ে তাদের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করলে পৌর উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা পৌর কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করে দেবে। কিন্তু এরপর থেকে তাদের বিদ্যুৎ বিল তাদেরকেই দিতে হবে।

Share.
Exit mobile version