বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের মন্দির মণ্ডপে বেজে গেছে মায়ের বিদায়ের ঘণ্টা। হাসিমুখে দেবী দুর্গাকে বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভক্তরা। বাঙালি সনাতন ধর্মবিশ্বাসীদের সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজা উপলক্ষে শারদীয় উৎসবের আজ রোববার সমাপনী।
শনিবার মহা নবমীর পূজার পর মহা দশমীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই সাথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মন্দিরে হয়েছে দেবীদুর্গার দর্পণ নিরঞ্জন। তবে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে যশোর রামকৃষ্ণ আশ্রমে আজ সকাল ৯ টা ৩৯ মিনিটের মধ্যে হবে মহাদশমী কল্পারম্ভ পূজা সমাপন ও দর্পণ নিরঞ্জন। এরই মধ্যে মর্ত্যলোক ছেড়ে কৈলাসে ফিরে যাবেন দেবী দুর্গা। আর সেজন্য ভক্তদের মধ্যে আছে বিষাদের ছায়া।
এদিকে উৎসবের চতুর্থ দিন শনিবার মাঙ্গলিক ধর্মীয় আচারানুষ্ঠানসহ দেবীদুর্গার মহানবমী পূজা সম্পন্ন ও মহা দশমী পূজা হয়েছে। এ দিন সকাল ৬টা থেকে হয় নবমী বিহিত পূজা। ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ, ঘি দিয়ে যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে দেয়া হয় আহুতি।
সনাতন ধর্মমতে, নবমীর পুণ্য তিথিতে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে বিশ্বে শুভ শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন দেবী দুর্গা। নবমী তিথি শুরু হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। দেবীর প্রতি ১০৮টি পদ্মফুল উৎসর্গ, অসুর শক্তি বিনাশ করে দেশবাসীর মঙ্গল কামনায় হোমযজ্ঞ, অঞ্জলি প্রদানের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয় মহানবমী। এ সময় মাতৃবন্দনায় মেতে ওঠেন ভক্তবৃন্দ। পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে তাদের অর্ঘ্য দেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার কমল চরণে। তিথি অনুযায়ী সন্ধিপূজা আয়োজিত হয়েছে শুক্রবার। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট সর্বমোট ৪৮ মিনিটে সন্ধিপূজা হয়। এ সময় মূলত দেবী চামুণ্ডার পূজা করা হয়। এই সময়েই দেবী দুর্গার হাতে বধ হয়েছিল মহিষাসুর, আর রাম বধ করেছিলেন রাবণকে। এই দিনই দুর্গাপূজার অন্তিম দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ পরের দিন কেবল বিসর্জনের পর্ব। নবমীর রাতে উৎসবের রাত শেষ হয়। আর দশমী রাতে মণ্ডপে মণ্ডপে বিদায়ের ঘণ্টা বাজে।
দশমীর পূজা সম্পন্ন শেষে দুর্গা পূজায় সবশেষ রীতিটি হচ্ছে ‘দেবী বরণ’। এটি শুরু হয় বিবাহিত নারীদের সিঁদুর খেলার মাধ্যমে। বিবাহিত নারীরা সিঁদুর, পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গা মাকে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর একে-অপরকে সিঁদুর মাখিয়ে দেন। তারা এই সিঁদুর মাখিয়ে দুর্গা মাকে বিদায় জানান। আর প্রত্যাশা করেন, সারাটা বছর যেন এমন সুখ আর আনন্দেই কাটে।
প্রবীণ শিক্ষক তারাপদ দাস জানান, ‘বিবাহিত নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন নারীরা নিজ কপালে সিঁদুর লাগান এবং সেই সিঁদুরের কিছু অংশ দিয়ে দেবীর চরণ স্পর্শ করে থাকেন। তারপর সবাই মিলে একে অপরকে সিঁদুর মাখেন। দুর্গা আগামী বছর আবার সাথে করে শাঁখা-সিঁদুর সঙ্গে নিয়ে আসবেন এবং সেই শাঁখা সিঁদুর ধারণ করেই স্বামীর মঙ্গল হবে এই বিশ্বাসে ভক্তরা সিঁদুর নিয়ে বিজয়া দশমী উদযাপন করেন। এই উৎসবের নামই সিঁদুর খেলা।’
এদিকে বিগত বেশ কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও রোববার যশোর পৌরসভার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় লালদিঘিতে প্রতিমা নিরঞ্জনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন জানান, বিকেল ৫টা থেকে লালদিঘিতে বরাবরের মত নৌকায় করে প্রতিমা নিরঞ্জন হবে।
সরেজমিনে, শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে যশোর পৌর এলাকার ৫০টা পূজা মন্দির ও মণ্ডপ সংলগ্ন রাস্তার পাশে বিভিন্ন পসরা নিয়ে মেলায় সকল দর্শনার্থীদের ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। বিশেষ করে বেজপাড়া এলাকায় শহীদ সুধির বাবু কাঠগোলা মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে গয়ারাম, নিউ গয়ারাম সড়ক, বেজপাড়া পূজা সমিতি মন্দির সংলগ্ন এ মেলা সকলের নজর কাড়ে। এছাড়া সুসজ্জিত তোরণ আর বৈদ্যুতিক রঙিন আলোক সজ্জায় আলোকিত হয়ে ওঠে সকল মন্দির-মণ্ডপ প্রাঙ্গণ।