স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ

  •  ১৫ মাসে ৩৫টি দুর্ঘটনা
  • শহরের সৌন্দর্য নষ্ট

বুধবার সকালে শহরের ঘোপ বেলতলা এলাকায় একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই খুঁটিতে থাকা তারের কুণ্ডলীতে দাউ দাউ আগুন জ্বলতে শুরু করে। আতংক ছড়িয়ে পড়ে এলাকাবাসীর মাঝে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পৌঁছানোর আগে স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কয়েকদিন আগে শহরের পাইপপট্টিতে একটা বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আগুন লাগে। সেদিনও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। শুধু বেলতলা কিংবা পাইপপট্টির অগ্নিকাণ্ড নয় গত ১৫ মাসে যশোর শহরে এমন ৩৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যশোর শহরের সড়ক ও বাজারের বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোতে ইচ্ছামত তারের লাইন টানায় শহরের সৌন্দর্য্য নষ্টের পাশাপাশি মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ডিস লাইন ও ইন্টারন্টে সংযোগের তার (ক্যাবল) এলোমেলোভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে জড়িয়ে থাকায় প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।

যশোর ফায়ার সার্ভিস এণ্ড ডিফেন্সের অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যশোরে বিদ্যুতের খুঁটির মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে ২৮ টি। চলতি বছরে মার্চ পর্যন্ত ৭ টি ঘটনা ঘটেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী চক্র ডিস ও ওয়াইফাই সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। রাজনৈতিক ও স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এসব চক্র নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে এলোমেলোভাবে তার সংযোগ স্থাপন করছে। যা বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ন ছাড়াই পরিচালিত হয়।

শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে অতিরিক্ত তারের কারণে অনেক জায়গায় আগুন লেগে তার গলে গেছে। এমনকি বৈদ্যুতিক সরঞ্জামও নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব তারের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি যেমন বাড়ছে, তেমনি শহরের সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে।

বেজপাড়া এলাকার আতিকুর রহমান নামে একজন ভুক্তভোগী জানান, খুঁটিতে আগুন লাগার কারণে তাদের বাড়ির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নতুন করে তার কিনে সংযোগ নিতে হয়েছে। মালামালসহ মজুরি খরচ বাড়তি গুণতে হয়েছে।
চুড়িপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী অসীম সাহা বলেন, বিদ্যুতের খুঁটিতে তারের জটলা করা। আমরা ভয়ে থাকি কখন কি দুর্ঘটনা ঘাটে। মাঝে মাঝে রাস্তায় তার পড়েও থাকে চলাচলে সমস্যাও দেখা দেয়।

শহরের বেলতলা এলাকার বাসিন্দা এমএ রউফ বলেন, হঠাৎ বিদ্যুতের খুঁটিতে আগুন ধরে যায়। এলাকাবাসীর চেষ্টার পর আগুন নিভে যায়। আগুনে সব সংযোগ পুড়ে গেছে। নিজের খরচে সংযোগ চালু করতে হবে। আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই।

যশোর ফায়ার সার্ভিস এণ্ড ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন মাস্টার ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত সতর্ক করছি। বিভিন্ন সভা, সেমিনারে সচেতন করছি। কিছু দিন আগে শহরের নিটল প্লাজার পাশে আগুন ধরে। আমরা তাৎক্ষণিক আগুন নিয়ন্ত্রণ করি। আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ছড়িয়ে পড়ত।’

এ প্রসঙ্গে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী নাসির উদ্দীন বলেন, যত্রতত্র তারের কারণে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। লাইন মেরামতের সময় আমরাও সমস্যায় পড়ি। বাড়তি তার কেটে বাদ দিতে হয়।

তবে, বিদ্যুৎ বিভাগের করণীয় বা পদক্ষেপ কি জানতে চাইলে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি তিনি।
এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার শহর পরিকল্পনাবিদ সুলতানা সাজিয়া বলেন, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে তারের জঞ্জাল থাকায় শহরের সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে সঞ্চালন লাইন। পিডিবি’র অবশ্যই এটা বন্ধ করা উচিৎ।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মাস্টার প্লানে আছে পৌরসভার ভিতরে আন্ডারপাস লাইন। কিন্তু পর্যাপ্ত বাজেটের অভাবে কাজটা করা সম্ভব হচ্ছে না। বড় কোনো প্রজেক্ট পেলে কাজটা করা সম্ভব।’

যশোর ফায়ার সার্ভিস এণ্ড ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, যেকোনো কভারবিহীন ক্যাবল সংযোগ ঝুঁকিপূর্ণ। ডিস, ওয়াইফাই লাইন বিদ্যুতের খুঁটির সাথে সংযোগের কারণে লাইন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। রাবার দাহ্য বস্তু হিসেবে কাজ করে। যে কারণে তাৎক্ষণিক আগুন ধরে। ডিস ও ওয়াইফাই তারের জন্য আগুন সহজে বিস্তার করে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, বিদ্যুতের খুঁটির সাথে এমন কোনো ঝুঁকিপূর্ণ তার যুক্ত রাখা যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে ডিস ও ওয়াইফাইয়ের জন্য আলাদা লাইন টানতে হবে।

যশোর পৌরসভার প্রশাসক রফিকুল হাসান বলেন, বিষয়টি অবগত আছি। পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version