এস এম জালাল
মঙ্গলবার সকাল ৮টায় শুরু, রাত ৮ টায় শেষ। যশোর শহরের দড়াটানা মোড়ে ২০ ফিট ছোট্ট একটি প্যান্ডেল বানিয়ে বসে আছেন দশ থেকে বারো জন নেতা। সেখানে একটি ব্যানার ও বড় টেবিল সাজিয়ে বসে আছেন তারা। তারা সবাই জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতা। সামনেই জনাদশেক লোকের জটলা। সেখানে জামায়াত নেতারা সংগঠনের নতুন সহযোগী সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
মাইকে নেতারা পথচারীদের অনুরোধ জানাচ্ছেন তাদের সংগঠনের সদস্য হতে। দিচ্ছেন লিফলেট। মাইকে বাজছে দলীয় সঙ্গীত। দুয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা সংগঠন সম্পর্কে মৌলিক কিছু কথাবার্তা বলছেন।
পথচারীদের কেউ কেউ উদ্বুদ্ধ হয়ে প্যান্ডেলে ঢুকে জামায়াতের সহযোগী সদস্যের ফরম পূরণ করে একটি টোকেন নিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার দিনব্যাপি দড়াটানা মোড়ের ১২ ঘন্টা ক্যাম্পেইনে সহযোগী সদস্য হয়েছেন ৬৩৭ জন। সকলকে আপ্যায়ন করা হয়েছে শরবত দিয়ে। এ চিত্র শুধু যশোর শহরের দড়াটানা নয়, জেলার প্রতিটি উপজেলায় এই কর্মসূচি হয়েছে।
যশোর অঞ্চল ভাগ করে জামায়াত নেতারা সহযোগী সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এ ‘গণসংযোগ পক্ষ’ কার্যক্রম আজ (৩০ এপ্রিল) পর্যন্ত চলবে। দেড় দশক পর দলটি প্রকাশ্যে গণসংযোগ পক্ষ সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। শহরসহ যশোরের বিভিন্ন উপজেলায় কয়েক শত ক্যাম্পেইনের এ কার্যক্রম করছে দলটি।
জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতারা জানান, যশোরের সর্বস্তরের মানুষের ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। এ পর্যন্ত কতজন দলের সহযোগী সদস্য হয়েছে তা জানতে চাইলে জেলা জামায়াতের প্রচার সেক্রেটারি অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন বিশ্বাস জানান, তা জানাতে সময় লাগবে। তবে ব্যাপক সাড়া ছিল ।
২৯ এপ্রিল যশোরে দড়াটানা মোড়ে সহযোগী সদস্য হিসাবে ফরম পূরণ করেছেন ৬৩৭ জন। আর প্রচারপত্র বিলি হয়েছে ৫ হাজারে বেশি বলে জানান পেশাজীবী থানার সভাপতি খন্দকার রশিদুজ্জামান রতন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ সদস্য হতে কোন আইডি কার্ড লাগছে না। যে কেউ তার নাম ঠিকনা দিয়েই সদস্য হতে পারবেন।
জামায়াতের সহযোগী সদস্য ফরমের শুরুতেই লেখা আছে-‘আমি… (ব্যক্তির নাম) বিশ্বাস করি যে, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করিতে হইলে শাসন-ক্ষমতা ধার্মিক, চরিত্রবান ও নিঃস্বার্থ লোকদের হাতে থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল স্তরে এ ধরনের সৎ ও যোগ্য লোকের শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করিতেছে বলিয়া এই সংগঠনকে আমি আন্তরিকভাবে সমর্থন করি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসাবে গড়িয়া তুলিবার উদ্দেশ্যে আমি জামায়াতে ইসলামীর সহিত সহযোগিতা করিব। আমার জীবনকে নৈতিক দিক দিয়া উন্নত করিবার জন্য সর্বদা চেষ্টা করিব। এ জন্যই আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সদস্য হইলাম।’
ফরম পূরণ শেষে যাওয়ার সময় কথা হয় মধ্যবয়স্ক ব্যক্তির সাথে। তিনি বলেন, নিজের ইচ্ছায় ত্যাগের দলের একটা ফরম পূরণ করেছি। পাশেই থাকা ব্যক্তি আফজাল হোসেন জানান, তিনি জামায়াতের গঠনতন্ত্র পড়ছেন। বিভিন্ন বিষয় দেখছেন। পছন্দ হলে সদস্য ফরম পূরণ করবেন। তার কাছে কার্যক্রম ব্যতিক্রম মনে হয়েছে।
প্রায় দেড় দশক পর যশোরে জামায়াতের এমন সদস্য সংগ্রহের কার্যক্রমে গিয়ে দেখা যায়, পথচারীদের দলীয় গঠনতন্ত্রসহ বিভিন্ন প্রকাশনা দিচ্ছেন কর্মীরা। দায়িত্বশীল নেতারা আগ্রহী মানুষের নানা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন। লিফলেট নিয়ে ঘুরে ঘুরে মানুষের কাছে জামায়াতের দাওয়াত পৌঁছে দিচ্ছেন এবং তাদের দলে শামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। ‘আল্লাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই’ স্লোগান সামনে রেখে গ্রামগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সদস্য সংগ্রহ অভিযান ও লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম চলছে।
মঙ্গলবার সকালে যশোর শহরের দড়াটানা ভৈরব চত্বরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পেশাজীবী থানার উদ্যোগে আয়োজিত সহযোগী সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যশোর জেলা আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুল বলেছেন, সৃষ্টি যার, আইন চলবে তার। আল্লাহ যুগে যুগে নবী রসুল পাঠিয়েছেন সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য। দুর্নীতিমুক্ত দেশ চাইলে যে দলের মধ্যে দুর্নীতি নেই সেই দলকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পাঠাতে হবে।
জামায়াতের দুইজন শীর্ষ নেতা মন্ত্রী থাকাকালে তাদের বিরুদ্ধে চরম বিরোধীরাও দুর্নীতির কোন অভিযোগ তুলতে পারেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, একমাত্র জামায়াতে ইসলামী পরীক্ষিত দুর্নীতিমুক্ত দল। তাই দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে হলে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া বিকল্প কোন দল নেই। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জামায়াত জনগণের খাদেম ও রাষ্ট্রের পাহাদার হবে উল্লেখ করে অধ্যাপক গোলাম রসুল আরও বলেন, জামায়াত সেই সমাজ ব্যবস্থা চায় যেখানে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল মানুষ সমান নাগরিক অধিকার পাবেন, এটাই ইসলামের শিক্ষা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্যবসায়ী ফোরামের সভাপতি মাওলানা আবুল কাশেম। উপস্থিত ছিলেন, পেশাজীবী থানার সভাপতি খন্দকার রশিদুজ্জামান রতন, মণিরামপুর জামায়াতের আমীর অধ্যাপক ফজলুল হক, পেশাজীবী থানার সেক্রেটারি আবু ফয়সাল বিশেষ অতিথি ছিলেন। ব্যবসায়ী ফোরামের সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর কবির সোহেলের পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পেশাজীবী থানার অফিস সেক্রেটারি গাওসুল আযম, তারবিয়াত সম্পাদক সৈয়দ শামসুল ইসলাম, সমাজকল্যাণ সম্পাদক রেজওয়ান হোসেন, মো. হাসানুজ্জামান, রাসেল সরোয়ার, মোজাম্মেল খান, রবিউল ইসলাম, হাবিবুর রহমান হিমেল প্রমুখ।