রাজগঞ্জ প্রতিনিধি
মণিরামপুর উপজেলা রাজগঞ্জ অঞ্চলে কমছে খেজুর গাছ, অন্যদিকে হারিয়ে যাচ্ছে গাছি। এক সময় গ্রামে গঞ্জে, পাড়া মহল্লা গ্রাম ঘুরে ঘুরে খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করতো গাছিরা। কিন্তু গত কয়েক বছর গাছি সংকটে অসংখ্য খেজুর গাছ অনাবাদী পড়ে থাকছে।
এদিকে, অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি টাকা লাভের আশায় ইটভাটায় মালিকদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে খেজুর গাছ। উপজেলার চালুয়াহাটি ইউনিয়নসহ প্রতিটি গ্রামে অসংখ্য খেজুর গাছ ছিল। তখন প্রতিটি গ্রামে গড়ে উঠা ৮ থেকে ১০জন করে পেশাদার গাছি পাওয়া যেত। গাছিদের পেশা বদল ও নতুন করে এ পেশায় কেউ না আসার কারণে একেবারেই হারিয়ে যাচ্ছে গাছি। বর্তমানে প্রতি গ্রামতো দূরে থাক কয়েক গ্রাম খুঁজলেও পেশাদার একজন ভাল গাছির সন্ধান মেল না। যদিও আগের তুলনায় খেজুর গাছের সংখ্যা কমেছে। তারপরও যা আছে তা থেকে রস সংগ্রহকারী ভাল গাছি নেই। গাছির অভাবে প্রায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যায় না। আর টাকার লোভ দেখিয়ে এই অনাবাদি গাছগুলো অবৈধ ইটভাটার মালিকরা কিনে নিয়ে যায়। রোপণ কম, অনাবাদি পড়ে থাকা অনাগ্রহ, ভেজাল গুড় তৈরিসহ নানা কারণে যেমন খেজুর গাছ হ্রাস পাচ্ছে।
চালুয়াহাটি গ্রামের মশিয়ার মোড়ল, নওবালি মোড়লসহ অনেকেই বলেন, ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করেছি। একজন পুরনো গাছি হিসেবে বলেন, আগের মতো এলাকায় খেজুর গাছ নেই। আর খেজুর গাছ কেটে এখন পেট চলে না। হায়াতপুর গ্রামের গাছি আব্বাস বলেন, গাছির পেশায় সংসার চলে না, তাই এখন ওসব বাদ দিয়ে মাঠের কাজে নেমেছি। লক্ষাণপুর গ্রামের গাছি বজলু গাজী বলেন, প্রায় ১৫- ২০ বছর যাবত আমি এই পেশায়। আগে আমার নিজের প্রায় শতাধিক খেজুর গাছ ছিল রসের মৌসুমে গ্রামের তিনজন পেশাদার গাছি বছর চুক্তি হিসেবে নিয়োজিত ছিল। আমি নিজেও তাদের সঙ্গে নিয়ে গাছির কাজ করতাম সে-সব গাছিরা পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। রক্ষণাবেক্ষণ আর গাছির অভাবে আমার গাছ কমতে কমতে এখন মাত্র ৫০-৬০টিতে দাঁড়িয়েছে। আটঘরা গ্রামের গছি আ. সালাম মোল্লাকে (ভোলা) খেজুর গাছে ভাড় নিয়ে উঠতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ২৫-৩০বছর ধরে গাছির পেশায় আছি, আমার বাবাও একজন গাছি ছিলেন। তবে এ পেশায় এখন আর বেশি মানুষ নেই।
শীত আসলেই সকালে খেজুরের রস এবং মুড়ি ছিল গ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। তখন এক কেজি খেজুরের গুড়ের দাম ছিল ৩০-৪০টাকা। বর্তমানে বাজারে ১ কেজি গুড়ের মূল্য ৩৫০-৪০০শত টাকা। তখন গুড় বিক্রি করে চলতো গাছিদের সংসার। দুপুর হলেই গাছিরা হাঁড়ি নিয়ে ছুটে যেতেন গ্রামের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায়। এ বিষয়ে সকল গাছিই একসূরে বলেন, আমাদের যশোর খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত হলেও এখন আর আগের মতো খেজুর গাছ নেই, রস ও গুড়ের চাহিদাও মেটে না। খেজুর গাছ রসের উপযোগী করে তৈরি করতে গাছির প্রয়োজন, কিন্তু গাছিদের এখন আর দেখা যায় না। আগে হেমন্তের শেষ ও শীতের শুরুতেই গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন খেজুর গাছ নিয়ে।
মণিরামপুর উপজেলা চালুয়াহাটি ইউনিয়ন কৃষি উপসহকারী মারুফুল হক, হাবিবুর রহমান বলেন, দিনে দিনে ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে খেজুর গাছ। সেই সঙ্গে গাছির সংখ্যাও একেবারে কমে গেছে, খেজুর গাছ কেটে রস বের করা একটা শিল্প। কিন্তু সেই শিল্পী পেশাদার গাছি এখন তো চোখেই পড়ে না। কতজন গাছি টিকে আছেন তারও পুর্ণাঙ্গ তালিকা নেই, নতুন করে তালিকা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান খেজুরগাছের সঠিক পরিচর্যার পাশাপাশি নতুন করে খেজুরগাছ রোপণ করা জরুরি।
শিরোনাম:
- আলুর দাম লাগামহীন ভোক্তার নাভিশ্বাস
- শীতে ফুটপাতে গরম কাপড় বিক্রির ধুম
- একটা সংস্কার কমিটি দিয়ে সংবিধান সংস্কার সম্ভব না: মির্জা ফখরুল
- নিখোঁজের ৩ দিন পর কপোতাক্ষ নদে মিলল বৃদ্ধার মরদেহ
- কৃষ্ণনগরে আরাফাত কোকো স্মৃতি ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন রতনপুর
- পাখির সাথে মানুষের ভালোবাসার গল্প !
- সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখবে বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা
- যশোর মটর পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন সংস্কার ও উন্নয়ন পরিষদের পক্ষে ২৭টি মনোনয়নপত্র ক্রয়