সাতমাইল প্রতিনিধি
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারে তিন বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে অবস্থিত প্রাচীন শহর মোহম্মদাবাদ। ১৯৯৩ সালে মাটি খুঁড়ে সেখানে ১৫টিরও বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সন্ধান মেলে।
বেশিরভাগই ৭০০ বছরেরও বেশি পুরাতন মসজিদ। শহর মোহাম্মদাবাদের পুরনো ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, প্রাচীনকালে বারোবাজারের নাম ছিল ছাপাইনগর। বারোজন সহচর নিয়ে খানজাহান আলী সেখানে যান।
সেখান থেকেই এর নাম বারোবাজার। সেখানে খানজাহান আলী বেশ কিছু মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। যুদ্ধ কিংবা মহামারিতে একসময় ধ্বংস হয়ে যায় বারোবাজার। থেকে যায় প্রাচীন ইতিহাস।
ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের পশ্চিম পাশে এক গম্বুজ বিশিষ্ট পাঠাগার মসজিদ। লাল ইটের তৈরি এই মসজিদ আকারে ছোট। দীর্ঘদিন মাটি চাপা পড়ে থাকার পর ২০০৭ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটি সংস্কার করে।
জনশ্রুতি আছে সুলতানী আমলে নির্মিত এই মসজিদ কেন্দ্রীক একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার ছিল। মসজিদের পাশেই বড় আকারের একটি দিঘি, নাম পিঠেগড়া পুকুর।
পাঠাগার মসজিদের পশ্চিম দিকের সড়কে দুটি বাঁক ঘুরলেই বিশাল দিঘি, নাম পীর পুকুর। এ পুকুরের পশ্চিম পাড়ে আছে বড় আকৃতির একটি মসজিদ।
১৯৯৪ সালে খনন করে মাটির নীচ থেকে বের করা হয়েছে স্থাপনাটিকে। এই মসজিদে ছাদ নেই, শুধু দেয়াল আছে। মসজিদটি লাল ইটের তৈরি।
পীরপুকুর মসজিদের পাশের তাহেরপুর সড়ক ধরে সামান্য পশ্চিম দিকে হাতের বাঁয়ে আরেকটি প্রাচীন মসজিদের দেখা মেলে। এর নাম গোড়ার মসজিদ।
এ মসজিদটি চার গম্বুজ বিশিষ্ট। মসজিদের মিহরাব ও দেয়ালে পোড়ামাটির ফুল, লতাপাতা ফলের নকশাসহ নানান কারুকার্য মণ্ডিত। বাইরের দেয়ালও লাল ইটে মোড়ানো। ২১ ফুট লম্বা ও ১৮ ফুট চওড়া এই মসজিদ খনন করা হয় ১৯৯৪ সালে। ছয় গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব আছে।
এর দেয়ালগুলো প্রায় পাঁচ ফুট চওড়া। মাঝখানে আছে লম্বা দুটি কালো পাথর। জনশ্রুতি আছে, বারোবাজারে এক অত্যাচারী রাজা ছিল। প্রজাদের বলি দিয়ে মসজিদের সামনের দিঘির মধ্যে ফেলে দিত সে। এ কারণেই এর নাম হয় গলাকাটা।
মসজিদটি খনন করা হয় ১৯৯৩ সালে। খননের সময় এখানে একটি ইট পাওয়া যায়, তাতে আরবি অক্ষরে লেখা ছিল, ‘শাহ সুলতান মাহমুদ ইবনে হুসাইন, আটশো হিজরী’। জনশ্রুতি আছে মসজিদের পাশে জোড়া কুড়েঘর ছিল বলেই এর নাম জোড় বাংলা মসজিদ।
বড় একটি পুকুরের দক্ষিণ পাশে সাতগাছিয়া আদিনা মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। এটির শুধু দেয়াল আর নীচের অংশই অবশিষ্ট আছে। জানা যায়, সর্বপ্রথম গ্রামের লোকজনই মাটিচাপা পড়ে থাকা এই মসজিদ উদ্ধার করে। আকারে এ এলাকার সবচেয়ে বড় মসজিদ এটি।
প্রায় ৭৭ ফুট লম্বা ও ৫৫ ফুট চওড়া মসজিদের ভেতরে আছে ৪৮টি পিলার। পশ্চিম দেয়ালে লতা-পাতার নকশা সমৃদ্ধ তিনটি মিহরাব আছে। বারোবাজারের হাসিলবাগ গ্রামে বড় দিঘির পশ্চিম পাশে রয়েছে এক গম্বুজ বিশিষ্ট নুনগোলা মসজিদ। বর্গাকৃতির এ মসজিদে তিনটি অর্ধ বৃত্তকার মিহরাব আছে।
এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ এটি। স্থানীয়রা একে লবণগোলা মসজিদও বলে থাকেন। তবে এ নামকরণের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
নুনগোলা মসজিদের সামান্য পশ্চিমে এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ এটি। হাসিলবাগ মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদের আরেক নাম শুকুর মল্লিক মসজিদ। পোড়া মাটির তৈরি মসজিদটি এ অঞ্চলের সবচেয়ে ছোট এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ।
বারোবাজারে আরও যেসব প্রত্নস্থান রয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঘোপের ঢিবি কবরস্থান, নামাজগাহ কবরস্থান, জাহাজঘাটা, মনোহর মসজিদ, দমদম প্রত্নস্থান, বাদেডিহি কবরস্থান, খড়ের দিঘি কবরস্থান ইত্যাদি। বারোবাজোরের মসজিদগুলোর সঙ্গে বাগেরহাটের কয়েকটি মসজিদের স্থাপত্য রীতিতে বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যায়।