বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর শিক্ষাবোর্ডের প্রায় সাত কোটি টাকার চেক জালিয়াতির মামলায় কর্মচারী ও ঠিকাদারসহ ১১ জনের নামে চার্জশিট দিয়েছে দুদক। যশোরের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে চার্জশিট দাখিল করার বিষয়টি বুধবার নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোরের উপপরিচালক মো. আল-আমিন।
অভিযুক্তরা হলেন, যশোর শিক্ষাবোর্ডের বরখাস্তকৃত হিসাব সহকারী আবদুস সালাম, ভেনাস প্রিন্টিং প্রেসের প্রোপ্রাইটার শেখ শরিফুল ইসলাম, শাহীলাল স্টোরের প্রোপ্রাইটর ও যশোর সদর উপজেলার হাইকোর্ট মোড় জামরুলতলা এলাকার আশরাফুল আলম, নূর এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটার ও যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া চেকপোস্ট এলাকার গাজী নূর ইসলাম, যশোর শহরের লোহাপট্টির প্রত্যাশা প্রিন্টিং প্রেসের প্রোপ্রাইটার ও সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা দুধলি গ্রামের স্ত্রী রুপালী খাতুন, যশোরের ই/১৪১ উপশহর এলাকার সহিদুল ইসলাম, সোনেক্স ইন্টারন্যাশনালের প্রোপ্রাইটার ও যশোর উপশহর ই-ব্লক এলাকার রকিব মোস্তফা, যশোর শিক্ষাবোর্ডের সহকারী মূল্যায়ন অফিসার ও যশোর শহরের ঘোপ এলাকার আবুল কালাম আজাদ, যশোর শিক্ষাবোর্ডের নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ও যশোর সদর উপজেলার মধুগ্রাম এলাকার জুলফিকার আলী, যশোর শিক্ষাবোর্ডের নিম্নমান সহকারী (চেক ডেসপাসকারী) ও যশোর সদর উপজেলার নওদাগ্রামের মিজানুর রহমান এবং যশোর শিক্ষাবোর্ডের সাধারণ কর্মচারী (চেক ডেসপাসকারী) ও যশোর সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের কবীর হোসেন। চেক জালিয়াতিতে সম্পৃক্ততা না থাকায় এজাহারনামীয় ১নং আসামি যশোর শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোল্লা আমীর হোসেন, সাবেক সচিব প্রফেসর এএমএইচ আলী আর রেজাকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে চার্জমিটে। এর আগে ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন ৩৮টি চেক জালিয়াতির অভিযোগে মামলা দায়ের করে দুদক।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, যশোর মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রায় ২৫ টি হিসাব সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, বিআইএসই শাখা, যশোরে পরিচালিত হয়। এর মধ্যে একটি হিসাবের মাধ্যমে ব্যয় নির্বাহ করা হয়। ওই হিসাবের সিগনেটরি বোর্ডের সচিব ও চেয়ারম্যান। ব্যাংক শাখাটি বোর্ডের ক্যাম্পাসে অবস্থিত।
২০১৭-১৮ অর্থবছর হতে ২০২১-২০২২ অর্থবছর পর্যন্ত ওই হিসাব নম্বরে ৩৮ টি চেক জালিয়াতি করে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা প্রদানপূর্বক ক্লিয়ারিংয়ের যশোর শিক্ষাবোর্ডের ২৩ লাখ ৫৪ হাজার ৭০৬ টাকার স্থলে সর্বমোট ছয় কোটি সাতানব্বই লাখ পঁচাশি হাজার তিনশত সাতানব্বই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
আসামি শেখ শরিফুল ইসলাম তার গ্রহণ করা ২২ টি চেক আসামি আব্দুস সালামের সাথে যোগসাজস করে চেকের পে টু অংশে, কথায় ও অংকে লেখা টাকার পরিমাণের তথ্য ঘষামাজার মাধ্যমে অবমোচন করে টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রিন্ট করে বসান। শেখ শরিফুল ওই চেকগুলো ক্লিয়ারিংয়ের জন্য ব্যাংকে জমা প্রদানের জন্য নিজে মিম প্রিন্টিং প্রেস, মেসার্স খাজা প্রিন্টিং প্রেস, নিহার প্রিন্টিং প্রেস, সবুজ প্রিন্টিং প্রেস, শরিফ প্রিন্টিং এন্ডং প্যাকেজিং ও সানিয়া ইলেক্ট্রনিক্স এর স্বত্ত্বাধিকারী সেজে রামনগর ইউনিয়ন পরিষদ হতে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে যথাক্রমে অগ্রণী ব্যাংক, দড়াটানা শাখা; মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, যশোর শাখা; প্রিমিয়ার ব্যাংক, যশোর শাখা; ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, যশোর শাখায় উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে হিসাব খুলে সেখানে জালিয়াতকৃত চেকগুলো জমা করতেন এবং নিজে টাকা উত্তোলন করেন। এছাড়া নুর এন্টারপ্রাইজ ও প্রত্যাশা প্রিন্টিং প্রেসের নামে প্রাপ্ত চেকগুলো আব্দুস সালামের সাথে যোগসাজসে জালিয়াতির পর তিনি নিজে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামীয় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, যশোর শাখায় পরিচালিত হিসাবে জমা করে ক্লিয়ারিং এর মাধ্যমে উক্ত প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী গাজী নূর ইসলাম ও রুপালী খাতুনের সহায়তায় টাকা নগদে ও ট্রান্সফারের মাধ্যমে উত্তোলন করেন। এছাড়া আব্দুস সালামের সাথে যোগসাজস করে দেশ প্রিন্টার্স নামে চেক একটি, অর্পানেট এর নামে একটি ও আবুল কালাম আজাদের নামে একটি চেক অর্থাৎ মোট তিনটি চেক ঘষামাজার মাধ্যমে টেম্পারিং করে আসামি শেখ শরিফুল ইসলাম তার নামীয় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, যশোর শাখায় পরিচালিত ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং নামে হিসাবে এ জমা প্রদান করে টাকা উত্তোলনপূর্বক আত্মসাত করেন। আসামি শেখ শরিফুল ইসলাম কর্তৃক রিসিভকৃত ২২টি চেক টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে আসামি মো. আব্দুস সালাম, আসামি শেখ শরিফুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, গাজী নূর ইসলাম, রুপালী খাতুন, রকিব মোস্তফা একে অপরের যোগসাজসে ও ডেসপাস রাইডার জুলফিকার আলী, মিজানুর রহমান ও কবির হোসেন এর সহায়তায় সর্বমোট দুই কোটি ৭৬ লাখ দুই হাজার ২৭৮ টাকা নগদে উত্তোলন ও ট্রান্সফারের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন।
অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ৩৮ টি চেক ডেসপাস হওয়ার পর টেম্পারিং হয়েছে এবং টেম্পারড চেক ক্লিয়ারিংয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে উপস্থাপিত হয়েছে।
এজাহারনামীয় তিন নম্বর আসামি আব্দুস সালাম ও চার নম্বর আসামি শেখ শরিফুল ইসলাম ওই চেক টেম্পারিংয়ের জন্য দায়ী এবং তারা আলোচ্য মামলার মূল অপরাধী।
তারা দুইজন একে অপরের যোগসাজসে অপর নয় জন আসামির প্রত্যক্ষ সহায়তায় বর্ণিত জালিয়াতির মাধ্যমে সর্বমোট ছয় কোটি চুয়াত্তর লক্ষ তেতাল্লিশ হাজার তিন টাকা আত্মসাত করে নিজ/স্ত্রী/আত্মীয়-স্বজনের নামে সম্পদ গড়েছেন।
যার মধ্যে কিছু সম্পদ তদন্তকালে বিজ্ঞ আদালতের আদেশের মাধ্যমে অবরুদ্ধ ও ক্রোক করা হয়েছে। অভিযুক্ত ১১ আসামি পারস্পারিক সহায়তায় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধমূলক অসদচারণ ও বিশ্বাসভঙ্গ করে যশোর শিক্ষাবোর্ড হতে বিভিন্ন বিল বাবদ ইস্যুকৃত ৩৮টি চেক রিসিভ করার পর টেম্পারিং/ঘষামাজার মাধ্যমে চেকের মূল্যমানসহ অন্যান্য তথ্য পরিবর্তনপূর্বক জালিয়াতি সাধন করে ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে মূল টাকার অতিরিক্ত অপরাধলব্ধ ছয় কোটি চুয়াত্তর লাখ তেতাল্লিশ হাজার তিন টাকা নগদে উত্তোলনপূর্বক আত্মসাত করে বা বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করে উৎস গোপনের মাধ্যমে আত্মসাত করে দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। যা সাক্ষ্য-সাবুদে প্রমাণিত। বিধায় দুর্নীতি দমন কমিশনের মঞ্জুরীর ভিত্তিতে উল্লিখিত আসামিগণের বিরুদ্ধে বর্ণিত ধারায় বিজ্ঞ আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়।